সাভার ট্যানারি

৫৬৫ কোটি টাকার সিইটিপি, আবার ৮০০ কোটির প্রকল্প

সাভার ট্যানারি
সাভার ট্যানারির সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি)। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

সাভার ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে (এসটিআইই) বহুল আলোচিত সেন্ট্রাল ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (সিইটিপি) নির্মাণে ৫৬৫ কোটি টাকা খরচ ও প্রায় এক দশক অপেক্ষা করেও এর সুফল পুরোপুরি পাওয়ায় এ নিয়ে নতুন প্রকল্প গ্রহণের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)।

২০২১ সালের জুলাইয়ে বিদেশি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্যানারি ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট বর্জ্য শোধনাগার কোম্পানির (ডিটিআইইডব্লিউটিপিসি) কাছে অসম্পূর্ণ সিইটিপি হস্তান্তর করায় এখন তা সংস্কার বা ভেঙে নতুন করে তৈরি করা প্রয়োজন।

সিইটিপির নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৩ সালে। এর বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণ শেষ না করেই এটি ডিটিআইইডব্লিউটিপিসির কাছে হস্তান্তর করেছিল।

বিসিকের চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, সিইটিপির দক্ষিণ পাশে ২০০ একর জমিতে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য শেড স্থাপনসহ প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৫০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকা খরচ হবে।

সিইটিপি পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় নির্মাণকাজে যে অসঙ্গতি আছে তা বিসিক তদন্ত করবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে আরও তদন্ত বিব্রতকর।'

ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (আইএলইটি) এক সেমিনারে চামড়ার ট্যানিং প্রক্রিয়া এবং কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য গবেষণা ও উন্নয়নের ফল নিয়ে আলোচনায় বিসিক চেয়ারম্যান এমন মন্তব্য করেন।

গত বৃহস্পতিবার আইএলইটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও এশিয়া ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে ঢাবির নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে ২ বছরের মধ্যে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্র নির্মাণের পাশাপাশি সিইটিপি কার্যকর হবে বলে আশা করছেন বিসিক প্রধান।

সম্পূর্ণ কার্যকরী সিইটিপি ছাড়া স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ পায় না। চামড়াখাতে আন্তর্জাতিক খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোকে আকৃষ্ট করতে এই সনদ প্রয়োজন।

সনদ না পাওয়া গেলে দেশ মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা থেকে বঞ্চিত হতে থাকবে। কারণ, স্থানীয় ট্যানারিগুলো কমপ্লায়েন্সের অভাবে প্রক্রিয়াজাত চামড়ার জন্য বেশি দাম পায় না।

এ ছাড়াও, দেশে উৎপাদিত চামড়া ব্যবহার করে চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি করতে পারছে না প্রতিষ্ঠানগুলো।

এটি বাংলাদেশের জন্য দুর্ভাগ্যজনক। কেননা, কাঁচামাল পুরোপুরি দেশে পাওয়া যায় বলে এ থেকে রপ্তানিকারকরা প্রায় শতভাগ মূল্য সংযোজনের সুযোগ পান।

একটি পরিপূর্ণ সিইটিপির অভাবের ট্যানারির চারপাশের পরিবেশও দূষিত হচ্ছে।

আইএলইটির পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, যথাযথ নকশা অনুসরণ না করে নির্মাণ করায় বিদ্যমান সিইটিপি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

এই সিইটিপি তৈরিতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে তা এখন অধিকাংশ দেশে অনুমোদিত নয়।

আইএলইটির এক গবেষণাপত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি আরও বলেন, গবেষকদের উদ্ভাবিত এনজাইম ব্যবহার করে কাঁচা চামড়া ধোয়া হলে রাসায়নিক ব্যবহার ৩০ শতাংশ কমানো সম্ভব।

কাঁচা চামড়ার বর্জ্য থেকে বায়োডিজেল ও সার উৎপাদন করা সম্ভব উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে এ বিষয়ে ইনোভেশনের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছে।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) সাধারণ সম্পাদক শাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, বর্তমানে ট্যানারি মালিকরা সিইটিপি ব্যবহারের জন্য বিদ্যুৎ বিল বাবদ ১ কোটি টাকা পরিশোধ করেন।

তবে কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ ১ শতাংশেরও কম বলে জানান তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কাঁচা চামড়ার বর্জ্য থেকে উৎপাদিত বায়োডিজেল নবায়নযোগ্য শক্তি তৈরি করছে।

তিনি আরও বলেন, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এটি আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়বে না।

সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেন এশিয়া ফাউন্ডেশনের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ।

Comments