আস্থা কমছে দেশি ব্যাংকে, আমানত বাড়ছে বিদেশি ব্যাংকে

বেশ কয়েকটি সুপরিচিত বিদেশি ব্যাংক তাদের স্থানীয় প্রতিযোগীদের তুলনায় আমানতের ওপর কম হারে সুদ প্রদান করে থাকে। তারপরও বছর ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো ১৪ শতাংশ আমানতের রেকর্ড করেছে।
আস্থা কমছে দেশি ব্যাংকে, আমানত বাড়ছে বিদেশি ব্যাংকে

দেশীয় ব্যাংকের ওপর আস্থা কমে যাওয়ায় অনেক আমানতকারী বিদেশি ব্যাংকে তাদের অর্থ স্থানান্তর করছেন। বাংলাদেশে পরিচালিত বিদেশি ব্যাংকগুলোতে ২০২২ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শেষ ৩ মাসে ৮.৫৭ শতাংশ আমানত বৃদ্ধি পেয়েছে; যা ২০১৮ সালের পর সর্বোচ্চ।
      
বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রৈমাসিক তফসিলি ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুসারে, ৯টি বিদেশি ব্যাংক বছরের শেষ ৩ মাসে ৭৩ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা আমানত করেছে। যেটি তার আগের ৩ মাসে ছিল ৬৮ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।

বেশ কয়েকটি সুপরিচিত বিদেশি ব্যাংক তাদের স্থানীয় প্রতিযোগীদের তুলনায় আমানতের ওপর কম হারে সুদ প্রদান করে থাকে। তারপরও বছর ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো ১৪ শতাংশ আমানতের রেকর্ড করেছে।

সিটি ব্যাংক এনএ'র বাংলাদেশের সাবেক সিইও মামুন রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থানীয় কিছু ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানে উচ্চ-ঝুঁকির কারণে কম মুনাফা থাকা সত্ত্বেও সচেতন আমানতকারীরা বিদেশি ব্যাংকে তাদের আমানত রাখতে পছন্দ করেছেন।'

বিদেশি ব্যাংকগুলোর পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আমানত প্রবৃদ্ধি পেয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে।

অক্টোবর-ডিসেম্বর প্রান্তিকে সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে  আমানতের পরিমাণ ০.৯৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ১ হাজার ৩২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংকসহ বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে আমানত প্রবৃদ্ধি হয়েছে শূন্য দশমিক ২২ শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের ইসলামী ব্যাংকিংয়ের ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন অনুসারে, কিছু শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকে ঋণ অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আস্থার সংকট সৃষ্টি হওয়ায় আমানতকারীদের একটি অংশ তহবিল উত্তোলনের ফলে ইসলামী ব্যাংকগুলো তাদের আমানতের ১১ হাজার ৪২৬ কোটি টাকা হারিয়েছে।

সার্বিকভাবে, তৃতীয় ত্রৈমাসিকের তুলনায় ২০২২ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে আমানত বেড়েছে ০.৭৪ শতাংশ। যেটি ১৫ লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ লাখ ৮৮ হাজার ১০ কোটি টাকায়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য থেকে দেখা যায়, ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ আমানতের প্রবৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নেমে আসে। যা এক বছর আগের ৯ দশমিক ৬ শতাংশের চেয়ে কম ছিল।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমানের ভাষ্য, গত বছর আমানত বৃদ্ধির পেছনে একাধিক কারণ প্রভাব ফেলেছিল।

তিনি বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বহু মানুষের কাছে যথেষ্ট অর্থ না থাকায় তাদের সঞ্চয়ের সামর্থ কমে যায়। এ ছাড়া, আমানতের সুদের হার মূল্যস্ফীতির হারের নিচে থাকায় মানুষের একটা অংশ ব্যাংকের বাইরে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজেছে।'

এ ছাড়া ৫ মাসের পতনের ধারাবাহিকতা ভেঙে ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ৮.৭৮ শতাংশ।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে পণ্যের উচ্চ মূল্যের কারণে আগস্ট মাসে এটি ১০ ​​বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯.৫২ শতাংশে পৌঁছায়।

ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩ মাসে আমানতের ওপর গড় সুদের হার ছিল ৪.২৪ শতাংশ। যা আগের বছরের ৪.০৬ শতাংশ থেকে সামান্য বেশি।

ই-মেইলে দ্য ডেইলি স্টারের এক প্রশ্নের জবাবে সিটি ব্যাংক এনএ'র বাংলাদেশ শাখা জানিয়েছে, ব্যাংকটির বৃহৎ বহুজাতিক ও শীর্ষ-স্তরের স্থানীয় করপোরেট গ্রাহক শ্রেণির সল্যুশন বেজড ডিপোজিটের মাধ্যমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহকের আমানত পরিচালনা করে।  

ব্যাংকটি আরও জানিয়েছে, 'বিশ্বের ৯৫টি দেশে আমাদের ইউনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনার কারণে সিটি ব্যাংক অনেক ক্লায়েন্টের একমাত্র ব্যাংকও। যা সময়ের সঙ্গে একটি শক্তিশালী আমানতের ভিত্তি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমানতকারীদের মধ্যে কিছুটা হলেও আস্থা কমেছে।'

'তবে এটিকে বিদেশি ব্যাংকের আমানত বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করা উচিত নয়। এমন হতে পারে, কিছু বিদেশি ব্যাংকের সামগ্রিক পোর্টফোলিও বেড়েছে, সবগুলো বিদেশি ব্যাংকের নয়।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েকটি বিদেশি ব্যাংকের প্রতিও মানুষের খুব বেশি আস্থা নেই।'

রাষ্ট্র পরিচালিত ব্যাংকগুলোতে আমানত বৃদ্ধির বিষয়ে অধ্যাপক হাবিব বলেন, 'অন্যান্য ক্ষেত্রে যখন অনিশ্চয়তা তৈরি হয় তখন রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলোর প্রতি মানুষের আস্থা আরও গভীর হয়।'

 

Comments