যে কারণে দুর্বল হচ্ছে রিঙ্গিত

রিঙ্গিতের ক্রমাগত দরপতন কারো অজানা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এর সমাধানে কোনো দিক-নির্দেশনা দিতে পারেনি দেশটির সরকার।
মালয়েশিয়া
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার। ছবি: রয়টার্স

রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দুর্বল হচ্ছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমৃদ্ধ দেশ মালয়েশিয়ার মুদ্রা রিঙ্গিত। এ ছাড়া, অন্যান্য কারণ হিসেবে দেশটির রপ্তানি হ্রাস, চীনের অর্থনীতিতে মন্দা, ডলারের শক্ত অবস্থান ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে বিদেশি মুদ্রার চাহিদার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার টোকিওভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়া এ তথ্য জানিয়ে বলেছে, চলতি বছরে বেশিরভাগ সময় দুর্বল থাকা রিঙ্গিতের ভাগ্য যেন কালো মেঘে ঢাকা।

বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে এতে আরও বলা হয়, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে ডলারের বিপরীতে এর দাম ছিল ৪ দশমিক ২৪ রিঙ্গিত। গতকাল তা হয়েছে ৪ দশমিক ৬৭।

সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিত দাম হারিয়েছে প্রায় ৯ দশমিক ২ শতাংশ।

প্রায় ২৫ বছর আগে এশিয়ায় অর্থনৈতিক সংকটের সময় ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিত ছিল ৪ দশমিক ৮৮।

রিঙ্গিতের ক্রমাগত দরপতন কারো অজানা নয় উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করলেও এর সমাধানে কোনো দিক-নির্দেশনা দিতে পারেনি দেশটির সরকার।

গত সপ্তাহে মালয়েশিয়ার উপ-অর্থমন্ত্রী আহমাদ মাসলান দেশটির পার্লামেন্টে বলেছেন, ডলারের বিপরীতে রিঙ্গিতকে শক্তিশালী করতে সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই। এর জন্য প্রয়োজন স্বাধীন মুদ্রানীতি।

মালয়েশিয়ার ৬ প্রদেশে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনের আগে রিঙ্গিত দুর্বল হওয়ার প্রসঙ্গটি সামনে এসেছে। এই নির্বাচনকে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের জনপ্রিয়তার পরীক্ষা হিসেবে মনে করছেন অনেকে। আগামী আগস্টে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে কি না এ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

গবেষণা সংস্থা আমির রিসার্চের প্রেসিডেন্ট রইস হুসাইন সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়াকে বলেন, 'মালয়েশিয়ার বর্তমান জোট সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে, এ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকায় এর প্রভাব পড়েছে বিনিয়োগের ওপর। তাই রিঙ্গিত দুর্বল হয়েছে।'

প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ও সানওয়ে ইউনিভার্সিটির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ইয়াহ কিম লেং মনে করেন, মালয়েশিয়ার প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হলেও এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলেও হঠাৎ রপ্তানি কমে যাওয়ায় রিঙ্গিত দুর্বল হয়েছে।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২২ সালের এপ্রিলের তুলনায় গত এপ্রিলে মালয়েশিয়ার রপ্তানি কমেছে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। দেশটির মূল রপ্তানি পণ্যের মধ্যে আছে ইলেকট্রনিকস ও পেট্রোলিয়াম পণ্য এবং পামঅয়েল।

কুয়ালালামপুরভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর মার্কেট এডুকেশনের প্রধান নির্বাহী কারমেলো ফেরলিতো সংবাদমাধ্যমটিকে বলেন, 'চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক মালয়েশিয়ার জন্য যেন বোঝা।'

কুয়ালালামপুরভিত্তিক অপর গবেষণা সংস্থা ডিএআরইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পঙ্কজ কুমারের মতে, বিদেশি মুদ্রার ব্যাপক চাহিদা রিঙ্গিতের দরপতনের অন্যতম কারণ।

তিনি বলেন, 'রিঙ্গিত দুর্বল হলে ধনী ব্যক্তি বা ব্যবসায়ীরা তাদের সম্পদ রক্ষা করতে বিকল্প পথ খুঁজবেন। তখন বিদেশে অর্থ চলে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।'

'সরকারের উচিত বিনিয়োগবান্ধব নীতি নির্ধারণ করে রিঙ্গিতকে শক্তিশালী করা,' যোগ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে রিঙ্গিত যতদিন দুর্বল থাকবে ততদিন মালয়েশিয়ার অর্থনীতির জন্য বিপদ বাড়তে থাকবে।'

Comments