চীন ও ভারতীয় পণ্যে উচ্চ শুল্ক, বাংলাদেশের লাভ কী?

বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের বড় প্রতিদ্বন্দ্বী চীন ও ভারত। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এই দুটি দেশের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছে। এটিকে বাংলাদেশের জন্য আর্শীবাদ মনে করছেন পোশাক ব্যবসায়ীরা।
তবে ব্যবসায়ীরা সতর্ক করেছেন, এখনই খুশি হওয়ার কিছু নেই। কারণ এমন অনেক বিষয় আছে, যেগুলো এই সুবিধার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ ও চীনা পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। তবে এই দুই দেশের তুলনায় বাংলাদেশের আরোপিত শুল্কের পরিমাণ কম। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এতে বিদেশি ব্যবসায়ীরা চীন ও ভারতের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে বৈশ্বিক বাজারে নিজেদের অবস্থান আরও শক্ত করতে কিছুটা হলেও বাড়তি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ।
শনিবার এক অনুষ্ঠানে কথা বলার সময় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন জানান, দেশের রপ্তানিকারকরা এই শুল্ক সুবিধা পেতে পারেন।
তার অনুমান, ভারত ও চীন থেকে সরে আসা অর্ডার থেকে অতিরিক্ত ২ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত অর্ডার পেতে পারেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা।
তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন, এখনই কোনো আনুমানিক পরিসংখ্যান ঠিক করার সময় আসেনি। কারণ বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের এত বড় পরিবর্তন সামাল দেওয়ার মতো প্রস্তুতি নেই।
প্লামি ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক বলেন, 'এখনই খুশি হওয়ার সময় নয়, কারণ এখানে অনেক "যদি-কিন্তু" আছে। তাছাড়া, ট্রাম্প অনিশ্চিত স্বভাবের। যেকোনো সময় আলোচনার মাধ্যমে ভারত ও চীনের জন্য শুল্ক কমাতে পারেন।'
তার ভাষ্য, 'বাংলাদেশের বাজার এখনও এতটা শক্ত অবস্থানে পৌঁছায়নি যে, হঠাৎ করে ২ বিলিয়ন ডলারের নতুন অর্ডার, বিশেষ করে অন্য দেশ থেকে সরানো অর্ডার নিতে পারবে।'
'যদি পরিস্থিতি আমাদের পক্ষে থাকে, তাহলে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। সেক্ষেত্রে স্থানান্তরিত অর্ডারের পরিমাণ অনুমান করা ২ বিলিয়ন ডলারের বেশি হতে পারে,' বলেন তিনি।
স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, 'ইতোমধ্যেই কিছু অর্ডার বাংলাদেশে আসতে শুরু করেছে। শুল্ক নির্ধারণ হওয়ার পর থেকেই আমেরিকান ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতারা অর্ডার দিচ্ছে।'
তবে তিনি মনে করেন, 'সব অর্ডার একসঙ্গে পেয়ে যাবে, এমন আশা করা ঠিক হবে না।'
দেশীয় সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাংলাদেশে এখনো বড় পরিসরে উৎপাদনের সক্ষমতা সীমিত। অনেক কারখানায় উন্নত প্রযুক্তি নেই, যেটা ভালো মানের ও উচ্চমূল্যের অর্ডার সামলানোর জন্য দরকার।'
তিনি আরও বলেন, 'ভারত উচ্চমূল্যের পোশাক বানাতে পারায় ওই খাতের ব্যবসা হয়তো হারাবে না। তাই কেবল সাধারণ পোশাকের অর্ডারই ভারতের থেকে অন্য দেশে আসতে পারে।'
শিল্প নেতারা জানান, কিছু ভারতীয় রপ্তানিকারক তাদের মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে শুল্কের অংশ ভাগাভাগি করছে, যেন তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকে। কিছু ক্ষেত্রে ভারতীয় রপ্তানিকারক শুল্কের প্রায় ২০ শতাংশ বহন করছে এবং মার্কিন আমদানিকারক বাকি ৩০ শতাংশ বহন করছে। ফলে সবমিলিয়ে প্রভাব কমছে।
এছাড়া ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র আবার শুল্ক নিয়ে আলোচনা করতে পারে। ফলে ভারতের জন্য শুল্ক হার কমতেও পারে। তখন ভারতের থেকে একসঙ্গে অনেক অর্ডার অন্য দেশে চলে আসা সম্ভব হবে না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, 'এখনই বলা সম্ভব নয়, কতটা লাভবান হওয়া যাবে।'
তিনি আরও বলেন, 'কতটা ব্যবসা অন্য দেশে যাবে তার কোনো সঠিক তথ্য নেই। ২ বিলিয়ন ডলারের কমও হতে পারে, বেশিও হতে পারে। সবই নির্ভর করছে অন্যান্য দেশ ও বাজার পরিস্থিতির ওপর।'
'সুযোগ আছে, কিন্তু এটি এখনো শুরুর দিকে আছে। কয়েক মাস পরে বোঝা যাবে নতুন শুল্কের প্রভাব কেমন হবে,' যোগ করেন তিনি।
Comments