বাংলাদেশে আসছে আরও জাপানি বিনিয়োগ

বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগ
ঢাকার প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘আগামী ৫০ বছরের জন্য বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্ক: বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নের জন্য’ শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে অতিথিরা। ছবি: স্টার

এশিয়ার দেশগুলোয় ব্যবসা করা জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আকৃষ্ট করার ক্ষমতা বাংলাদেশের আছে বলে মন্তব্য করেছেন জাপানের সফররত অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ইয়াসুতোশি নিশিমুরা।

তিনি বলেন, অন্য দেশ থেকে জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর কারখানা সরিয়ে নেওয়ার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

জাপানি প্রতিষ্ঠান হোন্ডা বাংলাদেশে কারখানা খুলেছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিজেআইটি এ দেশে উৎপাদন শুরু করেছে।

রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে 'আগামী ৫০ বছরের জন্য বাংলাদেশ-জাপান অর্থনৈতিক সম্পর্ক: বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নের জন্য' শীর্ষক দিনব্যাপী সম্মেলনে জাপানি মন্ত্রী আরও বলেন, 'আশা করি, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে আসবে।'

গত এপ্রিলে টোকিও সম্মেলনে বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্ক আগের বিস্তৃত সম্পর্ক থেকে কৌশলগত সম্পর্কে পৌঁছেছে উল্লেখ করে নিশিমুরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগ ও দক্ষিণ এশিয়ার এ দেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে বিদ্যমান ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের পরামর্শ দেন।

জাপান এক্সটারনাল ট্রেড অর্গানাইজেশন (জেট্রো), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই), জাপান বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও জাপানিজ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় এই সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

মন্ত্রী নিশিমুরা বলেন, আগামী ৫০ বছর বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক ৩ স্তম্ভের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে। এগুলো হচ্ছে—বাংলাদেশের শিল্প-উন্নয়ন, জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোর স্থানান্তর ও বাস্তবসম্মত জ্বালানি ব্যবস্থা।

তিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেন, গত কয়েক বছর ধরে দেশটিতে বার্ষিক ৫ থেকে ৮ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি বজায় রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশের শিল্পোন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টোকিও ইতোমধ্যে জাইকার মাধ্যমে বাংলাদেশে বেশকিছু অবকাঠামো নির্মাণে সহায়তা করে যাচ্ছে।

প্রকল্পগুলোর মধ্যে আছে মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র ও গভীর সমুদ্রবন্দর।

গত এপ্রিলে জাইকা বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়ন সংস্থাটির সক্ষমতা বাড়াতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে।

'জাইকা বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উন্নয়নে সহায়তা করছে,' যোগ করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপান অর্থনৈতিক অঞ্চল নামে পরিচিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন গড়ে তোলা হচ্ছে এবং ইতোমধ্যে ঢাকার মেট্রোরেল আংশিকভাবে জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩৫০টি জাপানি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো মোট বিনিয়োগ ৩৮০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি।

এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৫ শতাংশ চায় ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করতে অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব চুক্তি (ইপিএ) হোক।

নিশিমুরা জানান, ২০২২ সালে বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে ১০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ পেয়েছে। এটি একটি রেকর্ড। গত এক দশকে বাংলাদেশে জাপানি প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৪ গুণ বেড়েছে।

দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে উভয় দেশ এখন ইপিএর জন্য কাজ করছে। আশা করা হচ্ছে যে, এই সপ্তাহের মধ্যে চুক্তির জন্য যৌথ সমীক্ষা শেষ হবে।

এ লক্ষ্যে জাপানের একটি প্রতিনিধি দল ঢাকায় আসছে।

অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ২০২৬ সালের আগেই ইপিএ সই হতে পারে। সে বছর বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে।

তিনি জানান, জাপান ও ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ২ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন অটোমোবাইল শিল্পে জাপানি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশ একটি বিশ্বমানের অটোমোবাইল খাত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছে।

তিনি লাইট-ইঞ্জিনিয়ারিং খাতেও বিনিয়োগের আহ্বান জানান।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, দেশের ১৩ কোটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে গেছে। শতভাগ মানুষের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ আছে।

১ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আইটি রপ্তানি হয়েছে বলেও জানান তিনি।

গত এপ্রিলে টোকিওতে জেপি-বিডি সম্মেলনে জাপানের অর্থনীতি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় স্বল্পোন্নত দেশ-পরবর্তী অর্থনীতি এবং রূপকল্প ২০৪১ এর লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখতে বাংলাদেশের শিল্প উন্নয়নে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা কাঠামো চালু করে।

অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়গুলো সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতার সম্ভাব্য ক্ষেত্র হিসেবে ৬টি খাতকে গুরুত্ব দিয়েছে। এগুলো হচ্ছে—তৈরি পোশাক, ভারী শিল্প, লজিস্টিকস, সার্কুলার অর্থনীতি, পরিবেশবান্ধব জ্বালানি ও আইটি।

জেট্রোর প্রেসিডেন্ট কাজুশিগে নোবুতানি ও বাংলাদেশে জাপানের রাষ্ট্রদূত কিমিনোরি ইওয়ামা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন।

সম্মেলনে পৃথক অধিবেশনে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে যথেষ্ট পরিমাণে জ্বালানি প্রয়োজন। এখানে নবায়নযোগ্য জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে জাপান কাজ করতে পারে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এই খাতে পূর্ব এশিয়ার এই সমৃদ্ধ দেশের অভিজ্ঞতা আছে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, জাপানি ব্যবসায়ীরা যাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারেন সেজন্য সরকার সব ধরনের সহায়তা দিচ্ছে।

তার মতে, 'দেশে চিকিৎসা, কৃষি, ও জ্বালানির মতো অনেক সম্ভাবনাময় খাত আছে যেখানে জাপানি ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগ করতে পারেন।'

বিডার বেশিরভাগ সেবা অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কয়েক মাসের মধ্যে আমরা নিশ্চিত করতে যাচ্ছি যে সব পরিষেবা এক জায়গা থেকে দেওয়া হবে।

সম্মেলনে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ২ দেশের মধ্যে ৩টি সমঝোতা স্মারক সই হয়।

বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন লিমিটেড (বিএসইজেড) ও বাংলাদেশ-জাপান যৌথ উদ্যোগ বাংলাদেশ আইআরআইএস কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায়ে জমি কেনা ও জমি ব্যবহারের অধিকার অর্জনের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

ব্র্যাক কুমন লিমিটেডের সঙ্গে দ্বিতীয় সমঝোতা স্মারক সই করেছে বিএসইজেড।

বাণিজ্যিক তথ্য বিনিময় ও কর্মকর্তাদের সক্ষমতা বাড়াতে একে অপরকে সহযোগিতার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জেট্রোর সঙ্গে অপর সমঝোতা স্মারক সই করে।

Comments

The Daily Star  | English

Not satisfied at all, Fakhrul says after meeting Yunus

"The chief adviser said he wants to hold the election between December and June"

2h ago