মার্কিন শুল্কে বিপর্যয়ের আশঙ্কা চট্টগ্রামের পোশাক কারখানায়

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্যবসা করা চট্টগ্রামের পোশাক কারখানার মালিকরা ৩৫ শতাংশ শুল্ক নিয়ে উদ্বিগ্ন। আগামী ১ আগস্ট থেকে এই শুল্কহার কার্যকর করতে যাচ্ছে হোয়াইট হাউস।
তবে তারা এখনো আশাবাদী যে—বাংলাদেশ সরকার শুল্ক কমিয়ে আনার বিষয়ে সফল আলোচনা করতে পারবে। অন্যথায় ভবিষ্যৎ 'অন্ধকার' বলেও মন্তব্য করেন ব্যবসায়ীরা।
আশির দশকে চট্টগ্রাম থেকে তৈরি পোশাক খাতের যাত্রা শুরু হলেও গত এক দশকে বন্দরনগরীতে কারখানার সংখ্যা কমেছে। অনেকগুলো হয় বন্ধ হয়ে গেছে বা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
বর্তমানে চট্টগ্রামে তিন শতাধিক পোশাক কারখানা চালু আছে।
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ), বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) ও রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (ইপিজেড) তথ্য বলছে—প্রায় ২০০ কারখানা সরাসরি বিদেশি ক্রেতাদের কাছ থেকে কার্যাদেশ নেয় এবং বাকিরা সাব-কন্ট্রাক্টে কাজ করে।
চট্টগ্রামের কারখানাগুলোর রপ্তানির পরিমাণ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি মোট রপ্তানির নয় শতাংশের বেশি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও বিজিএমইএর তথ্য অনুসারে—সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে পোশাক রপ্তানি হয়েছে ৩৯ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলার।
এটি ওই বছর দেশের মোট রপ্তানি ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের ৮১ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি হয় মোট পোশাক রপ্তানির ১৯ শতাংশের বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চট্টগ্রামের অধিকাংশ কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সঙ্গে সরাসরি ব্যবসা করছে।
চট্টগ্রামে এশিয়ান অ্যাপারেলস গ্রুপের ১৮ পোশাক কারখানা আছে। তাদের ৯৫ শতাংশ রপ্তানি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নির্ধারিত। ২০২৪ সালে মার্কিন বাজারে প্রতিষ্ঠানটির রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার।
'ঢাকার তুলনায় চট্টগ্রামের কারখানাগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতাদের সঙ্গে বেশি ব্যবসা করছে,' জানিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাকিফ আহমেদ সালাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মার্কিন ক্রেতারা আলোচনায় থাকা কার্যাদেশে অতিরিক্ত শুল্কের বড় অংশ কারখানার মালিকদের বহন করতে বলেছে।'
তিনি জানান—তারপরও, অনেক মার্কিন ক্রেতা আগে আলোচনা করা পণ্যগুলোর ক্রয়-আদেশ প্রকাশ করছে না। এসব পোশাকের উৎপাদন চলতি জুলাই বা আগামী আগস্টে শুরু হতে পারে। কারণ তারা চূড়ান্ত শুল্ক হারের জন্য অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
ক্রয়াদেশ না থাকায় তারা প্রয়োজনীয় এক্সেসরিজ ও কাঁচামাল কেনা শুরু করতে পারছেন না বলেও জানান তিনি।
বিজিএমইএর পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রামের অধিকাংশ পোশাক কারখানা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল।'
গত বছর তার ইন্ডিপেন্ডেন্ট অ্যাপারেলস লিমিটেড প্রায় ৬০ মিলিয়ন ডলারের স্পোর্টসওয়্যার ও কিডসওয়্যার রপ্তানি করে। এর ৯০ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়।
তিনি মনে করেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যদি ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৩০ শতাংশ শুল্ক দেয়, তাহলেও এসব কারখানার একটি বড় অংশ টিকে থাকতে পারবে না।'
তার ভাষ্য, বাংলাদেশের জন্য যদি মার্কিন শুল্ক ভিয়েতনামের মতো ২০ শতাংশে নামিয়ে আনা যায়, তাহলেই বাংলাদেশের কারখানাগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে পারবে।
'অন্যথায়, মার্কিন ক্রেতারা তাদের কার্যাদেশ ভিয়েতনাম বা ভারতে পাঠিয়ে দেবে। কারণ গত ১০ বছরে ভারতে এই খাতটি বিকশিত হয়েছে।'
তিনি দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে শুল্ক কমানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের (সিইপিজেড) ভেতরে ৬০ পোশাক কারখানার অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল।
অন্যতম শীর্ষ ডেনিম রপ্তানিকারক প্যাসিফিক জিনস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারখানাগুলো অবশ্যই তাৎক্ষণিক ক্ষতির মুখে পড়বে। বর্তমান দরের তুলনায় বাংলাদেশের পোশাকের দাম ৩৫ শতাংশ বেশি হবে।
তবে ভারত, পাকিস্তান, মিসর ও জর্ডানের মতো প্রতিযোগিতামূলক দেশগুলোর জন্য চূড়ান্ত শুল্ক নির্ধারণ না হওয়া পর্যন্ত সামগ্রিক প্রভাব মূল্যায়নে আরও সময় লাগবে বলে মনে করেন তিনি।
সৈয়দ এম তানভীর কারখানাগুলোকে আলাদাভাবে তাদের গ্রাহকদের ও আগামী দিনের সংকট মোকাবিলায় কৌশল নেওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
Comments