সরকারি প্রকল্প কমছে, ধস নামছে নির্মাণ খাতে

ছবি: আনিসুর রহমান

সরকারি ব্যয়সংকোচনের অংশ হিসেবে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি কমিয়ে দেওয়ায় মন্দার কবলে পড়েছে দেশের নির্মাণ খাত। সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতি দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে।

সম্প্রতি মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) ও পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের (পিইবি) এক প্রতিবেদন বলছে, নির্মাণ খাতের পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) সূচক ৫০ পয়েন্টের নিচে নেমে গেছে, যা খাতটির সংকোচনের ইঙ্গিত দেয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে রেকর্ড সর্বনিম্ন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার। গত অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) এডিপি বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৪৯ শতাংশ।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি ও মীর আক্তার হোসেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশের নির্মাণ খাত নজিরবিহীন সংকটের মুখে পড়েছে।'

তিনি জানান, একদিকে গত কয়েক বছরে মূল নির্মাণসামগ্রীর দাম ১২ থেকে ১৫ শতাংশ বেড়েছে, অন্যদিকে ব্যাংকঋণের সুদের হার ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৪-১৬ শতাংশ হয়েছে। অন্যদিকে সরকারি প্রকল্পে অর্থছাড় কমে গেছে। এতে বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই লোকসানের মুখে পড়ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি ক্রয়নীতিতে দীর্ঘমেয়াদি প্রকল্পে দাম সমন্বয়ের সুযোগ থাকলেও বাস্তবে তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা হয় না, যা ঠিকাদারদের আরও ঝুঁকিতে ফেলে দেয়।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি মনির উদ্দিন আহমেদ বলেন, সরকার নতুন প্রকল্পে পর্যাপ্ত অর্থ না দেওয়ায় সরকারি অবকাঠামোর কাজ প্রায় থমকে গেছে। ফলে অনেক ছোট ও মাঝারি ঠিকাদার মারাত্মক আর্থিক সংকটে পড়েছেন। কাজের অভাবে তাদের অনেকে এই খাত থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য হতে পারেন।

তার মতে, নির্মাণশিল্প সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ না করা ও উন্নয়ন খরচ না বাড়ানো পর্যন্ত এই খাতে গতি ফেরার সম্ভাবনা কম।

পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, এই খাতের গতি কমে গেলে অর্থনীতির বিকাশ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ কমে যায়। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমার পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি সরকারকে উন্নয়ন ব্যয় কমাতে বাধ্য করেছে।

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, সরকারি খরচ কমে যাওয়ায় গত তিন মাসে সিমেন্টের বিক্রি প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে। বর্ষায় বিক্রি এমনিতেই কম থাকে, তবে এ বছর পরিস্থিতি অনেক বেশি খারাপ। তবে তিনি যোগ করেন, গ্রামাঞ্চলে ব্যক্তিগত নির্মাণের চাহিদা তুলনামূলকভাবে ভালো থাকায় খাতটি এখনো টিকে আছে।

ইস্পাত, সিমেন্ট, টাইলস, স্যানিটারি ওয়্যার, কেবল, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, পেইন্ট, গ্লাস, অ্যালুমিনিয়াম ও ইটসহ অসংখ্য সহায়ক শিল্প নির্মাণ খাতের সঙ্গে যুক্ত।

প্রিমিয়ার সিমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক মনে করেন, একটি নির্বাচিত সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে উন্নয়ন প্রকল্পগুলো পুনরায় পুরোদমে চালু করলে এই খাতে গতি ফেরা সম্ভাব।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

8h ago