পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কইয়ে বিপ্লব ঘটেছে মাছ চাষে

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পাঙাশের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা আড়াই গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টনে।
চাষের মাছ

পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কইয়ের (ক্লাইম্বিং ফিশ) উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় গত ১২ বছরে দেশে মাছের উৎপাদন ব্যাপকহারে বেড়েছে।

ক্রমবর্ধমান চাষের ফলে এই ৩ প্রজাতির মাছ নিম্নআয়ের মানুষের আমিষের প্রধান উত্স হয়ে উঠেছে। গ্রাম ও শহরতলির হাজারো লোকের কর্মসংস্থান ও আয়ের সুযোগ করে দিয়েছে।

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১০-১১ অর্থবছরে দেশে পাঙাশের বার্ষিক উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা আড়াই গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টনে।

একই সময়ে তেলাপিয়ার উৎপাদন ৯৭ হাজার ৯০৯ টন থেকে বেড়ে ৩ লাখ ২৯ হাজার টন হয়েছে। কইয়ের উৎপাদন ৩৫০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫৭ হাজার ২৪৪ টন।

চাষের কারণে দেশে সামগ্রিক মাছের উৎপাদন প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ২০১০-১১ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে মাছের উৎপাদন ১১ লাখ ৯৯ হাজার টন থেকে বেড়ে ২১ লাখ ৬৬ হাজার টনে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) অ্যাকুয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাছের পোনার সহজলভ্যতা, কৃত্রিম খাবার গ্রহণ ও বাজারে চাহিদার কারণে এই ৩ প্রজাতির মাছ চাষ হচ্ছে।'

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) ১৯৯০-এর দশকে বিদেশ থেকে পোনা এনে দেশে পাঙাশ চাষ শুরু করে। ধীরে ধীরে মাছটি দেশের মধ্যম ও নিম্নআয়ের মানুষের পাশাপাশি শহরে নিম্নআয়ের মানুষদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে।

'এটি প্রাণীজ আমিষের চমৎকার উত্স হয়ে উঠেছে,' যোগ করেন তিনি।

পাঙাশের পোনার বেঁচে থাকার হার প্রায় শতভাগ। এটি ময়মনসিংহ, কুমিল্লা, বগুড়া, জয়পুরহাট, নরসিংদী ও যশোরসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মাছ চাষিদের আকৃষ্ট করেছে।

ময়মনসিংহ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা দিলীপ কুমার সাহা ডেইলি স্টারকে জানান, ত্রিশাল, গৌরীপুর, ফুলপুর, তারাকান্দা, ভালুকা ও মুক্তাগাছা উপজেলায় প্রায় ১ লাখ ১২ হাজার মাছ চাষি আছেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, 'কৃষিখাতের মধ্যে মাছ চাষ সবচেয়ে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।' মাছ চাষ ও বিপণনের প্রতিটি ধাপে বিপুল সংখ্যক মানুষ সম্পৃক্ত আছেন।

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাছ চাষ সহজ হওয়ায়, চাষিরা পুকুরে মাছ চাষ করায় এবং ক্রেতারা তুলনামূলক কম দামে মাছ কিনতে পারায় এই ৩ প্রজাতির মাছ চাষের প্রসার ঘটেছে।'

তিনি মনে করেন, 'কৃষি প্রযুক্তির সম্প্রসারণ না হলে এত কম দামে নিম্নআয়ের মানুষের কাছে মাছ পৌঁছে দেওয়া যেত না।'

পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কই গত দশকে আমিষের মোট উত্পাদন বাড়াতে ব্যাপক অবদান রেখেছে।

২০২০-২২ অর্থবছরে মাছের উৎপাদন হয়েছে ৪৭ লাখ ৫৯ হাজার টন। ২০১০-১১ অর্থবছরে তা ছিল ৩০ লাখ ৬২ হাজার টন। মাছের সামগ্রিক উৎপাদনে চাষ করা মাছের অবদান প্রায় ৪৫ শতাংশ।

পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কই চাষের ফলে উৎপাদন বার্ষিক ৮ শতাংশেরও বেশি হারে বেড়েছে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালের ধানীখোলার তাপসী এগ্রো কমপ্লেক্সের মালিক আবু রায়হান গত ৮ বছর ধরে পাঙাশ চাষ করে আসছেন। তার ব্যবসা এখন আগের তুলনায় বেশি লাভজনক।

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় পাঙাশসহ মাছের দাম বেড়েছে।

ময়মনসিংহের পাইকারি বাজারে এখন পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি দরে। খুচরা মূল্য ২০০ থেকে ২৩০ টাকা।

আবু রায়হান বলেন, 'যেহেতু তেলাপিয়া পুরোপুরি ভাসমান খাবারের ওপর নির্ভরশীল, তাই অনেক সময় খাবারের দাম বাড়লে চাষিদের খরচ বেড়ে যায়।'

ত্রিশালের সুমন ফিশারিজের স্বত্বাধিকারী সুমন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাছ চাষিরা ঝামেলামুক্ত চাষ ও কাঙ্ক্ষিত মুনাফা চান। তাই অনেকে তেলাপিয়ার পরিবর্তে পাঙাশ চাষ করেন।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শংকর চন্দ্র মন্ডল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাঙাশ, তেলাপিয়া ও কই তুলনামূলকভাবে কম দামে পাওয়া যায় বলে একে "গরিবের জন্য মাংস" বলা হয়।' তিনি দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাছ চাষ প্রসারের জন্য স্থানীয় মৎস্য কর্মকর্তাদের কৃতিত্ব দেন।

ময়মনসিংহের মেচুয়া বাজারে রিকশাচালক আব্দুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যখন হাতে টাকা থাকে তখন পাঙাশ কিনি। এটি সবচেয়ে সস্তা।'

গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এক কাঁচাবাজারে মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল কাইয়ুম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত কুমিল্লা থেকে পাঙাশ ও তেলাপিয়া নিয়ে আসি। এখানে যারা বাজার করতে আসেন তাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের মানুষ।'

'রুই, পাবদা বা অন্য মাছ নিয়ে আসলেও পাঙাশের চাহিদা অনেক বেশি,' উল্লেখ করে তিনি জানান, তেলাপিয়ার দাম কয়েক সপ্তাহ আগে ২০০ টাকা ছিল। এখন তা বেড়ে ২৫০ টাকা হওয়ায় এর চাহিদা কমে গেছে।

বিএফআরআইর মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দেশের পাঙাশ রপ্তানির সম্ভাবনা আছে।' এই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ৭ বছর আগে 'সাদা পাঙাশের' উৎপাদন শুরু করলে তা চাষিদের মনোযোগ আকর্ষণ করে। তিনি বলেন, 'অন্যান্য দেশে সাদা পাঙাশের চাহিদা বেশি।'

তিনি আরও বলেন, 'ভিয়েতনাম পাঙাশ রপ্তানিতে শীর্ষে থাকলেও বাংলাদেশ চাষ বাড়িয়ে রপ্তানিবাজারে প্রবেশ করতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

34m ago