রেকর্ড মূলধন ঘাটতিতে ১৪ ব্যাংক

ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি
ছবি: স্টার ডিজিটাল গ্রফিক্স

চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ছয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকসহ ১৪ ব্যাংক রেকর্ড পরিমাণ মূলধন ঘাটতিতে পড়েছে। এটি মূলত ব্যাংকগুলোয় অনিয়মের কারণে সংকটময় আর্থিক পরিস্থিতির ইঙ্গিত দেয়।

মূলধন ঘাটতিতে পড়া ব্যাংকগুলো হলো—অগ্রণী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়া তৃতীয় প্রান্তিকে ব্যাংকগুলোর সম্মিলিত মূলধন ঘাটতি ছিল ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা।

সেপ্টেম্বরের এই হিসাবটি ছিল সর্বোচ্চ ঘাটতি। এর আগে ২০২১ সালের শেষ প্রান্তিকে সর্বোচ্চ ঘাটতি রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।

আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রক কাঠামো বাসেল থ্রি অনুসারে, ব্যাংকগুলোর জন্য ন্যূনতম মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর) ১০ দশমিক পাঁচ শতাংশ। এর পাশাপাশি অতিরিক্ত আড়াই শতাংশ রাখতে হয় নিরাপত্তা হিসেবে।

উপরে উল্লেখ করা ১৪টি ব্যাংক ন্যূনতম সিএআর বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে।

সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতের সিএআর ছিল ১১ দশমিক শূন্য আট শতাংশ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিবেদন ২০২২-এ বলা হয়েছে, দেশের ব্যাংকগুলো দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বনিম্ন সিএআর নিয়ে চলেছে।

গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে এই ১৪ ব্যাংকের অধিকাংশেরই মূলধন ঘাটতি বেড়েছে। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে আরও চার ব্যাংক।

এই চার ব্যাংক হলো—বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক এবং পাকিস্তানের হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের বাংলাদেশ কার্যক্রম।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৭০ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গত জুনে এটি ছিল ৮৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা।

সিটিজেন ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল ৯৫ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এটি তিন মাস আগে ছিল ৯৭ কোটি ১০ লাখ টাকা।

উভয় ব্যাংকই ঘাটতির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ন্যূনতম পরিশোধিত মূলধন ৪০০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৫০০ কোটি টাকা নির্ধারণকে দায়ী করেছে।

বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলধনের পরিমাণ না বাড়ানো হলে আমাদের ঘাটতি হতো না।'

হাবিব ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের ঘাটতি ছিল যথাক্রমে ৩৩ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও ৪৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ১৫ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ৮০৩ কোটি টাকা হয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শওকত আলী খান এ ঘাটতির জন্য খেলাপি ঋণকে দায়ী করেছেন।

তিনি বলেন, 'এখন খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা করছি। যখন এটা কমাতে পারব, তখন আমাদের মূলধন ঘাটতিও কমবে।'

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে অগ্রণী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ২৮ দশমিক ১৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৮২৮ কোটি টাকা এবং বেসিক ও জনতা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়েছে যথাক্রমে তিন হাজার ১৫০ কোটি টাকা ও তিন হাজার ২৯ কোটি টাকা।

একই সময়ে রূপালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি ছিল দুই হাজার ১২১ কোটি টাকা ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের ঘাটতি ছিল দুই হাজার ৪৭২ কোটি টাকা।

'রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো সাধারণ মানুষ ও সরকারকে বিনামূল্যে অনেক সেবা দেয়' উল্লেখ করে অগ্রণী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো যদি এসব সেবার জন্য টাকা নেয়, তাহলে মূলধন ঘাটতি থাকবে না।'

তিনি সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঘাটতি কমানোর উপায় বের করার পরামর্শ দেন।

এ দিকে, এ বছর তৃতীয় প্রান্তিকে সোনালী ব্যাংক ঘাটতি থেকে বেরিয়ে এসেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যানে আরও জানা যায়, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংকের ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে দুই হাজার ২৪ কোটি টাকা ও ৬০৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৪০২ কোটি টাকা। আইসিবি ইসলামী ব্যাংকের ঘাটতি ছিল এক হাজার ৮২৩ কোটি টাকা।

ব্যাংক কর্মকর্তারা মনে করছেন, ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতির অন্যতম প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, গত সেপ্টেম্বরে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ৩৯৭ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

Govt slashes heart stent prices by up to Tk 88,000

Health ministry revises rates for US-made coronary stents to ease patient costs

12m ago