১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন গাড়ি বিক্রি

ডলার ঘাটতি, মূল্যস্ফীতি, বাংলাদেশের ‍মূল্যস্ফীতি, গাড়ি বিক্রি,
স্টার ফাইল ফটো

গত বছর বাংলাদেশে ব্যক্তিগত গাড়ির বিক্রি ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। এজন্য সংশ্লিষ্টরা মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন, উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও চলমান অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে দায়ী করেছেন।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে ১০ হাজার ৭৮৪টি ব্যক্তিগত গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে, যা ২০২২ সালে ছিল ১৬ হাজার ৬৯৫টি। এই পরিসংখ্যানে ৩৫ শতাংশ গাড়ি বিক্রি কমার তথ্য উঠে এসেছে।

শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটিএর নিবন্ধনের পরিসংখ্যান থেকে গাড়ি বিক্রির সঠিক তথ্য পাওয়া যায়, কারণ নিবন্ধন ছাড়া কোনো গাড়ি রাস্তায় নামার সুযোগ নেই।

জাপানি রিকন্ডিশন্ড গাড়ির আমদানিকারক ও খুচরা বিক্রেতা মোটরস বে লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ খান বিপু বলেন, মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধিতে গাড়ির দাম বৃদ্ধি ও অস্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে মূলত গাড়ির বিক্রি কমেছে।

তার মতে, গত দেড় বছরে মার্কিন ডলারের দাম প্রায় ২৬ শতাংশ বেড়েছে এবং তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমদানি শুল্কও বেড়েছে। ফলে, গত বছর গাড়ির দাম অন্তত ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, এতে এসব গাড়ি মধ্যবিত্ত গ্রাহকদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।

তিনি জানান, সাধারণত দেশের বাজারে কম দামি গাড়ির আধিপত্য থাকে, কারণ মানুষ সস্তায় রিকন্ডিশন্ড জাপানি গাড়ি কিনতে বেশি আগ্রহ দেখায়।

তবে, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও ক্রমাগত উচ্চ মূল্যস্ফীতি মধ্যম আয়ের মানুষের জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারেনি, যা তাদের গাড়ির কেনার মতো ব্যয় থেকে দূরে রেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে যারা গাড়ি কিনতে চেয়েছিলেন, তাদের মনোভাবও বদলেছে।

তিনি বলেন, 'বিক্রি বাড়তে আরও সময় লাগবে।'

এছাড়া আমদানিকারকরা চাহিদা অনুযায়ী গাড়ি আনতে পারছেন না, কারণ ঋণপত্র (এলসি) খুলতে শতভাগ মার্জিন দিতে হয় এবং ব্যাংকগুলোও এলসি খোলার বিষয়ে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি ও

অটো মিউজিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও গাড়ির বিক্রি কমে গেছে।

তার মতে, ধর্মঘট ও অবরোধসহ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত ছয় মাসে খুব কম মানুষই গাড়ি কিনেছেন।

তিনি বলেন, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে তিনি প্রতি মাসে অন্তত ৭০টি যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রি করতেন। কিন্তু, গত বছর প্রতি মাসে গড়ে ২০টি গাড়ি বিক্রি করতে পেরেছেন

গাড়ি ব্যবসায় গত ৩৪ বছরে এমন কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হননি বলে জানান তিনি।

তবে বাজার নিম্নমুখী হওয়া সত্ত্বেও কর্মী ছাঁটাই করেননি, কারণ তিনি আশাবাদী- এ বছরের প্রথম প্রান্তিকের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

ডন আরও জানায়, মার্কিন ডলারের কারণে এলসি খুলতে সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, এজন্য গাড়ি আমদানি প্রায় ৬৫ শতাংশ কমে গেছে।

নিপ্পন অটো ট্রেডিংয়ের কর্ণধার ও বারভিডার সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান চৌধুরী খসরু বলেন, গাড়ির দাম অনেক বেড়েছে।

তিনি ব্যাখ্যা করেন, যখন মার্কিন ডলারের দাম বাড়ে, তখন আমদানি শুল্ক বেড়ে যায়, কারণ এটি মার্কিন ডলারে গাড়ির দামের বিপরীতে হিসাব করা হয়।

গাড়ি বিক্রি কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি আরও বলেন, মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছেন, তাই তারা গাড়ি কিনতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

তার মতে, যাত্রীবাহী গাড়ি বিক্রির পরিসংখ্যানে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রতিফলিত হয়।

অর্থনীতি স্থিতিশীল হলে গাড়ি বিক্রি অবশ্যই বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।

তবে তিনি অভিযোগ করেন, ১১১ টাকা দরে এলসি খুললেও প্রতি মার্কিন ডলারে ১২০ টাকা দরে এলসি পরিশোধ করতে হয়েছে।

মার্কিন ডলারের দর নিয়ে ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দর কষাকষির সুযোগ না থাকায়, ব্যাংকগুলো পরিস্থিতিকে পুঁজি করে এলসি খুলতে অতিরিক্ত মুনাফা করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

হক'স বে অটোমোবাইলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল হক গাড়ি বিক্রি কমার জন্য চলমান অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকে দায়ী করেন।

তার মতে, মানুষ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করছেন, তাই গাড়ির মতো বিলাসিতায় ব্যয় করার মতো পরিস্থিতিতে তারা নেই।

Comments

The Daily Star  | English
Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

"The chief adviser said he wants to hold the election between December and June"

1h ago