যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বোয়িং ও গম আমদানির দিকে ঝুঁকছে ঢাকা

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ছয় বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে বাংলাদেশ ১৪টি বোয়িং উড়োজাহাজ এবং প্রায় ৩ লাখ টন গম আমদানির পরিকল্পনা করেছে।
আগামী রোববার ঢাকায় গম আমদানির জন্য একটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে বাণিজ্য সহযোগিতার সূচনা হতে যাচ্ছে।'
বোয়িংয়ের সঙ্গে উড়োজাহাজ কেনার ব্যাপারে আলোচনা অনেক দূর এগিয়েছে, ডেলিভারির সময়সূচি তাদের উৎপাদন সক্ষমতার ওপর নির্ভর করছে। তবে উড়োজাহাজ ও গম আমদানির মোট মূল্যের পরিমাণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়ানোর এই উদ্যোগ এমন সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন বাংলাদেশ শুল্ক কমানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইতোমধ্যে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন, যা ভিয়েতনাম (২০ শতাংশ) ও ইন্দোনেশিয়ার (১৯ শতাংশ) চেয়ে বেশি।
এদিকে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা আগামী সপ্তাহে ওয়াশিংটনে তৃতীয় দফার আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। যেন আগামী ১ আগস্ট নতুন শুল্ক কার্যকর হওয়ার আগেই একটি পারস্পরিক চুক্তি করা যায়।
বাণিজ্য সচিব বলেন, 'আমরা সেখান থেকে আমদানি বাড়িয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছি।'
তিনি জানান, আলোচনার আগে গার্মেন্টস ও ওষুধ খাতের ব্যবসায়ী নেতারা এবং বাণিজ্য বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে তার মন্ত্রণালয় আলোচনা করেছে।
তবে, চুক্তি নিয়ে আর কোনো বিস্তারিত তথ্য জানাতে রাজি হননি বাণিজ্য সচিব।
সরকার আগামী দফার আলোচনায় বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, সম্প্রতি ব্যবসায়ীরা এই দাবি জানিয়েছিলেন। সরকারি পর্যায়ে আমদানির পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিনসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানিতে বেসরকারি খাতের আমদানিকারকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে।
বাণিজ্য ভারসাম্য আনার এই প্রচেষ্টা আগেও বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছিল। এপ্রিলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে চিঠি লিখে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম, এলএনজি ও সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর প্রস্তাব দেন। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনও একই ধরনের প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ারের কাছে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে ৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পণ্য রপ্তানি করে। দেশটি বাংলাদেশের একক বৃহত্তম রপ্তানি বাজার। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানির পরিমাণ ২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি। এই বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে রপ্তানিকারকদের মধ্যে, বিশেষ করে পোশাকে খাতে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা প্রতিযোগিতার বাজারে পিছিয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন।
পলিটিকোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বুধবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ১৫০টির বেশি দেশের কাছে একটি চিঠি পাঠাতে চান। ওই চিঠিতে জানিয়ে দেওয়া হবে কোন দেশকে কী হারে শুল্ক দিতে হবে।
পলিটিকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, হোয়াইট হাউসে বাহরাইনের ক্রাউন প্রিন্স সালমান বিন হামাদ আল খলিফার সঙ্গে এক বৈঠকের সময় ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, 'ওই গোষ্ঠীর সবার জন্য সবকিছু একই রকম হবে।'
ট্রাম্পের ভাষ্য, 'তারা বড় কোনো দেশ নয় এবং তাদের সঙ্গে খুব বেশি ব্যবসা হয় না। চীন, জাপানের মতো বড় দেশের সঙ্গে যেভাবে চুক্তি হয়েছে, সেটা আলাদা।'
বর্তমানে, এপ্রিল মাসে ট্রাম্প যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন, তা সব দেশের ওপরই প্রযোজ্য। ট্রাম্প আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে নতুন ভিত্তিগত শুল্ক ১৫ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে, যদিও নির্দিষ্ট হার তিনি উল্লেখ করেননি।
বর্তমানে সব দেশ এপ্রিলে ট্রাম্পের নির্ধারিত ১০ শতাংশ অতিরিক্ত বেসলাইন শুল্ক দিচ্ছে। ট্রাম্প পূর্বে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, নতুন বেসলাইন ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হতে পারে, কিন্তু তিনি শুল্ক হারের কথা উল্লেখ করেননি।
পলিটিকোর মতে, ট্রাম্প ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়াসহ দুই ডজনের মতো বাণিজ্য অংশীদারের কাছে নতুন শুল্ক হার জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছেন, যা ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
Comments