ধনীদের স্বস্তি, করের বোঝা নিম্ন আয়ের মানুষের ওপর

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রস্তাবিত কর ব্যবস্থা অনুযায়ী আগামী অর্থবছর থেকে ধনীদের ৪ কোটি টাকা পর্যন্ত মোট সম্পদের ওপর কোনো সারচার্জ দিতে হবে না।

২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেটে বর্তমান ৩ কোটি টাকার সারচার্জমুক্ত সীমা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তার আগে এটি ছিল ২ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া বিদায়ী অর্থবছরে কর কর্তৃপক্ষ বিনিয়োগের ওপর ট্যাক্স ক্রেডিট বিধিমালায় পরিবর্তন এনেছে। যা উচ্চ আয়ের ব্যক্তিদের উপকৃত করেছে আর নিম্ন আয়ের করদাতাদের ওপর আরও বেশি বোঝা চাপিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে বিদায়ী অর্থবছরে নিম্ন আয়ের মানুষ কোনো স্বস্তি পায়নি।

আগামী অর্থবছরে করমুক্ত বার্ষিক আয়ের সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয়ের মধ্যে এটিই করদাতাদের কিছুটা স্বস্তি দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট অনুযায়ী, নিবন্ধিত করদাতাদের সরকারি ৩৮টি সেবা পেতে ন্যূনতম আয়কর হলেও দিতে হবে। আয় করযোগ্য না হলেও, অর্থাৎ বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম আয় হলেও আয়, ব্যয় এবং সম্পদের বিবরণী দাখিল করার সময় ন্যূনতম আয়কর ২ হাজার টাকা দিতে হবে তাদের।

এর অর্থ হলো পেনশনভোগী এবং গৃহিনীসহ জনসংখ্যার একটি বড় অংশের আয় বছরে সাড়ে ৩ লাখ টাকার কম হলেও, ন্যূনতম করের আওতায় আসছেন তারা।

এই প্রস্তাবটি এমন সময়ে পেশ করা হলো যখন দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ।

চার্টার্ড অ্যাকাউনটেন্ট স্নেহাশিষ বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে ৩ লাখ টাকা করা এবং ন্যূনতম কর আরোপ পরস্পরবিরোধী।'

এনবিআরের নিয়ম অনুযায়ী, আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ৫ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থ ঋণ নিতে, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করতে, ৫ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে ও ৫ লাখ টাকার বেশি পরিমাণ অর্থের সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে আয়-ব্যয়ের বিবরণী জমা দিতে হবে।

১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যালেন্সসহ যেকোনো ধরনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং সেই অ্যাকাউন্ট ব্যবহারকারীকেও ন্যূনতম কর দিতে হবে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ফেলো মুনতাসির কামালের মতে, ন্যূনতম কর নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য বোঝা হবে এবং এটি করমুক্ত আয়ের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

'আয়-ব্যয় বিবরণী জমা দেওয়ার সময় এমনিতেই টাকা খরচ করতে হয়। কারণ এ ক্ষেত্রে জটিল কাগজপত্র সামলাতে অন্য কারো সাহায্য নিতে হয়।'

তবে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে মুনতাসির কামাল বলেছেন, 'এটি নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ক্রমবর্ধমান দামের মধ্যে নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষের জন্য কিছুটা স্বস্তির কারণ হবে।'

সরকারের বরং উচিত যাদের আয় বেশি তাদের ওপর কর বাড়ানো। 'এটি অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে এই হার ২০২১ সালে ৩০ শতাংশ থেকে ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছিল... এটির কারণে কর নায্যতার ওপর প্রভাব পড়বে।'

তিনি আরও মনে করেন যে প্রস্তাবিত সারচার্জমুক্ত সম্পদের কারণে করদাতার সংখ্যা কমতে পারে।

'সারচার্জ সম্পদের ক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে হিসাব করা হয়, বাজারমূল্যের ওপর ভিত্তি করে নয়। আর এতে করে সারচার্জ আদায় বাজারমূল্যের চেয়ে কম হয়। এটি বোঝায় যে সম্পদের মালিকরা ইতোমধ্যে তাদের যতটুকু ট্যাক্স দেওয়া উচিত ছিল তার থেকে কম ট্যাক্স দিয়েছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে, ধনীদের ওপর কর কমানো পরষ্পরবিরোধী বলে মনে হচ্ছে।

চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও অনলাইন ট্যাক্স ট্রেনিং সাইট ট্যাক্সপার্টের প্রধান পরামর্শদাতা জসিম উদ্দিন রাসেল জানান, প্রস্তাবিত ট্যাক্সের পরিবর্তনগুলো মূলত নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের লোকেদের ওপর আরোপ করা হয়েছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

"The chief adviser said he wants to hold the election between December and June"

2h ago