ব্যাংকগুলোর আয়ের অর্ধেক আসছে বন্ড-বিলের সুদ থেকে

ট্রেজারি বন্ড
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

ব্যাংকগুলোর আর্থিক বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা গেছে—প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়ে ঝুঁকিমুক্ত, বেশি সুদের ট্রেজারি বন্ডে বেশি বিনিয়োগ করায় গত বছর ট্রেজারি বন্ড থেকে তাদের আয় বেড়েছে ৪৫ শতাংশ বা ১২ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা।

এতে আরও দেখা গেছে—গত বছর ৫০টি ব্যাংক ট্রেজারি বন্ড থেকে সম্মিলিতভাবে আয় করেছে ৩৯ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। আগের বছর তা ছিল ২৭ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা।

সরকারের ট্রেজারি বন্ডগুলোকে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি এখন ব্যাংকগুলোর আয়ের মূল ভিত্তি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

দ্য ডেইলি স্টারের বিশ্লেষণে ৬২ তফসিলি ব্যাংকের মধ্যে ৫০টির কথা বলা হয়েছে। কারণ কয়েকটি ব্যাংক এখনো ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেনি। দেশের সবচেয়ে বড় শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ এই হিসাবের মধ্যে নেই।

২০২৪ সালে সুদ, বিনিয়োগ ও কমিশন থেকে এসব ব্যাংকের মোট আয় হয় ৭৮ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৫১ শতাংশই এসেছে ট্রেজারি বন্ড ও বিলের সুদ থেকে।

শীর্ষ ব্যাংক কর্মকর্তা ও বিনিয়োগ বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকে পড়ার প্রবণতা ব্যাংকগুলোর সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গির ইঙ্গিত দেয়। প্রচলিত পদ্ধতিতে ঋণ দেওয়ার তুলনায় নিশ্চিত আয়কে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

ব্যাংকগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করলেও গত বছর এ থেকে অধিকাংশেরই কোনো আয় হয়নি।

এই আর্থিক ক্ষতি না হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনিয়োগ থেকে আয় আরও বেশি হতো।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদহারের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নিলেও ২০২৪ সালে ৫০টি ব্যাংকের নূন্যতম সুদ আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ কমে ২১ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা হয়।

এটি ব্যাংকগুলোর মোট আয়ের ২৭ শতাংশ। কমিশন থেকে প্রতিষ্ঠানগুলোর আয় সাড়ে ছয় শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ৯৮২ কোটি টাকা।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান ডেইলি স্টারকে জানান, গত বছর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দেশের অর্থনৈতিক সংকট বেড়েছে।

তিনি বলেন, 'অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক বিনিয়োগকারী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন এবং অনেকে 'আত্মগোপন' করায় ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ কমেছে।

তার মতে, মুনাফা-নির্ভর ব্যাংকগুলো স্বাভাবিকভাবেই প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সরকারি বন্ডের দিকে ঝুঁকেছে।

'ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে কর আদায় কম হওয়ায় সরকারের বাজেট সহায়তাও বেশি প্রয়োজন,' বলে মনে করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বেশি মূলধন থাকা ব্যাংকগুলো সেই ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে।'

গত এক বছরে ট্রেজারি বন্ড ও বিলে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ প্রায় ৩২ শতাংশ বেড়ে ৯৮ হাজার ৯৪৮ কোটি টাকা হয়েছে। সেই বছরে এ ধরনের বন্ড থেকে আয় ১২ শতাংশে পৌঁছানোয় ১২ ব্যাংকের প্রত্যেকটি বন্ড থেকে এক হাজার কোটি টাকার বেশি আয় করেছে।

সোনালী ব্যাংক আয় করেছে ছয় হাজার ৪১৪ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক দুই হাজার ৮৮১ কোটি টাকা, অগ্রণী ব্যাংক দুই হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা, পূবালী ব্যাংক দুই হাজার ১৯ কোটি টাকা ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক প্রায় এক হাজার ৮০০ কোটি টাকা।

আনিস এ খানের ভাষ্য—ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে এক শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়, কিন্তু ট্রেজারি বন্ডের ক্ষেত্রে তা দরকার হয় না। তাই সরকারি বন্ডে বিনিয়োগ তাদের জন্য সবচেয়ে লাভজনক। অন্যদিকে, ঋণ দিলে ব্যাংকগুলোর পরিচালন খরচও বেড়ে যায়।

বিনিয়োগকারী পেশাজীবীদের প্ল্যাটফর্ম সিএফএ সোসাইটি বাংলাদেশের সভাপতি আসিফ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বন্ড কিনেছে। এটি যৌক্তিক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে তা প্রত্যাশিতও ছিল।'

এজ এএমসি লিমিটেডের চেয়ারম্যান আসিফ খান মনে করেন, এই ব্যবস্থার একাধিক প্রভাব আছে। এটি বেশি মুনাফা পেতে সহায়তা করে। অধিক মুনাফা ব্যাংকগুলোর মূলধনের ভিত্তি জোরদারে ভূমিকা রাখবে।

তার মতে, কয়েকটি ব্যাংক বিপুল পরিমাণ খেলাপি ঋণ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। বন্ড থেকে আয় বাড়লে ব্যাংকগুলোর লোকসান কমবে।

তিনি আশা করেন, বর্তমানে আমানতের হার ও ট্রেজারি বন্ডের আয়ের মধ্যে যে 'অস্বাভাবিক' পরিস্থিতি আছে তা চিরকাল থাকবে না।

এরই মধ্যে দেশের রিজার্ভ বাড়তে শুরু করেছে। গত সপ্তাহে বিপিএম-সিক্স গণনা অনুসারে রিজার্ভ ছিল ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি। এটি গত আড়াই বছরে সর্বোচ্চ।

তিনি বলেন, 'এর মানে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর আর্থিক অবস্থান শিগগির শিথিল হতে পারে। পাশাপাশি, ট্রেজারি বন্ডের সুদের হার কমতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

Ritu Porna brace takes Bangladesh to verge of history

Peter Butler's charges beat favourites Myanmar 2-1 in Asian Cup Qualifiers

1h ago