ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে প্রচলিত ব্যাংকগুলোও এগিয়ে আসছে

ইতোমধ্যে ১০টি বেসরকারি ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক ‘ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি’ গঠনে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে। এছাড়া, ব্যাংক এশিয়া ও ব্র্যাক ব্যাংক ২টি ডিজিটাল ব্যাংকের স্পন্সর হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক, ডিজিটাল ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বাংলাদেশের প্রচলিত ৬১টি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মধ্যে ১২টি ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কারণ, তারা দেশের প্রতিটি প্রান্তে ব্যবসার প্রসার ও প্রযুক্তিবান্ধব গ্রাহকদের ধরতে চায়।

ইতোমধ্যে ১০টি বেসরকারি ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংক 'ডিজি১০ ব্যাংক পিএলসি' গঠনে একটি কনসোর্টিয়াম গঠন করেছে। এছাড়া, এশিয়া ও ব্র্যাক ব্যাংক ২টি ডিজিটাল ব্যাংকের স্পন্সর হওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে।

ব্যাংকিং খাতের দুজন বিশ্লেষক ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে ব্যাংকগুলোর আগ্রহকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, তাদের এই সিদ্ধান্ত এই প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং ব্যাংকিং সুবিধাবঞ্চিত মানুষদের ব্যাংক সেবার আওতায় আনবে। এটি দেশের মানুষকে ব্যাংকিং সেবায় আনার লক্ষ্য অর্জন ও দেশকে কাগুজে মুদ্রাহীন অর্থনীতিতে পরিণত করতে সহায়তা করবে।

১০টি ব্যাংকের মধ্যে সিটি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক এবং পূবালী ব্যাংক ডিজিটাল ব্যাংকে বিনিয়োগের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড ও ট্রাস্ট ব্যাংক এই কনসোর্টিয়ামে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

এ বিষয়ে ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, 'আমরা বোর্ড থেকে অনুমোদন পেলে ডিজিটাল ব্যাংকে যাব। বাংলাদেশ ও বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছাতে এবং প্রযুক্তিপ্রেমী গ্রাহকের চাহিদা মেটাতে ডাচ বাংলা ডিজিটাল ব্যাংকের অংশ হতে চায়। বর্তমান প্রজন্ম প্রযুক্তিপ্রেমী, আমরা তাদের ডিজিটাল মাধ্যমে সেবা দিতে চাই।'

তিনি আরও বলেন, 'ডিজি১০ ব্যাংক অনুমোদন পেলে এবং প্রতিষ্ঠিত হলে গ্রাহকরা একসঙ্গে ১০টি ব্যাংকের সেবা নিতে পারবেন।'

চলতি বছরের জুনে ডিজিটাল ব্যাংক গঠন আগ্রহীদের কাছে লাইসেন্সের জন্য আবেদন আহ্বান করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ডিজিটাল ব্যাংকগুলোকে বৈদেশিক বাণিজ্য পরিচালনার জন্য ঋণ বা মাঝারি ও বৃহৎ শিল্পকে মেয়াদি ঋণ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে না। এছাড়া, প্রচলিত ব্যাংকগুলোকে এককভাবে ডিজিটাল ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুযোগ সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'ব্যাংকগুলোর কনসোর্টিয়াম আর্থিক অংশগ্রহণ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। এটি পেমেন্ট সিস্টেমকে শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিটাল মুদ্রা প্রচলনে সাহায্য করবে।'

ভার্চুয়াল ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রতিযোগিতার কারণে বাজার হারানোর ভয়ে ব্যাংকগুলো ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে করছে কিনা এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "না। এখানে অনেক সুযোগ আছে। আমরা মনে করি আমরা ব্যাংকগুলো এই খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ও নিয়মের পরিপালনে অবদান রাখতে পারব।'

ডিজিটাল ব্যাংক গঠনে ইচ্ছুক বিনিয়োগকারীদের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ১২৫ কোটি টাকা হতে হবে এবং মূলধন স্পন্সরদের কাছ থেকে আসতে হবে। নতুন এই প্রতিষ্ঠানকে অবশ্যই পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হতে হবে এবং প্রতিটি স্পন্সরের ন্যূনতম অংশীদারিত্ব হতে হবে ৫০ লাখ টাকা।

ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম বলেন, আর্থিক অংশগ্রহণ ও ডিজিটাল রূপান্তরের অংশ হিসেবে ট্রাস্ট ব্যাংক কনসোর্টিয়ামে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।

ব্র্যাক ব্যাংক বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংক পিএলসিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, কারণ এটি ইতোমধ্যে দেশের বৃহত্তম মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস সেবাদাতার শেয়ারহোল্ডার।

ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আরএফ হুসাইন বলেন, 'বিকাশ ডিজিটাল ব্যাংকে পরিণত হবে এটি স্বাভাবিক। আর শেয়ারহোল্ডার হিসেবে আমরা এর অংশ হতে চাই।'

তিনি বলেন, 'ডিজিটাল ব্যাংকগুলো বিশ্বে খুব বেশি সফল হয়নি। তবে তিনি বলেন, ডিজিটাল ব্যাংকগুলোতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে।'

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবীব বলেন, 'একটি ডিজিটাল ব্যাংক কতটা সফল হবে তা নিয়ে আশংকা আছে। তবে এখন পর্যন্ত বোঝা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে ও বাজার সম্প্রসারণের সম্মিলিতভাবে ডিজিটাল ব্যাংকের দিকে যাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'ডিজিটাল ব্যাংকগুলো ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদান এবং যারা এখনো আনুষ্ঠানিক আর্থিক সেবার আওতায় নেই, তাদের ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক কিছু করতে পারে। সুতরাং, যাদের প্ল্যাটফর্ম আছে, তারা যদি ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে আসে, তাহলে খারাপ কিছু হবে না। বরং তাদের অংশগ্রহণ প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করবে এবং জনগণ এর সুফল ভোগ করবে।'

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক সাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, ব্যাংকগুলোর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানানো উচিত। এর মাধ্যমে ক্লিয়ারিং ও ফান্ড ট্রান্সফার দ্রুততর হবে এবং সবাই উপকৃত হবে। তবে, এই মাধ্যমে সফলতার জন্য জনগণের মধ্যে সচেতনতা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনো প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থায় অভ্যস্ত নয়। ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে বিনিয়োগ রিটার্ন নিশ্চিত করবে কি না, তা দেখাও দরকার।

Comments