ঈদে মুখরিত হওয়ার আশায় পর্যটন স্থানগুলো

রমজানে কক্সবাজার সৈকত মোটামুটি ফাঁকাই চিল, কারণ দর্শনার্থীরা ঘোরার চেয়ে ধর্ম পালনকে বেশি গুরুত্ব দেন। ছবি: মোকাম্মেল শুভ ও সোহরাব হোসেন/স্টার
রমজানে কক্সবাজার সৈকত মোটামুটি ফাঁকাই চিল, কারণ দর্শনার্থীরা ঘোরার চেয়ে ধর্ম পালনকে বেশি গুরুত্ব দেন। ছবি: মোকাম্মেল শুভ ও সোহরাব হোসেন/স্টার

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে দেশের জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যের হোটেল ও রিসোর্টগুলো এখন পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ বুকিং পেয়েছে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গত বছর এই হার ছিল প্রায় ৮৫ শতাংশ।

তারা বলছেন, এবার নয় দিন সাধারণ ছুটি সত্ত্বেও গরম বাড়তে থাকা, জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও সার্বিক নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কারণে অনেকে ঈদের ছুটিতে ঘুরতে যাচ্ছেন না।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিদেশ ভ্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশের পর্যটন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কারণ, দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেকে দীর্ঘ ছুটি কাটাতে বিদেশে যাচ্ছেন।

তারপরও ট্যুর অপারেটরদের আশা, ঈদ বুকিং ৯০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। দেশে চাঁদ দেখা সাপেক্ষে আগামী ৩১ মার্চ বা ১ এপ্রিল ঈদুল ফিতর হতে পারে।

কক্সবাজারের একটি হোটেলের লবি ঈদের আগে সংস্কার করা হচ্ছে। ছবি: মোকাম্মেল শুভ ও সোহরাব হোসেন/স্টার
কক্সবাজারের একটি হোটেলের লবি ঈদের আগে সংস্কার করা হচ্ছে। ছবি: মোকাম্মেল শুভ ও সোহরাব হোসেন/স্টার

ট্যুর গ্রুপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান—শ্রীমঙ্গল, সুন্দরবন, কক্সবাজার ও বান্দরবানে বুকিং বেড়েছে। তবে সাজেক, কুয়াকাটা ও সিলেট নিয়ে আগ্রহ কম।

তার মতে, সম্প্রতি সাজেকে আগুন লাগায় সেখানে পর্যটকদের আগ্রহ কমেছে। অন্যদিকে সিলেটে বর্ষায় ও কুয়াকাটায় শীতে পর্যটকদের ভিড় হয়।

এরই মধ্যে দেশের প্রধান সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে প্রায় অর্ধেক হোটেলের কক্ষ ভাড়া হয়ে গেছে। শহরটিতে প্রায় ৫০০ হোটেল এবং দুই হাজার রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকান আছে।

হোটেল দেলোয়ার প্যারাডাইসের হেড অব অ্যাকাউন্টস জাহিদ ইসলাম রাসেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের ৫০ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যে ভাড়া হয়ে গেছে। ছুটি বেড়ে যাওয়ায় পর্যটকদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি।'

কুয়াকাটার একটি গেস্ট হাউজ রোজার মাসের পর ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সাজানো হয়েছে। ছবি: মোকাম্মেল শুভ ও সোহরাব হোসেন/স্টার
কুয়াকাটার একটি গেস্ট হাউজ রোজার মাসের পর ছুটি কাটাতে আসা পর্যটকদের স্বাগত জানাতে সাজানো হয়েছে। ছবি: মোকাম্মেল শুভ ও সোহরাব হোসেন/স্টার

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কলিমউল্লাহ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদের পরের সপ্তাহের জন্য অর্ধেকের বেশি কক্ষ সংরক্ষিত রাখা আছে।'

ঢাকার অনেকে দুই ঈদের ছুটি কাটাতে বিশ্বের এই দীর্ঘ সাগর সৈকতের শহরে আসেন।

ঢাকার একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেতে ১২ জনের একটি দল কক্সবাজারে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। তাদের একজন আরিফুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকায় আমাদের জীবন বাসা থেকে অফিস আর অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত। বিরক্তিকর জীবন। ঈদের ছুটিতে ঘোরার সুযোগ হয়। সময়টুকু সাগর ও খোলা আকাশের নিচে কাটাতে চাই।'

কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। বাড়তি টহলের ব্যবস্থা থাকবে।'

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটাও পর্যটকদের স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিয়েছে। হোটেল থেকে শুরু করে খাবারের দোকান পর্যন্ত ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। সেখানকার ৬০-৭০ শতাংশ কক্ষ ইতোমধ্যে ভাড়া হয়ে গেছে।

সিকদার রিসোর্ট অ্যান্ড ভিলাসের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আল-আমিন খান উজ্জ্বল জানান, শিগগির তাদের পুরো রিসোর্ট ভাড়া হয়ে যাবে বলে আশা করছেন।

তিনি বলেন, 'পর্যটকদের জন্য সুইমিং পুলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে।'

কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশনের জহিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হোটেলগুলো সাজিয়ে নিয়েছি। এবার কয়েক লাখ পর্যটক আসতে পারে।'

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ইউএনও মো. রবিউল ইসলামসহ স্থানীয় কর্মকর্তারা সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের ইনচার্জ সাখাওয়াত হোসেন তপু ছুটির দিনগুলোয় বিশেষ নিরাপত্তার কথা জানিয়েছেন।

এ দিকে, অনেকে বিদেশে যাওয়ায় দেশে পর্যটকের সংখ্যা কিছুটা কমবে।

ট্যুর গ্রুপ বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইমরানুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ঈদের তুলনায় অগ্রিম বুকিং ৩০-৩৫ শতাংশ কমেছে। আবার বিদেশে প্যাকেজগুলোর সংখ্যা বেড়েছে ৫০ শতাংশ।'

দিগন্ত ট্রাভেল ফ্রিকের মাইনুল ইসলাম রাজু জানান, দেশে নিরাপত্তা উদ্বেগের পাশাপাশি ভারত ভিসা কম দেওয়ায় থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার মতো পর্যটনসমৃদ্ধ দেশগুলোয় বাংলাদেশি পর্যটকদের সংখ্যা বেড়েছে।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (টোয়াব) সভাপতি মো. রাফেউজ্জামান বলেন, 'গত বছরের তুলনায় ব্যবসা চার ভাগের তিন ভাগ হতে যাচ্ছে।'

তার মতে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর মানুষের ঘুরতে যাওয়া কমেছে। ফলে পর্যটন ব্যবসায় মন্দা।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে—২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপিতে পর্যটনের অবদান ছিল তিন শতাংশ এবং মোট কর্মসংস্থানে আট শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

4h ago