রমজানের আমদানি ও বকেয়া এলসির চাপে বাড়ছে ডলারের দাম

মার্কিন ডলার। ছবি: পিক্সাবে থেকে সংগৃহীত
মার্কিন ডলার। ছবি: পিক্সাবে থেকে সংগৃহীত

পাঁচ মাস বিরতির পর টাকার বিপরীতে ডলারের দাম আবার বাড়তে শুরু করেছে। ডলারের দাম নিয়ে নতুন অস্থিরতার কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে।

গতকাল রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে পাঠানো প্রতিক্রিয়ায় একাধিক ব্যাংক কর্মকর্তা জানান, রমজানে নিত্যপণ্যের এলসির পাশাপাশি পুরোনো এলসির কারণে মুদ্রাবাজার চাপে আছে।

কয়েকজন ব্যাংক কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, রিজার্ভ ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার কেনার প্রক্রিয়া ও কয়েকটি বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসও ডলারের দাম বাড়ার পেছনে দায়ী।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ১৩টি ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা তলব করেছে। তবে ব্যাংকগুলোর নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

জানা গেছে, ব্র্যাক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকটি ব্যাংক সরকারি দামের তুলনায় বেশি দামে ডলার কেনায় চলতি মাসে মুদ্রাবাজার অস্থিতিশীল হয়েছে।'

বর্তমানে, ক্রলিং পেগ এক্সচেঞ্জ রেট সিস্টেম চালু আছে। এর ফলে ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা করতে পারে।

রেমিট্যান্স সংগ্রহে ব্যাংকগুলোকে প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা দেওয়ার অনুমতি থাকলেও কোনো কোনো ব্যাংক প্রতি ডলারে সর্বোচ্চ ১২৮ টাকা দিচ্ছে বলে জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা হুশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এসব ব্যাখ্যা সন্তোষজনক মনে না হলে ব্যাংকগুলোকে শাস্তি দেওয়া হতে পারে।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহম্মেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আমাদের ব্যাখ্যা জমা দিয়েছি। মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠান থেকে ডলার কেনার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুসরণ করব।'

'রমজানকে সামনে রেখে নিত্যপণ্যের এলসি খোলা বেড়ে যাওয়ায় মুদ্রাবাজার চাপে পড়েছে।'

'বর্তমান সরকারি হারে পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছি না' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'কিছু ক্ষেত্রে ডলারের বেশি দামের জন্য মুদ্রা বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলোও দায়ী।'

তিনি আশা করেন, শিগগিরই মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হবে।

ব্র্যাক ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ব্যাখ্যা পাঠানো হয়েছে।'

তিনি মুদ্রাবাজারের অস্থিতিশীলতার জন্য যোগাযোগ ও সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছেন।

'বকেয়া এলসির দায় পরিশোধ করার জন্য ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশের ফলে কয়েকটি ব্যাংক ডলার কিনতে বেশি দাম দিচ্ছে।'

সিটি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের ব্যাখ্যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠিয়েছেন বলে ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বকেয়া এলসির দায় পরিশোধে ব্যাংকগুলোকে দেওয়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার কারণে চলতি মাসে ব্যাংকগুলো ডলার কেনার প্রচেষ্টা জোরদার করেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'এই মাসে বেশ কয়েকটি বড় এলসি খোলা হয়েছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কেন্টাইল ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুদ্রাবাজারে অস্থিরতার পেছনে তিনটি প্রধান কারণ আছে।'

কারণগুলো হলো—দুর্বল ব্যাংকগুলোর এলসি খোলার ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া, রিজার্ভ থেকে ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডলার বিক্রি বন্ধ ও অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরে মুদ্রাবাজারে চাপ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ডলার ও ডলারের বিনিময় হার আরও নমনীয় হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো প্রতিদিনের দামের ভিত্তিতে ডলারের জন্য রেফারেন্স রেট প্রকাশের পরিকল্পনা করা হয়েছে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্য রেফারেন্স রেটকে ডলার কেনাবেচার হারের সঙ্গে সামঞ্জস্য করা।

Comments

The Daily Star  | English

The Daily Star, HSBC honour high achievers in O- and A-Level exams

To commemorate the victims of the July Uprising, the programme began with a one-minute silence, followed by the rendition of the national anthem

46m ago