বন্ধ হচ্ছে ৯ আর্থিক প্রতিষ্ঠান

দেশের আর্থিক খাতে প্রথমবারের মতো ৩৫টি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠান বন্ধ হতে যাচ্ছে। গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার জন্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
যে ৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হবে বলে জানা গেছে, সেগুলো হলো—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, পিপল'স লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে আর্থিক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা। তার মধ্যে ৫২ শতাংশ খেলাপি ঋণ এই ৯টি প্রতিষ্ঠানের।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই ৯টি প্রতিষ্ঠান লিকুইডেট করা হবে, সরকার নীতিগতভাবে এ বিষয়ে মত দিয়েছে।'
আগামী মাসেই ফাইন্যান্স কোম্পানি আইন-২০২৩ অনুযায়ী কিছু প্রতিষ্ঠানের লিকুইডেশন (বন্ধ করে দেওয়ার) প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
এই আইনে বলা আছে, সরকারের অনুমতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক হাইকোর্টে আবেদন করতে পারবে। কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান যদি আমানত, ঋণ বা ধার শোধ করতে না পারে, তবে কোম্পানি আইনেও তাদের রক্ষা করা যাবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, 'আমরা এটা করছি শুধু আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য। তাদের স্বার্থই আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার।'
লিকুইডেশন হবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক এজন্য লিকুইডেটর (প্রতিষ্ঠান বন্ধের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি/সংস্থা) নিয়োগ করবে বলে জানিয়েছেন গভর্নর।
তিনি আরও জানান, শেষ পর্যন্ত ৯টির বেশি ব্যাংক-বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান (এনবিএফআই) বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের শেষে পুরো খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ কেবল ১২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দখলে।
এর আগে জানুয়ারিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২০টি এনবিএফআইকে দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে (যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি) শনাক্ত করে এবং তাদের 'লাল তালিকায়' রাখে।
এই ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, হজ্জ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, প্রিমিয়ার লিজিং, প্রাইম ফাইন্যান্স, উত্তরা ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, পিপল'স লিজিং, ফার্স্ট ফাইন্যান্স, ইউনিয়ন ক্যাপিটাল, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, বিআইএফসি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স ও এফএএস ফাইন্যান্স।
এর আগে, বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়ে ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে জানাতে বলেছিল, কেন তাদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে না।
এই ২০টির মধ্যে ৯টি প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে বন্ধ করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, কারণ তাদের জবাব সন্তোষজনক ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, 'তাদের সব পরিকল্পনা গ্রহণযোগ্য ছিল না।'
তবে দ্য ডেইলি স্টার এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি। কারণ বেশিরভাগই প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছাড়াই চলছে। এছাড়া কিছু প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র পরিচালকের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
Comments