ডলার সংকট

দেশে ১ বছরে গম আমদানি কমেছে ৩৩ শতাংশ

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ১৪ দশমিক ১৫ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৫৮ লাখ টন।
গম আমদানি কমেছে
ছবি: ফাইল ফটো

দেশে বেসরকারিভাবে গম আমদানি গত অর্থবছরের তুলনায় ধারাবাহিকভাবে কমে গেছে। ব্যাংকে ডলার ঘাটতির কারণে আমদানিকারকরা ঋণপত্র খুলতে সমস্যায় পড়ায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারিভাবে ১৪ দশমিক ১৫ লাখ টন গম আমদানি হয়েছে। এক বছর আগের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ২৫ দশমিক ৫৮ লাখ টন।

অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে গম আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৮ শতাংশ বেশি।

সরকারি খাতের আমদানি বাড়লেও গমের সামগ্রিক আমদানি কমেছে ৩৩ শতাংশ। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে আটা-ময়দা সরবরাহের ওপর প্রভাব পড়েছে।

গম আমদানিকারক নাবিল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমদানি কমে যাওয়ার মূল কারণ ডলারের ঘাটতির জন্য এলসি খোলায় দেরি। আবার এলসি খুলতে পারলেও বিদেশি ব্যাংক থেকে কনফার্মেশন পেতে দেরি হচ্ছে।'

'এসব কারণে গম আমদানি কমে গেছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এছাড়া, সবকিছু ঠিক আছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গমের সরবরাহ ঠিক আছে এবং দামও কমেছে।'

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, ২০২২ সালের এপ্রিল-জুনে প্রতি টন গমের দাম ৪৯২ ডলার হয়েছিল। চলতি মার্চে তা কমে ৩৬৯ ডলার হয়েছে।

বার্ষিক ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদার বিপরীতে দেশে উৎপাদন হয় মাত্র ১১ লাখ টন। তাই, অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৮৫ শতাংশ গম আমদানির ওপর নির্ভরশীল।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পর গম সরবরাহ কমে যাওয়ায় এবং ভারতসহ কয়েকটি দেশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির প্রভাবে ২০২২ সালের এপ্রিলের পর দেশের বাজারেও আটা-ময়দার দাম বাড়তে শুরু করে।

এক পর্যায়ে গত বছরের ডিসেম্বরে প্রতি কেজি আটার দাম বেড়ে ৬২ টাকা ২৬ পয়সায় পৌঁছায়, যা জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের বাজারে রেকর্ড।

জাতিসংঘ ও তুরস্কের মধ্যস্থতায় শস্য চুক্তির পর ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণসাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল শুরু হলে বিশ্ববাজারে গম সরবরাহ বেড়ে যায়। এতে ২০২৩ সালের প্রথম ৩ মাসে আটা-ময়দার দাম কিছুটা স্থিতিশীল আছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার তসলিম শাহরিয়ার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই চুক্তির পর দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে পারছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় এবং রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে জুলাই-নভেম্বরে গম আমদানিতে অনেক সমস্যা হয়েছে। এলসি সমস্যাও আমদানিতে প্রভাব ফেলেছে।'

'তবে ২০২৩ সালের প্রথম ৩ মাসে গম আমদানি বেড়েছে,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ ট্রেডিং কর্পোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ মাসে আটার দাম কিছুটা কমেছে। গতকাল ঢাকার খুচরা বাজারে প্রতি কেজি খোলা আটার দাম ছিল ৫৫-৫৮ টাকা, যা ১ মাস আগের তুলনায় ৪ শতাংশ কম।

যদিও আটার দাম সার্বিকভাবে এক বছরের আগের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেড়েছে।

নাবিল গ্রুপের এমডি আমিনুল ইসলাম বলেন, 'আমদানি কম হওয়ায় অভ্যন্তরীণ বাজারে সরবরাহের সংকট আছে। সব কোম্পানি ঠিকভাবে আমদানি করতে পারলে দাম ১০-১৫ শতাংশ কমে যাবে।'

Comments