আনোয়ারায় চীনের অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির কাজে অগ্রগতি

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলায় চীনা অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল তৈরির কাজ শুরুর প্রায় এক দশক পরে তা আবার গতি পেয়েছে। কারণ, ঢাকা ও বেইজিং দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে চায়। ট্রাম্পের শুল্কনীতির খড়গ থেকে বাঁচতে চীনা নির্মাতারা বাংলাদেশে কারখানা সরানোর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছেন।

আনোয়ারায় অর্থনৈতিক অঞ্চলের জন্য নির্ধারিত ৭৮৪ একর জমির মধ্যে প্রায় ৬০ একর জমি বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

ইউটিলিটি সার্ভিসও চালু হচ্ছে। চট্টগ্রাম ওয়াসা পানি সরবরাহের পাইপলাইন বসিয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড শিল্পাঞ্চলের কাছাকাছি গ্যাস স্টেশন স্থাপন করেছে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) প্রশাসনিক ভবন ও দুটি সংযোগ সড়ক তৈরি করেছে।

কয়েকজন চীনা নির্মাতা শিল্পাঞ্চলটি পরিদর্শন করেছেন। কর্মকর্তাদের আশা, প্রায় ২০০ সম্ভাব্য চীনা বিনিয়োগকারী শিগগির এই অঞ্চলটি পরিদর্শন করবেন।

চীনা বিনিয়োগকারীদের সাম্প্রতিক সফরের কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চীন থেকে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগের আশা করা হচ্ছে।'

২০১৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরের পর ২০১৬ সালে শুরু হওয়া প্রকল্পটির অগ্রগতি মন্থর ছিল।

তবে গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় আমদানি বাজার চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারে নতুন করে আগ্রহ দেখায়।

বেজার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চীনা বিনিয়োগকারীরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। সম্ভাব্য বিনিয়োগকারীদের সফর তৈরি পোশাক ও গাড়ি তৈরি, ইলেকট্রনিক্স ও লজিস্টিকসের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সুযোগ আনতে পারে।'

তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকালে বেজা দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে। পরে চীনের ঋণের আংশিক অর্থায়নে প্রথম ধাপের জন্য ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় বাংলাদেশ সরকার।

চুক্তি অনুসারে—চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডকে ডেভেলপার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে ইজারার বিষয়টি অমীমাংসিত থাকায় ও উন্নয়ন চুক্তির কারণে অর্থনৈতিক অঞ্চলের অগ্রগতি থেমে যায়। এর ফলে ২০২২ সালের এপ্রিলে বেজা এর অংশীদারিত্ব বাতিল করে।

২০২২ সালের জুলাইয়ে চায়না রোড অ্যান্ড ব্রিজ কর্পোরেশনকে নতুন ডেভেলপার হিসেবে নেওয়া হয়। বেজা প্রকল্পটি আবার চালুর জন্য সহযোগিতা চুক্তি সই করে।

ঢাকা থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দক্ষিণে এই অর্থনৈতিক অঞ্চলটি দেড় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ আকর্ষণ করতে পারে। এখানে দুই লাখের বেশি মানুষের কাজের সুযোগ হতে পারে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলে কার্যক্রম পরিচালনা ও তদারকির জন্য 'স্পেশাল পারপাস কোম্পানি' গঠন করা হবে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কর্ণফুলী টানেল হয়ে কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলের সঙ্গে সংযোগ সড়কের জন্য দরপত্র আহ্বান করছে।

প্রাথমিক পর্যালোচনার জন্য বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সামনে তা তোলা হতে পারে।

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কয়েকজন চীনা বিনিয়োগকারী অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম ধাপে কারখানা গড়ার পরিকল্পনা করছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'আমরা ডেভেলপার চুক্তি চূড়ান্ত করতে কাজ করছি। চুক্তি সই হলে নির্মাণ কাজ শুরু হবে। দুই বছর লাগতে পারে।'

তিনি আরও জানান যে কয়েকজন বিনিয়োগকারী উন্নয়ন পর্যায়ের প্রথম দিকে কারখানা তৈরির কাজ শুরু করতে পারে। কাজের অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলবে।

এ দিকে, চীনা সহায়তাপুষ্ট চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় চাঁদপুর অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ প্রকল্পটিও জিটুজি কাঠামোর আওতায় এগিয়ে যাচ্ছে।

পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন অব চায়না লিমিটেড (পাওয়ারচায়না) মতলবের একটি চরে প্রস্তাবিত তিন হাজার ৩৮ একর জায়গায় অর্থনৈতিক অঞ্চলটি গড়ে তুলবে।

বর্তমানে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে।

অর্থনৈতিক অঞ্চলটি মূল ভূখণ্ড থেকে একটু দূরে মেঘনার চরে থাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হলে প্রস্তাবটি একনেকে জমা দেওয়া হবে।

Comments

The Daily Star  | English
future of bangladesh after banning awami league

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

14h ago