‘রোজার বাজার অসহনীয়’

‘যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে।’
কারওয়ান বাজারে খুচরা সবজির দোকান। ছবি: স্টার

রোজার বাজারে ইফতারে প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেশি থাকায় স্বস্তি মিলছে না নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের। রমজানের প্রথম দিনে বেশিরভাগ পণ্যের দামই কিছুটা বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জানা গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আজ সকাল ১১টার পর খুচরা পর্যায়ে দেশি শসা ১০০ টাকা কেজি দরে, হাইব্রিড শসা ৮০ টাকা, গোল বেগুন (সবুজ) ৪০-৫০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, টমেটো ৬০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

দুই দিন আগেও একই বাজারে দেশি শসার কেজি ৭০-৮০ টাকা, হাইব্রিডের শসা ৭০ টাকা, গোল বেগুন (সবুজ) ৩০-৩৫ টাকা, লম্বা বেগুন ৭০ টাকা, টমেটো ৪০-৫০ টাকা ও কাঁচা টমেটো ৩০ টাকা।

ছবি: স্টার

বড় আকারের এলাচ লেবুর দাম প্রতি পিস ২৫ টাকা, যা দুই দিন আগে ছিল ২০ টাকা। আর মাঝারি আকার ও গোল লেবুর পিস ১৫ টাকা। কাঁচামরিচের কেজি ৮০-৯০ টাকা। আর ধনিয়া পাতার ৮০ টাকা কেজি।

সবজির খুচরা বিক্রেতা মো. আশরাফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরবরাহ কম থাকায় পাইকারি পর্যায়ের দাম বেশি থাকলেও খুচরা পর্যায়ে দাম খুব বেশি বাড়েনি। কারণ আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশানুরূপ বিক্রি নেই।'

কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন গ্রিন রোডের বাসিন্দা ব্যবসায়ী শহীদুল আলম। ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'রোজা ঘিরে কয়েকদিন আগে থেকেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এখন সেটা অসহনীয় পর্যায়ে আছে। বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই। যে যার খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছে।'

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পশ্চিম রাজাবাজারের বাসিন্দা এক নারী বলছিলেন, বাজারে যাই ধরি, সেটারই দাম বেশি। সবকিছুর দাম বেশি। দুই দিন আগেও এক আঁটি ধনিয়া পাতা কিনেছি ১০ টাকায়। এখন সেটা ২০ টাকা দিয়ে কিনলাম।

'লিখে কী হবে? দাম তো আর কমবে না,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ছবি: স্টার

ফলের মধ্যে তরমুজের কেজি ৮০ টাকা, বলসুন্দরি বরই ১০০-১২০ টাকা ও আপেল বরই ১২০-১৪০ টাকা।

দুই দিন আগে তরমুজের দাম ছিল ৭০ টাকা, বলসুন্দরি বরই ১০০ টাকা ও আপেল বরই ৮০-১০০ টাকা।

প্রতিটি ফলের দামই ১০-২০ টাকা বেড়েছে বলে ডেইলি স্টারকে জানান মেহেদী ফল বিতানের মালিক মো. রফিক।

ছবি: স্টার

আজ কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে শবরি কলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায়, বাংলা কলা ১০০ টাকায়, চাঁপা (চম্পা) কলা ৭৫ টাকায় ও সাগর কলা ১৪০ টাকায়।

বিক্রেতারা জানান, দুই দিন আগে শবরি কলার ডজন ছিল ১০০-১২০ টাকা, বাংলা কলা ৮০ টাকা, চাঁপা ৬০ টাকা ও সাগর কলা ১২০ টাকা।

খুচরা পর্যায়ের কলা বিক্রেতা বাধন মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাইকারি বাজার থেকে আমরা যখন কিনি, তখন সেখান থেকেই খুচরা পর্যায়ের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আমরাও সেই দামেই বিক্রি করি।'

বেল প্রতি পিস আকারভেদে ১০০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। আকারে একটু ছোট হলে ৬০-৮০ টাকা। আর কদবেলের পিস ৫০ টাকা।

থাই পেয়ারার দাম ৮০-১০০ টাকা কেজি ও দেশি পেয়ারা ১০০-১২০ টাকা। দুই দিন আগে ছিল থাই পেয়ারার দাম ৭০-৯০ টাকা ও দেশি পেয়ারা ৮০-১০০ টাকা।

ছবি: স্টার

খেজুরের সর্বনিম্ন দাম কেজিপ্রতি ২০০ টাকা থেকে শুরু করে জাতভেদে প্রায় দুই হাজার টাকা পর্যন্ত আছে কারওয়ান বাজারে। এর মধ্যে জাহিদি খেজুরের দাম কেজিপ্রতি ২০০-২৮০ টাকা, খুরমা খেজুর ৩৫০-৪০০ টাকা, দাবাস খেজুর ৪৫০ টাকা, বরই খেজুর ৪৫০-৫০০ টাকা, মাশরুক খেজুর ৭০০-৮০০ টাকা, সৌদি মরিয়ম খেজুর ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা, আজুয়া খেজুর এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৪০০ টাকা, মেডজুল জাম্বু খেজুর এক হাজার ৭০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা।

আল্লার দান ফলবিতানের মালিক মো. হিরু ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, দুই দিনের ব্যবধানে খেজুরের দাম কিছুটা বেড়েছে। কমদামি খেজুরের দাম ১০-১৫ টাকা এবং দামি খেজুরের দাম ১০০ টাকাও বেড়েছে কেজিতে।

ছবি: স্টার

এদিকে দুইদিনের ব্যবধানে ছোলা, মসুর ডাল, খেসারি ডাল ও খোলা চিনির দাম বাড়েনি। আজ খুচরা পর্যায়ে ছোলার কেজি ১১০ টাকা, দেশি মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, ভারতীয় মসুর ডাল ১১০ টাকা, খেসারি ডাল ১৩০ টাকা ও খোলা চিনি ১৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা আব্দুল কাইয়ুমের ভাষ্য, 'গত কয়েকদিনে এই পণ্যগুলোর দাম আর বাড়েনি, একই আছে।'

ছবি: স্টার

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা নুরুল আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের নিত্যপণ্যের দামের যে অবস্থা, নিম্ন-মধ্যবিত্তরা এক ধরনের সংকটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তারা কোনো ধরনের স্বস্তি পাচ্ছে না।'

Comments