যে কারণে এটিএম থেকে সিআরএমের দিকে ঝুঁকছে ব্যাংকগুলো

সিআরএম, এটিএম, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
রয়টার্স ফাইল ফটো

দ্রুত ও সহজে টাকা তোলার সুবিধার জন্য আধুনিক ইলেকট্রনিক ব্যাংকিংয়ের সবচেয়ে পরিচিত মাধ্যম ছিল অটোমেটেড টেলার মেশিন (এটিএম)। একসময় ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ ও ব্যালেন্স দেখাসহ অন্যান্য ব্যাংকিং সেবার জন্য এটিএমের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল।

তবে, এখন বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিনের (সিআরএম) দিকে ঝুঁকছে। কারণ ব্যাংকগুলো সিআরএমের মাধ্যমে গ্রাহকদের টাকা জমা ও তোলার সুবিধা দিতে পারছে।

পাশাপাশি সিআরএম ব্যবহার করে ব্যাংকগুলো পরিচালন ব্যয় কমাতে পারছে। কারণ, এটিএমে টাকা শেষ হয়ে গেলে আবার নগদ টাকা রাখতে হয়। কিন্তু, সিআরএমে সেই ঝামেলা নেই। তাই এটিএম পরিচালনায় যে ব্যয় হতো সিআরএম সেই কমিয়েছে।

একই সময়ে মানুষ টাকা স্থানান্তর, বিল পরিশোধ ও অন্যান্য লেনদেনের জন্য ইলেকট্রনিক সেবার দিকে ঝুঁকছে। ফলে, নগদ লেনদেনের হার কমে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত দেশে প্রায় ১৩ হাজার ৭৩২টি এটিএম ছিল। একই বছরের নভেম্বর শেষে সেই সংখ্যা ১৩ হাজার ৪৩৭ টিতে নেমে আসে। কারণ, গ্রামীণ অঞ্চলে ব্যাংকগুলো তাদের এটিএমের সংখ্যা কমাতে শুরু করেছে।

অন্যদিকে, সাত বছর আগে বাংলাদেশে প্রথম সিআরএম চালু হয়। এরপর গত বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ৩ হাজার ৮৯৭টি সিআরএম বসিয়েছে এবং দিন দিন সিআরএমের ব্যবহার বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে সিটি ব্যাংক পিএলসির রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান অরূপ হায়দার বলেন, লেনদেনের জন্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) এখন লেনদেনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে। এতে নগদ টাকা তোলার প্রয়োজনীয়তা কমেছে এবং দেশ ক্যাশলেস লেনদেনের দিকে আরও এগিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এছাড়াও ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে এটিএমের বদলে সিআরএম ব্যবহার করছে। কারণ এর মাধ্যমে গ্রাহকরা একটি জায়গা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে টাকা জমা দিতে বা তুলতে পারে।

'এটিএমের মতো ব্যাংকগুলো ধীরে ধীরে নগদ জমা দেওয়ার মেশিন (সিডিএম) বন্ধ করে দিচ্ছে। কারণ এটিএম যেমন নগদ টাকা তোলার সুবিধা দেয়, একইভাবে সিডিএমের টাকা জমা ছাড়া তেমন কোনো কাজ নেই,' বলেন তিনি।

তিনি জানান, এছাড়া সিডিএমের মাধ্যমে জমা দেওয়া টাকা ব্যাংকের ক্যাশ অফিসার নিবন্ধন না করা পর্যন্ত গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে দেখা যায় না। যদিও এটিএম ও সিডিএমের তুলনায় সিআরএম বসাতে বেশি খরচ হয়, তবুও ব্যাংকগুলো সিআরএমকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে, কারণ সেখানে নতুন করে নগদ টাকা রাখার মতো পরিচালন ব্যয় কমে যায়।

তার ভাষ্য, 'এটিএমে টাকা রাখতে ব্যাংকগুলোর যেমন অনেক খরচ হয়, আবার বেশ সময়ও লাগে। কিন্তু সিআরএমের মাধ্যমে এই পরিচালন ব্যয় কমে যায়।'

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক পিএলসির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রিটেইল ব্যাংকিং বিভাগের প্রধান মো. শাফকাত হোসেন বলেন, 'টাকা জমা দেওয়া ও উত্তোলন উভয় সুবিধা থাকায় সিআরএমের সংখ্যা দিন দিন বাড়বে।'

'এতে ব্যাংকগুলোও লাভবান হচ্ছে, তাদের শাখাগুলোতে গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন কমে আসছে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'অন্যদিকে এটিএম পরিচালনার খরচ বেশি হওয়ায় কিছু ব্যাংক নিজস্ব এটিএম বসানোর পরিবর্তে গ্রাহকদের সেবা দিতে অন্য ব্যাংকের এটিএমের ওপর নির্ভর করছে।'

ব্র্যাক ব্যাংকের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিউল ইসলাম বলেন, 'কিছু বড় ব্যাংক তাদের এটিএমের সংখ্যা কমিয়ে দিচ্ছে। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে আমরা কোনো এটিএম বন্ধ করিনি। বরং আমরা এটিএম সমন্বিত সাবব্রাঞ্চ খুলছি।'

২০২৩ সালের মে'তে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) বাংলাদেশ ক্যাশলেস লেনদেন উত্সাহিত করতে এটিএম কমাতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত বেশ কিছু এটিএম বুথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এটিএম বন্ধ করার বিষয়ে এক ইমেইলে এসসিবি জানিয়েছিল, যেহেতু নগদ ও এটিএম প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছে এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৭ সালের মধ্যে ক্যাশলেস হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তাই তারাও একই পথ অনুসরণ করছে।

ডাচ্ বাংলা-ব্যাংক পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আবুল কাশেম মো. শিরিন বলেন, 'এটিএম/সিআরএমের মাধ্যমে নগদ টাকা তোলার চাহিদা আরও কিছুদিন অব্যাহত থাকবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এখনো পুরোপুরি ক্যাশলেস হতে প্রস্তুত নয়। তবে সিআরএমের ব্যবহার বাড়বে, তাই এটিএমের সংখ্যা আর হয়তো বাড়বে না।'

বর্তমানে সারাদেশে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক পিএলসির সাড়ে পাঁচ হাজার এটিএম বুথ ও দুই হাজার সিআরএম রয়েছে।

বেসরকারি ব্যাংকটি সম্প্রতি সব শাখায় সিআরএম বসানোর অংশ হিসেবে আরও তিন হাজার সিআরএম কেনার অর্ডার দিয়েছে।

(এই প্রতিবেদনটি ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন রবিউল কমল)

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

14h ago