রুপার গয়নার চাহিদা বাড়ছে কেন

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ রুপার গয়না বেছে নিচ্ছেন। এছাড়া রুপার গয়নার নকশায় এখন অনেক বৈচিত্র্য এসেছে, তাই তরুণরা রুপার প্রতি ঝুঁকছেন।
স্বর্ণ, প্লাটিনাম, রুপা, রুপার গয়না, বাজুস, আড়ং,
ছবি: হাবিবুর রহমান/স্টার

বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে রুপার গয়নার প্রতি বেশি ঝুঁকছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ স্বর্ণ কিংবা প্লাটিনামের গয়নার চেয়ে রুপা বেশ সাশ্রয়ী।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলমান মূল্যস্ফীতির চাপে মানুষ রুপার গয়না বেছে নিচ্ছেন। এছাড়া রুপার গয়নার নকশায় এখন অনেক বৈচিত্র্য এসেছে, তাই তরুণরা রুপার প্রতি ঝুঁকছেন।

বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের নিউ সিলভার প্যালেসের মালিক পলাশ পাল বলেন, '১০-১৫ বছর আগে শুধু গ্রামাঞ্চলের মানুষ রুপার গয়না কিনতেন। তবে, এখন ফ্যাশন ট্রেন্ডে পরিবর্তন এসেছে। এছাড়া, রুপার গয়না বাজেট-বান্ধব এবং বর্তমানে নান্দনিক ডিজাইনের গয়না বাজারে পাওয়া যাচ্ছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব এলাকার আড়ংয়ের এক কর্মকর্তা জানান, চাহিদা বেশি থাকায় তাদের রুপার গয়না ভালো বিক্রি হচ্ছে।

তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের আউটলেটে ৫০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দামের রুপার গয়না আছে। তাদের প্রতিদিন গড়ে ৪০ হাজার থেকে ৪৫ হাজার টাকার গয়না বিক্রি হয়, যা কয়েক বছর আগেও সম্ভব ছিল না।

তিনি বলেন, 'পণ্যের গুণগত মান ও লাইফটাইম সার্ভিস ওয়ারেন্টির সহজলভ্যতার কারণে চাহিদা বাড়ছে।'

দেশীয় ফ্যাশন ব্রান্ড সাদাকালোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক আজহারুল হক আজাদ বলেন, দেশের তরুণরা আগের চেয়ে অনেক বেশি ফ্যাশন সচেতন এবং তাদের মধ্যে রুপার গয়না ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে।

তিনি বলেন, 'গত ৫ থেকে ৭ বছরে রুপার গয়নার বিক্রি অনেক বেড়েছে।'

ঢাকার চাঁদনী চক শপিং কমপ্লেক্সের সিলভার গার্ডেন জুয়েলারি স্টোরের কর্মচারী মোহাম্মদ ফয়সাল জানান, বর্তমানে প্রতি ভরি (প্রায় ১২ গ্রাম) ২২ ক্যারেটের রুপা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৭১৪ টাকায়।

একইভাবে ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি রুপার দাম ১ হাজার ৬৩২ টাকা এবং প্রতি ভরি ১৮ ক্যারেটের দাম ১ হাজার ৩৯৯ টাকা।

তিনি আরও বলেন, প্রধানত ২১ ক্যারেটের রুপার গয়না ছাড়াও জুয়েলার্সরা এই মূল্যবান ধাতু দিয়ে তৈরি বাটি, প্লেট, গ্লাস, চামচ ও শোপিসের অর্ডার পাচ্ছেন।

রাজধানীর মিরপুর শাহ আলী মার্কেটের পপি জুয়েলারি স্টোরের মালিক নাজমুল হাসান বলেন, সম্প্রতি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধির কারণে অনেকেই রুপার পণ্য বেছে নিচ্ছেন।

মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নের কারণে বিশ্ববাজারে খাঁটি স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) প্রায় ২ সপ্তাহ আগে স্বর্ণের দাম বাড়িয়েছিল। ফলে, দেশে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম রেকর্ড এক লাখ টাকা ছুঁয়েছে।

ক্রেতারা যা বলছেন

রাজধানীর ফার্মগেটের বাসিন্দা নীলিমা জাহান বলেন, স্বর্ণের গয়না আগের চেয়ে ব্যয়বহুল হওয়ায় রুপার গয়নার চাহিদা বাড়ছে।

জাহান জানান, তিনি কিছু দিন আগে এক জোড়া স্বর্ণের দুল কিনতে চেয়েছিলেন, কিন্তু হঠাৎ দাম বৃদ্ধির পাওয়ায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন।

'পরে আমার বাজেটের মধ্যে রুপার নূপুর ও আংটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছি,' বলেন তিনি।

বাজুসের সহ-সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম শাহীন বলেন, রুপার গয়না এখন বিয়ের অনুষ্ঠানেও ব্যবহার করা হচ্ছে, যা খুব বেশি দিন আগেও ভাবা যেত না। রুপার গয়নার চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ এটি।

শাহীন আরও বলেন, অতীতে রুপার গয়নাকে খুব বেশি মূল্য দেওয়া হত না, তবে পণ্যের গুণমানের উন্নতির কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ধারণার পরিবর্তন হয়েছে।

'যেমন রুপার গুণমান ভালো হলে সাদা সোনার মতো দেখায়,' যোগ করেন তিনি।

জুয়েলারি ডিজাইনার ও কনসালটেন্ট চন্দ্র শেখর সাহা জানান, ১৯৮১ সালে প্রথম যারা দেশকে রুপার গয়নার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন। এরপর থেকে উদ্যোক্তারা গয়নায় নতুন নতুন ডিজাইন আনার চেষ্টা করছেন।

বাজুস বলছে, বর্তমানে রুপার গয়নার দেশীয় বাজার বছরে ১০ কোটি টাকার ওপরে।

Comments