সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে ফলন ২৫ শতাংশ বাড়াতে পারে

নেদারল্যান্ডসের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জেটসে স্টরভোগেল। ছবি: সংগৃহীত
নেদারল্যান্ডসের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জেটসে স্টরভোগেল। ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় যথাযথ চাষ-পদ্ধতির মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষকেরা তাদের ফসলের (বিশেষত ধান) উৎপাদন অন্তত ২৫ শতাংশ বাড়াতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন এক ডাচ পরিবেশ ও মৃত্তিকা বিজ্ঞানী।

ফসলের উত্পাদন বাড়ানো ও ক্ষতি কমাতে এ ধরনের চাষাবাদে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে সাক্ষাত্কারে নেদারল্যান্ডসের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জেটসে স্টরভোগেল বলেন, 'মাটির অবস্থা, আবহাওয়া ও ফসলের মান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়ার পর সেই মোতাবেক চাষাবাদ করা দরকার।'

'বাংলাদেশে চাষাবাদ ক্রমাগত বাড়ছে। যেখানে পৃথিবীর অনেক দেশে কৃষি প্রবৃদ্ধি স্থবির বা কমছে।'

এই অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখতে ও অনুকূল করতে বাংলাদেশে সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ জরুরি। তার মতে, বাংলাদেশের বর্তমান ফসল উৎপাদন বিশেষ করে ধান উৎপাদন সক্ষমতার মাত্র ৫০ শতাংশ।

অধ্যাপক স্টরভোগেল বলেন, 'প্রতি হেক্টরে চার-পাঁচ টন ফসল উৎপাদিত হচ্ছে; ১০ টন উৎপাদন সম্ভব।' বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে যথাযথ নিয়মে চাষাবাদ করলে ফলন বেশি হবে, যোগ করেন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন অধ্যাপক স্টরভোগেল। তার মতে—যদি জমির একটি অংশে ফলন কম হয়, তাহলে সেখানে আরও সারের প্রয়োজন আছে কিনা তা শনাক্ত করতে দরকার যথাযথ কৃষি ব্যবস্থা।

কৃষকরা আরও দক্ষতার সঙ্গে চাষাবাদ করলে খরচ ও পরিবেশগত ক্ষতি কমতে পারে। পাশাপাশি, ফলন বাড়াতে পারে।

বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে বাড়তি জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। কৃষিকে অবশ্যই জলবায়ু পরিবর্তন ও বাজার পরিস্থিতি মোকাবিলায় সক্ষম করতে হবে।

তার দৃষ্টিতে, বাংলাদেশ কিছু অগ্রগতি অর্জন করেছে। বিশেষ করে, বীজ উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন গ্রহণের ক্ষেত্রে। এটাই সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রাথমিক পর্যায়।

বিশ্ব অনেক এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশ এখনো সঠিক পদ্ধতিতে চাষাবাদের প্রাথমিক পর্যায়ে আছে, বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তার ভাষ্য, 'অনেক দেশে মোবাইল ফোনে সাবস্ক্রিপশনের মাধ্যমে কৃষি পরামর্শের সঙ্গে কৃষি যন্ত্রপাতিও পাওয়া যায়।'

আফ্রিকার কেনিয়া ও প্রতিবেশী ভারতের মতো দেশে ছোট চাষিরা ইতোমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপকার পাচ্ছেন। বাংলাদেশের চাষিরাও উপকৃত হতে পারেন। স্মার্টফোন ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কৃষি খাতে জ্ঞান ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন হচ্ছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে—সারের অতিরিক্ত ব্যবহার। অনেক বাংলাদেশি কৃষক প্রতি হেক্টরে ৩০০ কেজিরও বেশি সার ব্যবহার করেন। হয়ত এত সারের প্রয়োজন নেই।

মাটি ও ফসলের পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে অনেক কৃষক সারের ব্যবহার ১০ থেকে ২৫ শতাংশ কমিয়ে আনতে পারেন। এতে খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি পরিবেশগত সুফল পাওয়া যাবে।

তিনি আরও বলেন, 'কীট ও আগাছানাশক ওষুধ অবশ্যই সঠিক সময়ে দিতে হবে। তথ্যের ভিত্তিতে চাষাবাদকে এগিয়ে নিতে হবে।'

'বাংলাদেশে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো ছোট কৃষকের সংখ্যা বেশি। উন্নত প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের টাকা তাদের থাকে না,' যোগ করেন অধ্যাপক স্টরভোগেল।

বাংলাদেশে জমির একটা বড় অংশ ইজারা দেওয়া হয়। জমির ওপর মালিকানা না থাকলে জমির যথাযথ যত্নে বিনিয়োগের ইচ্ছা কৃষকের নাও থাকতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তনকে বাংলাদেশের কৃষকদের বড় সংকট হিসেবে উল্লেখ করে তিনি এসব সমস্যা ধাপে ধাপে সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেন।

উগান্ডা, কেনিয়া ও ভিয়েতনামের মতো বাংলাদেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরামর্শ, কৃষি উপকরণ এমনকি মাটি পরীক্ষার সেবা দিয়ে কৃষি খাতে পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।

তাদেরকে অবশ্যই বীজ, সার, ফসল সুরক্ষা ও যন্ত্রপাতির বিষয়ে সমন্বয় করতে হবে।

'কেউ একা সফল হতে পারে না। সরকারি নীতির মাধ্যমে কর্মকর্তা, কৃষক, গবেষক ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে একত্রিত করতে হবে,' বলে মত দেন অধ্যাপক জেটসে স্টরভোগেল।

 

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Why are we trying to make the election uncertain?

Those who are working to prevent the election should question themselves as to how the people will be empowered without one.

12h ago