খুলনা

রোজার শুরুতেই বেগুন, শসা ও লেবুর দাম দ্বিগুণ, বাড়ল মাংসের দরও

খুলনার বাজার। ছবি: স্টার

রোজার শুরুতেই খুলনার বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ইফতারসামগ্রীর দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকা সত্ত্বেও বেগুন, শসা ও লেবুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

বর্তমানে খুলনার বাজারে বেগুন বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬৫-৮৫ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ২৫-৩০ টাকা। শসার দাম বেড়ে প্রতি কেজি ৬৫-৮৫ টাকা হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ৩০-৩৫ টাকা। লেবুর দামও প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতি চারটি লেবু বিক্রি হচ্ছিল ২০-৩০ টাকায়, যা বেড়ে এখন ৪০-৪৫ টাকা হয়েছে।

এছাড়া, মুরগির দামও বেড়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ২১০-২২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৮০-১৯০ টাকা। সোনালি মুরগির কেজি ৩২০-৩৪০ টাকা হয়েছে, যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ২৯০-৩১০ টাকা। লেয়ার মুরগির দামও বেড়ে ৩২৫ টাকা হয়েছে প্রতি কেজি হয়েছে, যা আগে ছিল ২৯০ টাকা।

নগরীর ময়লাপোতা সান্ধ্য বাজার ও বাস্তুহারা কাঁচা বাজারসহ খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) অন্তত চারটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও পণ্যগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি।

কেসিসি সান্ধ্য বাজারের বিক্রেতা রবিউল শেখ বলেন, 'সরবরাহ কম থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে রমজানে দাম ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে বলে আশা করি।'

বাস্তুহারা বাজারের বিক্রেতা আকবর মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, মাত্র দুইদিনের ব্যবধানে পাইকারি বাজারে দাম দ্বিগুণ হয়ে গেছে। 

'সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকাররা দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন, যার ফলে আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।'

বাস্তুহারা কলোনির বাসিন্দা মো. সাদ্দাম হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'সরকারি সংস্থাগুলোর মনিটরিং টিম কোথায়? আমাদের কষ্টের কোনো সমাধান নেই।'

'গরুর মাংসের দাম কেজিপ্রতি ৭০০ টাকা ছিল। কিন্তু কেসিসি তা আরও ৫০ টাকা বাড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে মাংস কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে রমজানের সময়।'

একইসঙ্গে সয়াবিন তেলের সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিও দেখা গেছে। বাজারে বোতলজাত তেল কম পাওয়া যাচ্ছে। সে কারণে বিক্রেতারা দাম বাড়িয়ে নিচ্ছেন।

নগরের নয় নম্বর ওয়ার্ডের বাস্তুহারা কাঁচা বাজারের দোকানদার আব্দুর রব ডেইলি স্টারকে বলেন, আমি সর্বশেষ গত ২৬ ফেব্রুয়ারি কয়েকটা বোতলজাত তেল পেয়েছিলাম। তারপরে আর কোনো তেল দেয়নি কোম্পানি থেকে। উপায় না দেখে এখন খোলা তেল বিক্রি করছি। খোলা সয়াবিন তেল প্রতি কেজি ২১০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আমিও ওই দামেই বিক্রি করছি।

নগরীর বয়রা বাজারে হাকিম সর্দার নামে এক দোকানদার ডেইলি স্টারকে বলেন, বোতলজাত দ্রব্য সয়াবিন তেল এক লিটার ১৯৫, দুই লিটার ৩৯০, পাঁচ লিটার ৯৬০ টাকায় বিক্রি করছি। কিন্তু সবাইকে দিতে পারছি না। কিছু নিজস্ব ক্রেতা আছে তাদের জন্য দিচ্ছি। কারণ অর্ডার করলেও পাওয়া যাচ্ছে না।

পলাশ দাস নামে একজন ক্রেতা বলেন, পাইকারি বাজারেও সরবরাহ সংকট দেখা যাচ্ছে। চাহিদা বেশি থাকায় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট তৈরি করছেন।

খুলনা নাগরিক সমাজের সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, 'রমজানের আগে দাম বাড়ানো যেন আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে। নৈতিকতার এতটাই অবক্ষয় হয়েছে যে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে মানুষের দুর্ভোগ বাড়াচ্ছে।'

'যদি কর্তৃপক্ষ বাজার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করত, তাহলে মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের মানুষ ন্যায্যমূল্যে পণ্য কিনতে পারত।'

এ বিষয়ে কেসিসির মার্কেট সুপার ভাইজার দিদারুল আলম বলেন, 'আমরা সারাবছর বাজার মনিটরিং করি। দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে একটি পর্যবেক্ষণ সেল গঠন করা হয়েছে, যারা নিয়মিত বাজার অভিযান চালাচ্ছে।'

জেলা সিনিয়র বিপণন কর্মকর্তা জিএম মহিউদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, বাজারের দ্রব্য নিয়ন্ত্রণের জন্য জেলা প্রশাসনে আমাদের একটি কমিটি আছে। সেখানে বিএসটিআই, খুলনা সিটি করপোরেশন, ভোক্তা অধিকারসহ বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা রয়েছেন। তারা বাজার মনিটরিংয়ের কাজ করছেন।

'তবে বর্তমানে সয়াবিন তেলের সংকট শুধু খুলনায় না সারাদেশে একই চিত্র। এটা আসলে আমাদের ওপর নির্ভর করে না। কোম্পানিগুলো সরবরাহ করলে দাম স্থিতিশীল থাকবে।'

Comments

The Daily Star  | English
health sector reform in Bangladesh

Health sector reform: 33 proposals set for implementation

The Health Ministry has selected 33 recommendations from the Health Sector Reform Commission as it seeks to begin implementing the much-needed reform process in the country’s health system.

15h ago