বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ২৩ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে। আগের মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।
খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

বেশ কয়েক মাস ধরেই চাপে আছে দেশের অর্থনীতি। এরসঙ্গে যোগ হয়েছে আগামী জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সংকটের আশঙ্কা। তাই ব্যাংকগুলো ঋণ কম দেওয়ার কৌশল নিয়েছে এবং ব্যবসায়ীরাও কম ঋণ নিচ্ছেন। ফলে, সাম্প্রতিক সময়ে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বেশ কমেছে

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশে। আগের মাসে যা ছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ।

২০২১ সালের অক্টোবরের পর চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এই হার সর্বনিম্ন। ২০২১ সালের অক্টোবরে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ।

সেপ্টেম্বরের এই প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ দশমিক ২১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।

অবশ্য বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্বাভাস দিয়েছে, চলতি অর্থবছর শেষে অর্থাৎ আগামী জুনে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ১১ শতাংশে দাঁড়াবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির ধীর গতির অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে আছে- সাম্প্রতিক সময়ে সুদ হারের সীমা প্রত্যাহারের পর ঋণের সুদ হার বৃদ্ধি, বেশিরভাগ ব্যাংকের তারল্য সংকট এবং ঋণ আদায়ে দুর্বলতা।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সম্প্রতি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ৯ শতাংশ সুদের সীমা প্রত্যাহারের পর ঋণের সুদের হার বাড়তে শুরু করায় ব্যাংক ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এবং ব্যবসায়ীরা ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ধীরগতির কৌশল অবলম্বন করেছেন।

চলতি বছরের জুনে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণার সময় বাংলাদেশ ব্যাংক এই সীমা প্রত্যাহার করে ঋণের সুদের হার নির্ধারণে নতুন ব্যবস্থা চালু করে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ব্যাংকগুলো 'ট্রেজারি বিলের ছয় মাসের চলমান গড় হারের' ওপর ৩ দশমিক ৫০ শতাংশীয় পয়েন্ট মার্জিন আরোপ করতে পারে, সংক্ষেপে যা স্মার্ট হিসেবে পরিচিত।

অক্টোবরে স্মার্ট ছিল ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ, যা নভেম্বরের জন্য প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধরে রাখতে সাশ্রয়ী উদ্যোগের কারণে আমদানি খরচ কমেছে।

মির্জা ইলিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমরা আশা করছি, আগামী বছর ঋণের চাহিদা বাড়বে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আকাশছোঁয়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদ হার বাড়ানোয় আগামী মাসগুলোতে ঋণ প্রবৃদ্ধি আরও কমবে।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গত মাসে নীতি সুদ হার ৭৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বাড়িয়ে ৭ দশমিক ২৫ শতাংশ করেছে।

সেপ্টেম্বরে গড় মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ৯ দশমিক ৬৩ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ৬ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি বেসরকারি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেছেন, রেকর্ড পরিমাণ খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা ক্রমাগত কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার ৩৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ১০ দশমিক ১১ শতাংশ।

তিনি আরও জানান, কয়েকটি ইসলামী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক এখন তারল্য সংকটের মুখে পড়েছে এবং কল মানি মার্কেট ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে তারল্য সহায়তা নিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

Comments