‘আইনজীবী’ লিটনের মোট আয়ের ৮১ শতাংশই মাছ চাষ থেকে

এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন। ছবি: সংগৃহীত

২১ জুন অনুষ্ঠেয় রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের আয় গত ৪ বছরে প্রায় ৪ গুণ বেড়েছে।

রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটন নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখিয়েছেন, বছরে মাছ চাষ থেকে তার সর্বাধিক আয় আসে। আর এই খাত থেকে তিনি তার আয় ৪ বছরে প্রায় সাড়ে ৭ গুণ বাড়িয়েছেন।

কিন্তু হলফনামায় লিটন মাছ চাষকে তার মূল পেশা হিসেবে উল্লেখ করেননি। তিনি এখানে নিজেকে আইনজীবী হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও এই পেশা থেকে কোনো আয় তিনি হলফনামায় দেখাননি।

২০২৩ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া লিটনের হলফনামার সঙ্গে ২০১৮ সালের হলফনামার তুলনা করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুসারে, লিটনের স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনির ২০১৮ সাল পর্যন্ত কোনো আয় ছিল না। তবে গত ৪ বছরে তিনি ব্যবসা ও মাছ চাষ থেকে বছরে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা করে আয় করেছেন।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লিটন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আইন শুরু থেকেই আমার পেশা। কিন্তু আমি এখন আর এ পেশা থেকে উপার্জন করি না; বরং দলের সদস্যদের জন্য ওকালতি করতে গিয়ে নিজের পকেট থেকেই অর্থ খরচ করতে হয়।'

২০১৮ সালের হলফনামায় লিটন তার বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৭৮ লাখ ৩২ হাজার ২০৮ টাকা। ২০২৩ সালের হলফনামায় তা দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ১৩ হাজার টাকা।

তার দাবি, এই আয়ের ৮১ শতাংশ অর্থাৎ ২ কোটি ৪২ লাখ টাকা এসেছে মাছ চাষ থেকে।  

হলফনামায় লিটন তার সম্পদের আওতায় ৭০ লাখ ১২ হাজার ১৯০ টাকার একটি মাছের খামার দেখিয়েছেন, যা ২০১৮ সালের হলফনামায় উল্লেখ ছিল না। 

লিটন এই প্রতিবেদককে জানান, গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় দলের অন্য কয়েকজনের সঙ্গে অংশীদারত্বের ভিত্তিতে তিনি ২টি মাছের খামার গড়ে তুলেছিলেন, যার মধ্যে একটি হলফনামা জমা দেওয়ার আগে বিক্রি করা হয়েছে।

হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে মাছ চাষ থেকে লিটনের আয় ছিল ৩২ লাখ টাকা। সে সময় শেয়ার ব্যবসা থেকে ২০ লাখ ১০ হাজার টাকা, অনির্দিষ্ট ব্যবসা থেকে ১৯ লাখ ৯ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫ লাখ ৫২ হাজার ৫০৮ টাকা এবং কৃষি থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় উল্লেখ করেছিলেন তিনি।

এবারের হলফনামা অনুসারে, বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া থেকে তার আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা, কৃষি আয় বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এছাড়া মেয়রের সম্মানী ভাতা হিসেবে বছরে ১৬ লাখ ১০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি।

লিটন জানান, স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনি তার এক চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা শুরু করেছেন, যার মাধ্যমে তিনি বছরে ১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আয় করেন। এই টাকা থেকে ৭৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকার একটি মাছের খামার গড়ে তোলেন তিনি, যেখান থেকে হলফনামায় ঘোষিত বার্ষিক ১ কোটি ৪১ লাখ টাকা আসে।

একইসঙ্গে লিটন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি তো দরিদ্র পরিবার থেকে আসিনি।' 

২০০৮ সালের জুলাই মাসে লিটন যখন প্রথমবারের মতো মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তখন তিনি তার হলফনামায় বার্ষিক আয় ২ লাখ ৪৪ হাজার টাকার বেশি নয় বলে উল্লেখ করছিলেন।

সেসময় তিনি কৃষি জমি থেকে ৫০ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া থেকে ৫০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ৮৪ হাজার টাকা এবং আইন পেশা থেকে ৬০ হাজার টাকা আয় দেখান।

২০০৮ সালে লিটনের কোনো গাড়িও ছিল না।

সর্বশেষ হলফনামায় তিনি ৪৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গাড়ির মালিকানা দেখিয়েছেন, যেখানে লিটনের সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।

এবারের হলফনামায় লিটন ৪ কোটি ১৭ লাখ ৬২ হাজার ৮৯৯ টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে তার মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকার। ২০০৮ সালে যা ছিল ৫ লাখ ২৯ হাজার টাকার।

এর বাইরে লিটন এবার তার হলফনামায় প্রথমবারের মতো আগ্নেয়াস্ত্র থাকার কথা উল্লেখ করে বলেছেন, তার কাছে ৬ লাখ টাকা দামের একটি করে শটগান ও পিস্তল আছে।

খায়রুজ্জামান লিটন ২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।

২০১৩ সালের জুনে তিনি বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের কাছে পরাজিত হন।

২০১৮ সালের ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে লিটন পুনরায় মেয়র নির্বাচিত হন।

২০২১ সালের নভেম্বরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার আগে তিনি স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক পদে দায়িত্ব পালন করেন। তার স্ত্রী শাহীন আক্তার রেনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। গত ৪ বছরে তিনিও তার সম্পদ বাড়িয়েছেন।

এ সময়ে রেনি মাছের খামার ছাড়াও ২ কোটি ২০ লাখ টাকার বেশি অস্থাবর সম্পদ ও ১ দশমিক ৭৭ একর কৃষি জমির মালিক হয়েছেন। নগরীর শহরতলিতে একটি দোতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন।

আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

লিটনের সঙ্গে মেয়র পদে আরও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম, জাকের পার্টির লতিফ আনোয়ার ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মুর্শিদ আলম।

Comments

The Daily Star  | English
Road Transport Act 2018: Govt moves to relax punishment, fines

All Dhaka buses to run under Nagar Paribahan

All passenger buses in Dhaka are scheduled to operate under Dhaka Nagar Paribahan, according to new decision yesterday by Bus Route Rationalization Committee (BRCC)

2h ago