৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সিরামিক পণ্য রপ্তানি

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।
সিরামিক পণ্য, রপ্তানি, বিদ্যুৎ সরবরাহ, ডলার, রপ্তানি আয়,
স্টার ফাইল ছবি

সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে বাংলাদেশ গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ সিরামিক পণ্য রপ্তানি করেছে। যদিও গ্যাসের ঘাটতির কারণে নির্মাতারা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় এই শিল্পের প্রবৃদ্ধিতে কিছুটা ধীর গতি ছিল।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সিরামিক পণ্য রপ্তানি করে ৪৩ দশমিক ৩৯ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি।

২০২১-২২ সালে রপ্তানি বেড়েছিল ৩২ দশমিক ৯৫ শতাংশ এবং ২০২০-২১ সালে ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

কিন্তু, করোনা মহামারি শুরুর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এই শিল্পের রপ্তানি আয় ছিল ৬৮ দশমিক ৯৭ মিলিয়ন ডলার। সেই তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরের আয় বেশ কম।

বাংলাদেশ সিরামিক ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ইরফান উদ্দিন বলেন, 'গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় উৎপাদনকারীরা পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে কারখানা চালাতে পারছেন না।  ২০২০-২৩ অর্থবছরে এ খাত প্রত্যাশিত রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে না পারার মূল কারণ এটি।'

গত বছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস রোধে সরকার আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে সরাসরি তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধ করে। এরপর দেশের শিল্পকারখানায় গ্যাস সংকট দেখা দেয় এবং অভ্যন্তরীণ উৎপাদন পর্যাপ্ত না হওয়ায় জ্বালানি সরবরাহ মারাত্মকভাবে কমে যায়।

ফার সিরামিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইরফান বলেন, 'আমরা গত বছরের অক্টোবর থেকে প্রতিদিন প্রায় ১২ ঘণ্টা গ্যাস পাইনি। তাই সময়মতো পণ্য উৎপাদন করতে পারিনি। ফলে প্রায় ৩০ শতাংশ অর্ডারের বিপরীতে পণ্য সরবরাহ করতে পারিনি।'

সরকার সিরামিক পণ্য রপ্তানিতে ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দিচ্ছে। ইরফান বলেন, 'এটা আমাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জক।'

ডিবিএল সিরামিকসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার বলেন, 'উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও গ্যাস সংকটের কারণে সিরামিক শিল্প কঠিন সময় পার করছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখতে এই শিল্প বড় চ্যালেঞ্জের মুখেও পড়েছে।'

স্থানীয় সিরামিক নির্মাতারা প্রধানত ৩ ধরণের পণ্য উৎপাদন করেন, যথাক্রমে- টাইলস, টেবিলওয়্যার ও স্যানিটারিওয়্যার। বর্তমানে ৬৮টি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২০টি টেবিলওয়্যার তৈরি করে, ৩২টি টাইলস তৈরি করে এবং বাকিরা স্যানিটারিওয়্যার তৈরি করে।

বাংলাদেশ মূলত টেবিলওয়্যার রপ্তানি করে। তবে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রপ্তানির তালিকায় টাইলস যুক্ত হয়েছে।

জব্বার জানান, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পেলেও চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রেখে সিরামিক পণ্যের দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। ফলে, লাভের পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে।

মীর সিরামিক লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুসলান নাসির বলেন, 'টাইলস নির্মাতারা সীমিত আকারে পণ্য রপ্তানি করে রপ্তানিতে সামান্য অবদান রাখেন।'

মীর সিরামিক মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে রপ্তানি করে।

নাসির বলেন, 'দ্রুত নগরায়নের কারণে গত এক দশকে দেশের বাজারে টাইলসের চাহিদা বেড়েছে। তাই টাইলস নির্মাতারা স্থানীয় বাজারে মনোনিবেশ করছেন। বিশ্বব্যাপী টাইলসের বাজারে প্রতিযোগিতা বেশি। যেহেতু এই শিল্প আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল, তাই স্থানীয় উৎপাদনকারীদের আন্তর্জাতিক রপ্তানি বাজারের বড় অংশ দখলে সময় লাগবে।'

তবে স্থানীয় উৎপাদনকারীরা বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদন করায় টাইলস খাতে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ দেখছেন তিনি।

উৎপাদনকারীরা এ পর্যন্ত এ খাতে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। এই শিল্পে প্রায় ২ লাখ নারীসহ প্রায় ৫ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তারা ৫০টিরও বেশি দেশে পণ্য সরবরাহ করেন।

Comments