৯ মাসে নন-লাইফ বিমা দাবির নিষ্পত্তি ১০ শতাংশ

বিমা
প্রতীকী ছবি। ছবি: সৌরভ হোসেন সিয়াম

চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে দেশের নন-লাইফ বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো মাত্র ১০ শতাংশ দাবি নিষ্পত্তি করতে পেরেছে বলে জানিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)।

গত বছরের একই সময়ে তা ছিল ১৫ শতাংশ।

গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিমা দাবির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ১৪০ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের একই সময়ে ছিল এক হাজার ৯৫১ কোটি টাকা।

পুরো বছরের তথ্যের তুলনা করে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে প্রায় ৪১ শতাংশ দাবি নিষ্পত্তি হয়েছে। ২০২২ সালে ছিল ৩৫ শতাংশ।

বেসরকারি বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, বিমাধারী প্রয়োজনীয় নথি ও তথ্য সরবরাহ করতে না পারায় তারা দাবিগুলো নিষ্পত্তি করতে পারছেন না।

বীমা আইন ২০১০ বলছে, আবেদনের ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তি করতে হয়। দেশে বর্তমানে ৪৬টি নন-লাইফ বিমা প্রতিষ্ঠান আছে।

আইডিআরএ পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যৌক্তিক কারণ ছাড়া দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি হলে প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়।'

দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত নন-লাইফ ও পুনঃবিমা প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা করপোরেশনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে জানান, তাদের অমীমাংসিত দাবির বেশিরভাগই পুনঃবিমা দাবি।

পুনঃবিমা হল একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অন্য একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের আংশিক বা পূর্ণ বিমাদাবির দায়সহ বিমা কিনে নেওয়া।

তিনি আরও জানান, গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তারা এক হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার দাবি পেয়েছেন। এর মাত্র পাঁচ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।

তার মতে, অনেক গ্রাহক প্রয়োজনীয় নথি দিতে পারেননি। এই কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি পরিশোধ করতে পারছে না।

গত মার্চে চট্টগ্রামে এস আলম গ্রুপের গুদামে আগুনের ঘটনায় একটি বিমা প্রতিষ্ঠানের দাবির উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, 'নর্দার্ন জেনারেল ইন্স্যুরেন্সের কাছে যেসব নথি চেয়েছিলাম তা এখনো হাতে পাইনি।'

এস আলম গ্রুপের ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চাহিদা অনুযায়ী সব নথিই দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের নথি আমরা এখনো দিতে পারিনি। তাদের কাছ থেকে এখনো নথিটি পাইনি।'

সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'গত জুলাই-আগস্টে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল এর বেশিরভাগ দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে।'

তার ভাষ্য, 'আমরা সময়মতো জরিপ প্রতিবেদন পাচ্ছি না। অনেক সময় প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে এই প্রতিবেদনে পেতে দুই থেকে তিন বছর লেগে যায়।'

'বকেয়া মেটানোর চেষ্টা চলছে,' জানিয়ে তিনি বলেন, 'প্রতি মাসে ৫০-৬০টি দাবি নিষ্পত্তির লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।'

'অনেক বিমাকারী সময়মত প্রিমিয়াম পরিশোধ করেন না। এই কারণেও সময়মত দাবি পরিশোধ করা যায় না,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এমন পরিস্থিতিতে গত বছর প্রতিষ্ঠানটি সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোনো বিমা প্রতিষ্ঠান সময়মতো একটি প্রিমিয়ামও না দিলে পলিসি বাতিল হয়ে যাবে।

রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্সের প্রধান নির্বাহী খালেদ মামুন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত নয় মাসে ১৪৮ কোটি টাকার দাবি পেয়েছি। এর ৬৪ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।'

'আমাদের কয়েকটি বড় বাণিজ্যিক দাবি আছে যা পুনঃবিমাকারীদের নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। এসব দাবির জরিপ প্রতিবেদন এখনো পাওয়া যায়নি,' যোগ করেন তিনি।

তার মতে, বিমাকারীরা সঠিক নথি জমা দিতে না পারায় প্রায়ই দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি হয়।

'এসব দাবি মূলত আগুন ও বন্যায় সম্পদের ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সম্পর্কিত।'

খালেদ মামুন বলেন, 'আইনে ৯০ দিনের মধ্যে দাবি নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিমা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনীয় নথি ছাড়া এগোতে পারে না।'

গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের নির্বাহী পরিচালক মো. মনিরুজ্জামান খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত নয় মাসে ৩০৫ কোটি টাকার দাবি পেয়েছি। এর মধ্যে মাত্র তিন শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিমাধারীদের কাছে চাওয়া নথিগুলো এখনো পাওয়া যায়নি। এ কারণে বেশ কয়েকজন গ্রাহকের দাবি সময়মতো পরিশোধ করা যায়নি।'

আইডিআরএর মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, 'এই সমস্যা সমাধানে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলো কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানতে চেয়েছে। তারপর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Kudos for consensus in some vital areas

Kudos for consensus in some vital areas

If our political culture is to change, the functioning of our political parties must change dramatically.

5h ago