চিনির দাম কেজিতে বেড়েছে ১০ টাকা

চিনির দাম
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সরবরাহ কমে যাওয়া ও বিশ্ববাজারের সঙ্গে দাম সমন্বয়ের জন্য আমদানিকারক ও মিল মালিকদের আহ্বানের পর ১ সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানী ঢাকা ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারে চিনির দাম বেড়েছে।

খুচরা বিক্রেতা ও পাইকারি বিক্রেতারা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধি ও সরবরাহ কমে যাওয়ায় মিল মালিক ও ডিলাররা মিলে চিনির দাম বাড়িয়েছেন।

সরকার প্যাকেটজাত চিনির সর্বোচ্চ দাম ১২৫ টাকা ও প্যাকেট ছাড়া চিনির সর্বোচ্চ দাম ১২০ টাকা নির্ধারণ করলেও বর্তমানে প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকায়।

রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুসারে, গত এক সপ্তাহ আগেও চিনি বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে।

রাজধানীর মৌলভীবাজারের পাইকারি বিক্রেতা আবুল হাশেম ডেইলি স্টারকে জানান, গত মঙ্গলবার প্রতি মন (৩৭ দশমিক ৩২ কেজি) চিনি বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৭৩০ টাকায়।

গতকাল বুধবার তা কিছুটা কমে ৪ হাজার ৭০০ টাকায় দাঁড়ায়। এক সপ্তাহ আগে এটি ছিল ৪ হাজার ৬৫০ টাকা।

গত সোমবার মিল মালিকরা প্যাকেটজাত চিনির খুচরা মূল্য কেজিতে ২০ শতাংশ বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, ঈদুল আজহার পর দাম সমন্বয়ের জন্য বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের সঙ্গে মিল মালিকদের বৈঠক হবে।

বন্দরনগরীর খাতুনগঞ্জ বাজারে পাইকারি বিক্রেতা আব্দুর রাজ্জাক জানান, এক সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম মণপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২২০ টাকা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, এক সপ্তাহ আগে ৪ হাজার ৬০০ টাকায় প্রতি মন চিনি বিক্রি হলেও এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৮০০ থেকে ৪ হাজার ৮২০ টাকায়।

বন্দরনগরীর খুচরা বিক্রেতা রাকিব হোসেন এখন ১৪৮ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে চিনি বিক্রি করছেন এবং তার মতো ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা চিনির পর্যাপ্ত সরবরাহ পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন।

এদিকে বিশ্ববাজারে চিনির দাম বেড়েই চলেছে।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত মার্চে চিনির দাম কেজি প্রতি ছিল গড়ে ৪৫ সেন্ট। এপ্রিলে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৩ সেন্টে। মে মাসে তা বেড়ে হয় ৫৬ সেন্ট। অর্থাৎ গত ৩ মাসে চিনির দাম বেড়েছে ২৫ শতাংশ।

গত সপ্তাহে সরকারি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ভারত ২০২৪ সালের প্রথম ৬ মাস চিনি রপ্তানির অনুমতি না দেওয়ার কথা ভাবছে। কারণ দেশটির সরকারের আশঙ্কা, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টি কম হতে ও আখের উত্পাদন হ্রাস পেতে পারে।

বিশ্বে দ্বিতীয় শীর্ষ চিনি রপ্তানিকারক দেশ ভারত সাধারণত ১ অক্টোবর নতুন বিপণন বছর শুরুর আগে কলগুলো কী পরিমাণ চিনি রপ্তানি করতে পারবে তা নির্ধারণ করে।

ভারত থেকে সরবরাহে দেরি হলে বিশ্বব্যাপী চিনির দাম বেড়ে যেতে পারে। ইতোমধ্যে এর দাম ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।

ভারতে চলতি চিনি মৌসুমের শুরু থেকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতি বছরে চিনির উৎপাদন ৩ কোটি ৬০ লাখ টন নির্ধারণ করার পর তা কমিয়ে ৩ কোটি ২৮ লাখ টন করা হয়েছে।

কম উৎপাদনের কারণে ভারত চলতি মৌসুমে ৬ দশমিক ১ মিলিয়ন টন চিনি রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। কোটা ফুরিয়ে যাওয়ায় ভারত বর্তমানে চিনি রপ্তানি করছে না বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়।

বাংলাদেশে প্রতি বছর ২০ থেকে ২২ লাখ টন চিনি প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে স্থানীয় কলগুলো ৩০ হাজার থেকে ৩৫ হাজার টন চিনি উৎপাদন করে। বাকি চিনি দেশের ৫টি চিনিকলের সহায়তায় আমদানি করতে হয়।

ব্রাজিল, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও মালয়েশিয়া থেকে বাংলাদেশ অপরিশোধিত চিনি আমদানি করে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক শুল্ক কমানোর সুবিধা প্রত্যাহারের ফলে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তা চিনির দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছে বলে জানিয়েছেন এই শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

গত ফেব্রুয়ারিতে এনবিআর ৩০ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি থেকে ৫ শতাংশ কমিয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগে এটি ছিল টনপ্রতি যথাক্রমে ৩ হাজার ও ৬ হাজার টাকা ছিল।

এই সুবিধাগুলো ৩১ মে পর্যন্ত কার্যকর ছিল। এরপর থেকে আমদানিকারকদের পুরো কর দিতে হচ্ছে।

Comments

The Daily Star  | English
Barishal University protest

As a nation, we are not focused on education

We have had so many reform commissions, but none on education, reflecting our own sense of priority.

8h ago