ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যকে স্বাগত জানিয়েছেন শীর্ষ ব্যবসায়ীরা

রুপিতে বাণিজ্য
ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্য রপ্তানিকারকদের মুদ্রা রূপান্তরের ক্ষতি থেকে রক্ষার পাশাপাশি তাদের সময় বাঁচাবে বলে আশা করছেন দেশের বেশ কয়েকজন শীর্ষ ব্যবসায়ী।

তবে টাকার অন্তর্ভুক্তি ২ দেশের ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যকে উৎসাহিত করবে বলেও মনে করেন তারা।

গতকাল মঙ্গলবার ডলারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে বাংলাদেশ ও ভারত রুপিতে বাণিজ্য শুরুর পর বেশ কয়েকজন রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ী এই মত পোষণ করেন।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রুপিতে বাণিজ্য এমন একটি বিকল্প যা শেষ পর্যন্ত স্থানীয় রপ্তানিকারকদের সুবিধা দেবে। যদিও এটি প্রাথমিকভাবে ২ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ভবিষ্যতে তা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'আগামী সেপ্টেম্বরে দ্বৈত মুদ্রার ডেবিট কার্ড চালু হলে তা প্রতিবেশী ২ দেশের ডলারের ওপর চাপ কমাবে।'

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, 'কাঁচামাল আমদানির জন্য সরকার ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে পোশাক রপ্তানিকারকরা সহজেই ভারত থেকে রুপিতে কাঁচামাল কিনতে পারবেন।'

তিনি আরও বলেন, 'মুদ্রার একাধিকবার রূপান্তরের ঝামেলা থাকবে না। ভবিষ্যতে টাকাকেও দ্বিমুখী বাণিজ্যে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।'

নিটওয়্যার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভারত বাংলাদেশের জন্য ক্রমবর্ধমান ও সম্ভাবনাময় বাজার।'

প্লামি ফ্যাশনস অন্যান্য দেশের পাশাপাশি ভারতেও পণ্য রপ্তানি করে।

ফজলুল হকের মতে, রুপিতে বাণিজ্য ও মুদ্রার একাধিকবার রূপান্তর এড়ানোর মাধ্যমে ডলারপ্রতি ১ টাকা সাশ্রয় হলে সুফল পাওয়া যাবে।

তবে তার প্রশ্ন, 'রুপি ও টাকার বিনিময় হার নির্ধারণে বাংলাদেশে কার্যকর ডলারের হার কত হবে? রপ্তানিকারক, আমদানিকারক ও রেমিটেন্স প্রেরণকারীদের জন্য আলাদা হার আছে বলেই প্রশ্নটি এসেছে। তাই এর ব্যাখ্যা প্রয়োজন।'

তিনি বলেন, 'আমদানিকারকদের স্থানীয় উৎস থেকে কাঁচামাল কিনলেও ডলারে মূল্য শোধ করতে হয়।'

তিনি আবারও প্রশ্ন করেন, 'আমরা কি কাঁচামাল রুপি বা টাকায় কিনতে পারব?'

'অনেক কিছুই অস্পষ্ট রয়ে গেছে,' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'সামগ্রিকভাবে, রুপিতে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য রপ্তানিকারকদের জন্য খুব বেশি সুবিধা বয়ে আনতে পারে না।'

প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী ভারতের সঙ্গে রুপিতে বাণিজ্যকে মহৎ উদ্যোগ হিসেবে আখ্যা দেন। তার মতে, 'এটি সঠিক পথে যাওয়ার একটি উদ্যোগ।'

তিনি বলেন, 'এটি ক্রেতাদের আরও সুবিধা দেবে। ক্রেতাদের আরও কাছে যাওয়া যাবে। তারা অপচয় ও মুদ্রা রূপান্তরের ক্ষতি থেকে বাঁচাবে। ভারত একটি বড় বাজার। এটি আমাদের জন্য বড় সুযোগ।'

ভারতে পণ্য রপ্তানিকারক প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ রপ্তানি আয়ের সমপরিমাণ রুপিতে আমদানি বিল পরিশোধের চেষ্টা করবে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আসুন আমরা চেষ্টা করি। যদি এই উদ্যোগ উপকারে না আসে তাহলে আমরা আবার ডলারে ফিরে আসতে পারি।'

ভারতে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন এই উদ্যোগ বাংলাদেশ ও ভারতের রপ্তানি ও আমদানিকারকদের উপকৃত করবে।'

তিনি মনে করেন, টাকার বিনিময়েও বাণিজ্য করা উচিত।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই উদ্যোগ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরও গভীর করবে।'

'ডলারের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কিছুটা কমাবে। ফলে ব্যবসার খরচও কমবে,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রাথমিকভাবে রুপিতে ২০০ কোটি ডলারের বাণিজ্য হতে পারে।'

বাণিজ্য ভারসাম্য ভারতের দিকে ঝুঁকে আছে। প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশে ১২ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করছে। বাংলাদেশ বছরে ভারতে ২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করে।

'তাই, বাংলাদেশের লাভ কম হবে,' মন্তব্য করেন খোকন।

ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগামী সেপ্টেম্বরে চালু হতে যাওয়া দ্বৈত মুদ্রা কার্ড ডলারের রূপান্তরের ফলে বিনিময় হারের ক্ষতি কমাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'টাকা-রুপি কার্ড ২ দেশের ভ্রমণকারীদের জন্যও উপকারী হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Protests, road blockades trigger traffic disruptions in Dhaka

Several parts of the capital have been experiencing severe traffic congestion today due to demonstrations and road blockades by different political parties citing various reason

3h ago