জল-পাহাড়ের কানায় কানায় প্রাণের ঐকতান

মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠের মায়া জড়ানো লোকগীতি ‘ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে’ শুনে ধরলা নদীর পাড়ের সেই বগার জন্য প্রাণ কাঁদেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।
ছবি: মনজুর মোরশেদ

মরমী শিল্পী আব্বাস উদ্দিনের কণ্ঠের মায়া জড়ানো লোকগীতি 'ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে' শুনে ধরলা নদীর পাড়ের সেই বগার জন্য প্রাণ কাঁদেনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর।

কিন্তু উপরের ছবিতে যে জাল পাতা দেখা যাচ্ছে, তা এসব বগা কিংবা বগীকে ধরার জন্য যে পাতা হয়নি তা নিশ্চিত।

বরং এই দৃশ্য জল-পাহাড়ের কাপ্তাই হ্রদে মানুষের সঙ্গে এসব ক্ষুদ্র প্রাণের সহাবস্থান ও সংহতিকেই স্পষ্ট করেছে। হ্রদের নীলাভ জলে মানুষের পাতা এই জাল ঘিরে বসে থাকা কিংবা উড়ে বেড়ানো বকগুলোও মাছের ভাগীদার।

জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কর্ণফুলী নদীতে বাঁধ দেওয়া হলে সৃষ্টি হয় এই কাপ্তাই হ্রদের। ১৯৫৬ সালে শুরু হয়ে ১৯৬২ সালে শেষ হয় বাঁধের নির্মাণকাজ। বাঁধের কারণে ৫৪ হাজার একর কৃষিজমি ডুবে যায়, যা ওই এলাকার মোট কৃষিজমির ৪০ শতাংশ।

রাঙামাটির বরকল উপজেলার বড় হরিণা এলাকা হচ্ছে বাংলাদেশ প্রান্তে হ্রদের সীমানা। এরপর ভারতের মিজোরামেও এর বিস্তৃতি আছে। মিজোরামের লুসাই পাহাড় থেকে কর্ণফুলীর উৎপত্তি। রাঙামাটির আট উপজেলা ও খাগড়াছড়ির মহালছড়ি এলাকাজুড়ে হ্রদটির অবস্থান। বর্তমানে হ্রদের আয়তন ৬৮ হাজার ৮০০ হেক্টর।

রাঙামাটির পর্যটনশিল্পের বড় বিকাশ হয়েছে এই হ্রদ ঘিরে। বছরে দেড় থেকে দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করেন কাপ্তাই হ্রদে। পর্যটনের পাশাপাশি মৎস্য খাতে এই হ্রদের গুরুত্বপূর্ণ অবদান আছে।

হ্রদের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। ২০২১-২২ অর্থবছরে কাপ্তাই হ্রদ থেকে ১১ কোটি ৬৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা রাজস্ব আয় করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

এ ছাড়া রাঙামাটি শহরের সঙ্গে জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে ছয়টির যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ জলাধার হিসেবে বিবেচিত এই হ্রদ।

মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের করা এক গবেষণার তথ্য অনুসারে, দখল-দূষণের কারণে কাপ্তাই লেকের মহাশোল, পিপলা শোল, বাঘাআইড়, নান্দিনা প্রভৃতি মাছ ইতিমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর বিলুপ্তির আশঙ্কায় আছে—সরপুঁটি, পাবদা, গুলসা, বাচুয়া ও বাটাসহ ১৮ প্রজাতির মাছ। ১৯৬৫-৬৬ সালে এই হ্রদে পাওয়া মাছের মধ্যে ৮১ শতাংশই ছিল কার্পজাতীয়। অথচ এখন ৯০ শতাংশই হলো চাপিলা ও কাচকি।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus promises election on time

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday reaffirmed his commitment to holding the 13th national election in the first half of February next year.

8h ago