বাড়ছে আলুর দাম, লোকসান কমছে কৃষকের

আলুর দাম
ছবি: আনিসুর রহমান/ স্টার ফাইল ফটো

খেত থেকে ঘরে তোলার কয়েক মাস পর আলুর দাম বাড়তে শুরু করেছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির সঙ্গে লড়াই করা ক্রেতাদের ওপর চাপ বাড়ালেও তা লোকসানে থাকা কৃষকদের কিছুটা হলেও স্বস্তি দিচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতা ও রাষ্ট্রায়ত্ত ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে—এক সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম কেজিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে।

টিসিবির তথ্য বলছে—গতকাল রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। আর গত এক সপ্তাহে বেড়েছে তিন দশমিক ৭৭ শতাংশ।

খুচরা বাজারে মূল্যবৃদ্ধি

গত এপ্রিল থেকে আলুর দাম তুলনামূলক কম ছিল। টিসিবির তথ্য বলছে, ওই মাসে আলুর গড় দাম ছিল কেজিপ্রতি সাড়ে ২২ টাকা, মে মাসে ছিল ২১ টাকা পাঁচ পয়সা ও জুনে আবার সাড়ে ২২ টাকা। জুলাইয়ে আলুর দাম হয়েছে সাড়ে ২৭ টাকা।

এদিকে খুচরা পর্যায়ে আলুর দাম বাড়লেও পাইকারি পর্যায়ে দাম উল্টো কমেছে।

ঢাকার মিরপুরের একজন ক্রেতারা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, আলুর দাম কেজি প্রতি ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। পল্লবীর দুয়ারিপাড়া এলাকার মনির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এক সপ্তাহ আগে এক কেজি আলু কিনেছিলাম ১৫ টাকায়। গত ‍তিন দিন আগে প্রতি কেজি ২৫ টাকায় কিনতে হয়েছে।'

আলু উৎপাদনের অন্যতম প্রধান জেলা মুন্সিগঞ্জে খুচরা বিক্রেতারা ডেইলি স্টারকে জানান, গতকাল তারা ২৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করলেও এক সপ্তাহ আগে তা ছিল ২০ টাকার আশেপাশে।

তবে, খুচরা বাজারে আলুর দাম 'অস্বাভাবিক বেশি' বলে মনে করছে হিমাগার কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গতকাল হিমাগার পর্যায়ে আলু বিক্রি হয়েছে ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে।'

মুন্সিগঞ্জের মুক্তারপুরের কদম রসুল কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার প্রশান্ত কুমার মণ্ডলও খুচরা বাজারে আলুর বেশি দাম নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মজুদ থেকে ১৪ থেকে ১৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে। এটা খুবই আশ্চর্যজনক যে খুচরা বিক্রেতারা ২৫ টাকায় তা বিক্রি করছেন।'

দাম এখনো 'যুক্তিসঙ্গত'

ব্যবসায়ী, হিমাগার মালিক ও সরকারি কর্মকর্তারা মনে করছেন, বাজারে ভালোমানের আলু আসার পাশাপাশি সাম্প্রতিক বন্যার কারণেও আলুর দাম বেড়েছে।

মুন্সিগঞ্জ কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মিজানুল হক ডেইলি স্টারকে জানান, চলতি সপ্তাহে হিমাগার থেকে উন্নতমানের আলু বাজারে আসতে শুরু করেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাম্প্রতিক বন্যায় বেশ কিছু এলাকায় সবজি খেত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই আলুর ওপর চাপ বেড়েছে। দাম বেড়ে যাওয়া পেছনে এটিও কারণ হতে পারে।'

কৃষি অর্থনীতিবিদ জাহাঙ্গীর আলম খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সবজির মৌসুম শেষ হওয়ায় ও বর্ষায় সরবরাহ কমে যাওয়ায় সার্বিকভাবে বাজারে সরবরাহ কমেছে। তাই সবজির দাম বেড়েছে।'

কৃষকের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় বর্তমানে খুচরা বাজারে আলুর 'বাড়তি' দাম যৌক্তিক বলেও মনে করেন তিনি।

সবজিটির ক্রমবর্ধমান দাম যখন কম আয়ের মানুষদের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে, তখন কৃষকদের লোকসান কমার আশাও করা হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে উৎপাদন খরচ কেজিপ্রতি ১৭ টাকা হয়েছে জানিয়ে গাইবান্ধার কৃষক সাকিউল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুনের শুরুতে প্রতি কেজি আলু নয় টাকায় বিক্রি করেছি। মাস শেষে তা বেড়ে হয় ১৩ টাকা।'

দাম না বাড়লে বছরের শেষে আর লোকসান গুনতে হবে বলে জানান তিনি।

'দাম বেড়ে যাওয়াটা ভালো খবর। তারপরও লোকসান হচ্ছে। দাম বাড়তে থাকলে আশা করছি কিছুটা মুনাফা হবে। তা না হলে আর্থিক ক্ষতি অনেক হবে।'

অনেক কৃষক এখনো আলুর ভালো দামের অপেক্ষা করছেন যাতে মুনাফা হয়।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বাবু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উৎপাদন খরচ তুলতে না পারায় অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী হিমাগার থেকে আলু ছাড়ছেন না। তারা ন্যায্যমূল্য পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন।'

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব বলছে—চলতি মৌসুমে দেশে আলুর গড় উৎপাদন খরচ ছিল প্রতি কেজি ১৪ টাকা। উত্তরাঞ্চলের কৃষকদের প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছিল ২০ টাকা।

কৃষি সচিব এমদাদ উল্লাহ জানান, কেজিপ্রতি আলুর দাম ৩৫ টাকার বেশি হলে সরকার বাজারে হস্তক্ষেপের বিষয়টি বিবেচনা করবে। এর আগে নয়।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্রেতাদের এমন দাম মেনে নিতে হবে যা কৃষকদের কিছুটা মুনাফার সুযোগ দেয়। কৃষকদের ফসলের ন্যূনতম দাম দিতে হবে।'

Comments

The Daily Star  | English
July Declaration: Where is the roadmap for our future journey?

July Declaration: Where is the roadmap for our future journey?

Denigration of our Liberation War will never be acceptable

10h ago