বিমা কেন করবেন, ভালো কোম্পানি চেনার উপায়

কেন বিমা করবেন, এই প্রশ্নের উত্তর এককথায় দিতে হলে বলতে হবে, ঝুঁকি কমাতে বিমা করতে হবে। বিশেষ করে লাইফ ইনস্যুরেন্স বা জীবন বিমা ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার পরিবারের আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করে। সেই সঙ্গে বিমা পলিসির মেয়াদপুর্তিতে মুনাফাসহ সমুদয় টাকা ফেরত পাওয়া যায়। তবে এটি শুধু সঞ্চয়ের মাধ্যম নয়, বরং ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা মোকাবিলায় একটি কার্যকর উপায়।
বিমা নিয়ে আমাদের দেশে একধরনের নেতিবাচক ধারণা প্রচলিত আছে। প্রয়োজনের সময় বা মেয়াদান্তে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কিনা সে নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় থাকেন। তবে শোনা কথায় বা প্রচারণায় প্রভাবিত না হয়ে, কয়েকটি বিষয় যাচাই-বাছাই করে সঠিক জীবন বিমা কোম্পানি বেছে নেওয়া উচিত। এতে যেমন আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়, তেমনই বিমার টাকা পাওয়া নিয়ে ভবিষ্যতে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।
'ভাই' বললেই বিমা নয়
বিমা পলিসি বিক্রি করার জন্য কোম্পানিগুলো তাদের এজেন্টদেরকে প্রথম বছরের প্রিমিয়ামের ওপর বড় অংকের কমিশন দেয়। তাই এজেন্টরা তাদের পরিচিতজনদের বিমা করানোর জন্য অনেক বেশি উৎসুক হয়, কারণ এটা তাদের জন্য তুলনামূলক সহজ। এক্ষেত্রে অনেক সময় বিমা অংকের দ্বিগুণ টাকা মুনাফাসহ নানা ধরনের প্রলোভন দেখানো হয়, যা কোনো কোম্পানির জন্যই সত্য নয়। প্রতিটি কোম্পানিরই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠান কর্তৃক মুনাফা দেওয়ার একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তাই আগে থেকেই মুনাফার পরিমাণ বলে দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এজেন্ট পরিচিত হলেই তার কথায় বা প্রলোভনে বিমা পলিসি কেনা যাবে না।
বিমা কোম্পানির আর্থিক সক্ষমতা
বিমা এমন একটি সেবা, যার সুবিধা পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। তাই যেখানে বিমা করবেন সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি কতটা মজবুত, তা যাচাই করা সবচেয়ে জরুরি। প্রথমেই দেখা উচিত জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানটি কতদিন ধরে কাজ করছে। কারণ একটি প্রতিষ্ঠানকে আর্থিকভাবে শক্তিশালী হতে সময়ের প্রয়োজন। নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বিমা পলিসি কেনার আগে ওই প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে খুব ভালো করে জেনে নেওয়া ভালো। প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে যারা আছেন তাদের মালিকানাধীন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থা কেমন সেটা জানাও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
বিমা দাবি পরিশোধের হার ও স্বচ্ছতা
একটি ভালো বিমা কোম্পানির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুততার সঙ্গে গ্রাহকের বিমা দাবি পরিশোধ করা। তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই কোম্পানির 'ক্লেইম সেটেলমেন্ট রেশিও' বা বিমা দাবি নিষ্পত্তির হার দেখে নিতে হবে। অর্থাৎ, মোট দাবির কত অংশ পরিশোধ করা হচ্ছে এবং দাবি পরিশোধ করতে গড়ে কত দিন সময় লাগছে, তা যাচাই করতে হবে। এই তথ্য পাওয়া যাবে 'বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ' এর ওয়েবসাইটে।
একই সঙ্গে গ্রাহকের প্রিমিয়াম গ্রহণ এবং দাবি পরিশোধের ক্ষেত্রে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করা হচ্ছে কি না, তা-ও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে বিমা কর্মীরা গ্রাহকের কাছ থেকে প্রিমিয়ামের টাকা সংগ্রহ করে দেরিতে জমা দেয় বা ক্ষেত্রবিশেষে কোনো টাকাই জমা দেয় না। এটা গ্রাহকের সঙ্গে সম্পূর্ণ প্রতারণা। এরকম ঘটনায় গ্রাহক প্রিমিয়াম পরিশোধ করেও সম্পূর্ণভাবে বিমা কাভারেজের বাইরে থেকে যান। পরে প্রয়োজনের সময় বা মেয়াদান্তে গ্রাহক বিমা দাবির কোনো টাকাই পান না।
এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় ব্যাংক বা ডিজিটাল লেনদেনের মাধ্যমে প্রিমিয়াম পরিশোধ করা যাতে পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়।
প্রতিষ্ঠানের সুনাম
যেকোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের জন্য সুনাম অত্যন্ত জরুরি। কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ ও শীর্ষ পদে কারা আছেন, তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা কেমন, তা জেনে নেওয়া উচিত।
পাশাপাশি, বিভিন্ন সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে কী ধরনের খবর প্রকাশিত হচ্ছে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। এর মাধ্যমে কোম্পানির সুনাম সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যায়। গ্রাহক সংখ্যা, করপোরেট গ্রাহকের তালিকা এবং বহুজাতিক কোম্পানির সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতাও একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মদক্ষতার পরিচায়ক।
বিমা নিয়ন্ত্রকের ওয়েবসাইটের তথ্য
বিমা পলিসি কেনার আগে প্রতিষ্ঠানের বিমা দাবি পরিশোধের বিষয়ে 'বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ'-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে তথ্য যাচাই করতে পারেন। ওয়েবসাইটে 'নিষ্পন্ন/অনিষ্পন্ন দাবির তালিকা' ট্যাব থেকে কোম্পানিগুলোর এসব তথ্য জানতে পারবেন।
নিজের ও পরিবারের জন্য বিমা একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সিদ্ধান্ত। তাই পলিসি কেনার আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজখবর নিতে হবে। এর মাধ্যমে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আর্থিক ঝুঁকি থেকে সুরক্ষা পাওয়া সম্ভব।
Comments