পাবনা

উৎপাদন খরচই উঠছে না, ‘আমদানির কোপ’ মুড়িকাটা পেঁয়াজের দামে

মুড়িকাটা পেঁয়াজ হয় পেঁয়াজের কন্দ থেকে। এ জাতের পেঁয়াজ চাষে খরচ খানিকটা বেশি হলেও আগাম জাতের হওয়ায় ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন। ছবি: স্টার

বাজারে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতে শুরু করলেও আশানুরূপ দাম না পেয়ে হতাশ দেশের সর্ববৃহৎ পেঁয়াজ উৎপাদনকারী অঞ্চল পাবনার পেঁয়াজচাষিরা।

চাষিদের ভাষ্য, গত কয়েক বছরের মধ্যে পেঁয়াজের এমন দরপতন দেখেননি তারা। লাভের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এ বছর প্রায় দ্বিগুণ খরচ করে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ করেছিলেন তারা। কিন্তু আমদানি করা পেঁয়াজের কারণে নতুন পেঁয়াজের দাম পড়ে যাওয়ায় এখন উৎপাদন খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

মুড়িকাটা পেঁয়াজ হয় পেঁয়াজের কন্দ থেকে। এ পেঁয়াজ চাষে খরচ খানিকটা বেশি হলেও আগাম জাতের হওয়ায় ভালো দাম পাওয়া যায়। কিন্তু এবারের চিত্র ভিন্ন।

সাধারণত ডিসেম্বরের শেষ ও জানুয়ারির শুরুতে বাজারে উঠতে শুরু করে মুড়িকাটা পেঁয়াজ। এ সময় পেঁয়াজ আমাদিন বন্ধের পাশাপাশি আগাম জাতের পেঁয়াজের 'ন্যায্যমূল্য' নিশ্চিতের দাবিতে ইতোমধ্যে রাস্তায় পেঁয়াজ ফেলে প্রতিবাদ জানিয়েছেন পাবনার চাষিরা। সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। তাতেও দরপতন কমেনি।

পাবনার সুজানগর উপজেলার দুরগাপুর গ্রামের শীর্ষ পেঁয়াজচাষি মো. কামরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, প্রতি বছর ৭০ থেকে ৮০ বিঘা জমিতে পেঁয়াজের চাষ করেন তিনি। এর ভেতর আট থেকে ১০ বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ লাগান।

কামরুজ্জামান বলছেন, এবার রোপন মৌসুমে পেঁয়াজের বীজ অর্থাৎ কন্দের দাম ছিল বেশি। গতবার প্রতিমণ কন্দের দাম ছিল সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টাকার ভেতর। এবার তা কিনতে হয়েছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়। ফলে এক বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদের জন্য কন্দই কিনতে হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার। এরসঙ্গে জমির ইজারা ও শ্রমিকের খরচ মিলিয়ে প্রতিবিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ আবাদে লাখ টাকার বেশি খরচ হয়েছে।

কামরুজ্জামান এবার প্রতি বিঘায় ৬০ মন করে পেঁয়াজ পেয়েছেন। গত সপ্তাহেও তা বাজারে বিক্রি করেছেন দুই হাজার টাকা মন দরে। কিন্তু এ সপ্তাহে প্রতি হাটে দাম আরও কমেছে বলে জানান তিনি। বলেন, 'এ সপ্তাহে সবচেয়ে ভালো মানের পেঁয়াজও বিক্রি করতে হয়েছে ১৩০০ থেকে ১৪০০ টাকায়।'

এখনো খেত থেকে আবাদকৃত অর্ধেক পেঁয়াজ তোলা বাকি আছে বলে জানান কামরুজ্জামান। বলেন, 'বর্তমান বাজার দরে এক বিঘা জমির পেয়াজ বিক্রি করে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে প্রতি বিঘায় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা লোকসান থেকেই যাচ্ছে।'

সুজানগর উপজেলার আরেক কৃষক শামসুল ইসলাম বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায় না। ফলে দাম যাই হোক তা বিক্রি করে দিতে হয়।

শামসুল জানালেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রির লভ্যাংশ থেকেই তারা পরের ধাপে চারা পেঁয়াজ রোপণ করেন। কিন্তু এবার যেখানে উৎপাদন খরচই উঠছে না, সেখানে পরের ধাপের পেঁয়াজ আবাদ নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছেন তারা। অনেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলছেন।

এই চাষির পর্যবেক্ষণ, গত পাঁচ বছরের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজের এমন দরপতন দেখেননি তিনি।

এদিকে পাবনার অন্তত চারটি হাট ঘুরেও দেখা গেছে, কোনো হাটেই প্রতিমণ মুড়িকাটা পেঁয়াজের দাম ১৪০০ টাকার বেশি নয়।

এ ব্যাপারে পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, বাজারে নতুন পেঁয়াজের সরবরাহ যেমন বেড়েছে, তেমনি আমদানি করা পেঁয়াজেও বাজার ছেয়ে গেছে। যে কারণে এই দরপতন।

পাবনার পুষ্পপাড়া হাটের পেঁয়াজ ব্যবসায়ী রবিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, আমদানি করা কম দামের পেঁয়াজের কারণে পাইকারি বাজারে মুড়িকাটা পেঁয়াজের চাহিদা কমেছে। পুষ্পপাড়া হাট থেকে প্রতিবছর এ সময় প্রতি হাটবারে সাত থেকে আট ট্রাক পেঁয়াজ দেশের বিভিন্ন পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হতো। এবার কোনো হাটবারেই তিন থেকে চার ট্রাকের বেশি পেঁয়াজ যায়নি।

আমদানি বন্ধ না হলে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজের দরপতন ঠেকানো যাবে না বলেও মন্তব্য করেন এই পেঁয়াজ ব্যবসায়ী।

এদিকে পেঁয়াজের অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে এবং পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করে নতুন পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে বুধবার পাবনা-সুজানগর সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন সুজানগর উপজেলার কৃষকরা। এ সময় সড়কে পেঁয়াজ ফেলে প্রতিবাদ জানান তারা।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, এ বছর পাবনা জেলায় ৫২ হাজার ৮০১ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আবাদকৃত জমি থেকে সাত দশমিক ৮২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এর মধ্যে আট হাজার ৯৬১ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। এ থেকে প্রায় এক দশমিক ২২ লাখ মেট্রিক টন আগাম জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ জমির মুড়িকাটা পেঁয়াজ চাষিদের ঘরে উঠেছে।

বিষয়টি নিয়ে কথা হয় পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের উন্নয়ন শাখার কর্মকর্তা আশিকুর রহমানের সঙ্গে। তার ভাষ্য, মুড়িকাটা পেঁয়াজে কিছুটা দরপতন হলেও চারা পেঁয়াজ আবাদ করে সে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন কৃষকরা।

Comments

The Daily Star  | English
August 5 declared as July Mass Uprising Day

Govt declares August 5 as ‘July Mass Uprising Day’

It also declared August 8 as "New Bangladesh Day" and July 16 as "Shaheed Abu Sayed Day"

1h ago