ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগে যে যোগ্যতা-কর্তব্য নির্ধারণ করল বাংলাদেশ ব্যাংক

ডিজিটাল ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,

অনিয়ম ও কেলেঙ্কারিতে ভুগতে থাকা ব্যাংকিং খাতের সুশাসন ফেরাতে উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ন্যূনতম ও সর্বোচ্চ বয়স এবং অন্যান্য যোগ্যতা নির্ধারণ করে দিয়েছে।

বুধবার জারি করা এক নির্দেশনায় বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, স্বতন্ত্র পরিচালকদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ৪৫ বছর ও সর্বোচ্চ বয়স নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ বছর।

ব্যাংক পরিচালকদের ন্যূনতম বয়স ৩০ বছর নির্ধারণের এক সপ্তাহেরও কম সময় পর এই নির্দেশনা এলো।

বর্তমানে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে। এর পেছনে আছে কিছু ব্যাংকের ব্যাপক অনিয়ম, পরিচালকদের অযৌক্তিক হস্তক্ষেপ ও ক্রমবর্ধমান খেলাপি ঋণ। এসব কারণে ব্যাংকিং খাতের প্রতি গ্রাহকদের আস্থা কমে গেছে।

এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি রোডম্যাপ ঘোষণা করেছে। এই রোডম্যাপের উদ্দেশ্য ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে খেলাপি ঋণ ৮ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা ও ব্যাংক খাতের করপোরেট সুশাসন নিশ্চিত করা। রোডম্যাপ বাস্তবায়নে ১৭টি উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নতুন নীতিমালায় বলা হয়েছে, গ্রাহকদের আস্থা অর্জন ও তা ধরে রাখা ব্যাংকের জন্য অপরিহার্য। 'তাই শেয়ারহোল্ডার পরিচালকদের চেয়ে স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ।'

এতে বলা হয়, স্বতন্ত্র পরিচালকরা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাস্ট ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক আনিস এ খান নতুন নীতিমালাকে 'বিস্তারিত ও দীর্ঘ' বলে অভিহিত করেছেন।

তিনি বলেন, 'একটি নথিতে সব শর্তাবলী একসঙ্গে রাখাকে আমরা স্বাগত জানাই, এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা পাওয়া যাবে।'

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র পরিচালকদের ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায়ে অন্তত ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে অথবা পেশাগত অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এছাড়া, স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি, ব্যাংকিং, ফিন্যান্স, ব্যবসায় প্রশাসন, আইন ও হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি থাকতে হবে।

তবে, ডিজিটাল ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তিতে উচ্চশিক্ষাকে বাড়তি যোগ্যতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ব্যবসা, আইন ও প্রযুক্তি বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষক, ব্যাংকার এবং অর্থ, শিল্প, আইন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা স্বতন্ত্র পরিচালক হওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে পর্ষদে বসতে হলে ব্যাংকের প্রতি কোনো আগ্রহ থাকলে হবে না।

মনোনীতদের পরিবারের সদস্যরা কোম্পানিতে কোনো শেয়ারের মালিক হতে পারবেন না এবং কোনো ব্যাংকে কোনো লাভজনক পদে থাকতে পারবেন না।

একইভাবে, ব্যাংকগুলোর অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, এ ধরনের পরিচালক পদে বসা ব্যক্তিরা কোনো ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হননি বা কোনো জালিয়াতি, আর্থিক অপরাধ বা অন্যান্য অবৈধ কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।

যেসব ব্যক্তি কোনো মামলা বা নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য শাস্তি পেয়েছেন তারা অযোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।

বাংলাদেশে একটি ব্যাংকে সর্বোচ্চ ২০ জন পরিচালক থাকতে পারবেন, এর মধ্যে অন্তত তিনজন স্বতন্ত্র পরিচালক থাকতে হবে।

স্বতন্ত্র পরিচালকরা নিয়মিত ভাতাসহ প্রতি মাসে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পাবেন।

পরিচালকদের মতো তারাও বোর্ড সভা বা সহযোগী কমিটির সভায় উপস্থিতির জন্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা সম্মানী পাবেন, যা বর্তমানে প্রায় ৮ হাজার টাকা।

পরিচালকরা মাসে দুটি বোর্ড সভা, চারটি নির্বাহী কমিটির সভা, একটি অডিট কমিটির সভা এবং একটি ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় অংশগ্রহণের জন্য সম্মানী পাবেন।

স্বতন্ত্র পরিচালকদের দায়িত্ব

ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১ বা অন্য কোনো আইন লঙ্ঘন হলে তার তথ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাবেন স্বতন্ত্র পরিচালকরা।

তাকে বোর্ড সভায় অংশ নিতে হবে ও আলোচ্যসূচির বিষয়ে মতামত জানাতে হবে। তারা সবসময় আমানতকারী ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের (পরিচালক ব্যতীত) স্বার্থ রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।

Comments

The Daily Star  | English

CSA getting scrapped

The interim government yesterday decided in principle to repeal the Cyber Security Act which has been used to curb press freedom and suppress political dissent.

3h ago