কে হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী গভর্নর?

‘আমাদের একজন পেশাদার গভর্নর দরকার, যিনি সত্য বলবেন।’
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী গভর্নর কে হবেন
স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

গণঅভ্যুত্থানের মুখে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর চার দিন পর শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করেন আবদুর রউফ তালুকদার

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবদুর রউফ তালুকদার দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বাদশ গভর্নর ছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই সকলের মনে প্রশ্ন, দেশের এই অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সময়ে কে হবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ত্রয়োদশ গভর্নর?

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গত বৃহস্পতিবার শপথ নেন। এই সরকারের একজন উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদকে দেওয়া হয়েছে অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব।

গতকাল শনিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে এক বৈঠকের পর সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তারা আবদুর রউফ তালুকদারের পদত্যাগপত্র পেয়েছেন, তবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

শিল্পপতিরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য উপযুক্ত গভর্নর খুঁজে বের করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে সালেহউদ্দিন আহমেদকে।

তারা আরও বলছেন, দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিংখাতের বিষয়ে ব্যাপক জ্ঞানের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এমন কাউকে গভর্নর হিসেবে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

এ পর্যন্ত শীর্ষ অর্থনীতিবিদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ, অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ ও অধ্যাপক এবং বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের মতো বিশ্ব সংস্থায় কাজ করেছেন এমন অর্থনীতিবিদদের নাম উঠে এসেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, 'এর অর্থ হলো, সাবেক গভর্নর আবদুর রউফ তালুকদার বা ফজলে কবিরের মতো কোনো আমলাকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই পদের জন্য সুপারিশ করবে না।'

আবদুর রউফ তালুকদারকে ২০২২ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেইসময়ে বাংলাদেশ ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়ন দেখছিল।

তিনি তার মেয়াদে এই সমস্যাগুলো সঠিকভাবে মোকাবিলা করতে পারেননি। ফলে, মূল্যস্ফীতির চাপ বাড়তে থাকে এবং ব্যাংকগুলোতে সুশাসনের অবনতি হওয়ায় ব্যাংকিংখাতে খেলাপিঋণ ও অন্যান্য অনিয়ম বাড়তে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসাইন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর খুঁজতে সরকারকে তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে।'

'প্রথমত, নতুন গভর্নরকে সৎ হতে হবে। দ্বিতীয়ত, তার অবশ্যই দেশের আর্থিকখাত সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান থাকতে হবে। তাকে বেসরকারি খাত, পুঁজিবাজার ও বীমাখাত সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে। কারণ, এগুলো অর্থনীতির অত্যাবশ্যকীয় অংশ।'

ব্যাংককে আর্থিকখাতের প্রধান স্তম্ভ উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পরবর্তী গভর্নরের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হতে হবে, রাজনৈতিক প্রভাবসহ বিভিন্ন মহলের অযাচিত হস্তক্ষেপ মোকাবিলা করার সাহস।'

উপরন্তু, নতুন গভর্নরকে অবশ্যই ব্যাংকগুলো মালিক সম্পর্কে জানা থাকতে হবে।

তিনি বলেন, 'কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন মূলত প্রতিষ্ঠানের প্রধানের ওপর নির্ভর করছে। তাই, নতুন গভর্নরকেও স্বাধীনভাবে কাজ করতে হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'এমন একজন যোগ্য গভর্নর খুঁজে পাওয়া কঠিন। কিন্তু, একজন তরুণ ও উত্সাহী ব্যক্তিকেই ব্যাংকিংখাতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য মনোনীত করা যেতে পারে।'

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, 'আমাদের একজন পেশাদার গভর্নর দরকার, যিনি সত্য বলবেন।'

তিনি বলেন, 'ব্যাংকিংখাত এমন কারো পরিচালনা করা উচিত, যিনি আর্থিকখাতকে এগিয়ে নিতে যথেষ্ট সজাগ ও সাহসী ভূমিকা পালন করবেন।'

'নতুন গভর্নরকে দ্রুত গ্রহণযোগ্যতা পেতে যোগদানের পরপরই কিছু সাহসী ব্যবস্থা নিতে হবে। এখানে এমন একজনকে প্রয়োজন, যিনি এই পদে দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য কাজ করবেন,' যোগ করেন তিনি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, 'দেশের মধ্যে থেকে নতুন গভর্নর নির্বাচন করতে হবে, সেটা কিন্তু নয়। অন্যান্য দেশের মতো বিদেশ থেকেও গভর্নর নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।'

Comments