১৮ কোটি টাকার বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী এখন কাশবন

বরগুনা বিসিক
প্লটের উচ্চমূল্যের কারণে প্লট বরাদ্দ নিতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ না থাকায় বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী কাশবনে পরিণত হয়েছে। ছবি: স্টার

প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বরগুনা বিসিক শিল্পনগরী এখন কাশবন। প্লটের উচ্চমূল্যের কারণে প্লট বরাদ্দ নিতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ নেই।

শিল্পনগরীর ৬১ প্লটের মধ্যে গত ২ বছরে মাত্র ৮টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা। বাকি প্লটগুলোয় জন্মেছে কাশবন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেই এলাকাটি মাদকাসক্তদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয়েছে।

বরগুনার বিসিক সূত্র দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে, ২০১১ সালে শিল্প মন্ত্রণালয় বরগুনায় শিল্পনগরী স্থাপনে ৭ কোটি ৮ লাখ টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয়।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে জেলা শহরের ক্রোক এলাকায় ১০ দশমিক ২০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিসিককে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন।

নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় ২০১৬ সাল পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয় ১১ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

ঠিকাদার বর্ধিত মেয়াদেও কাজ শেষ করতে না পারায় ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। ব্যয় বেড়ে হয় ১৮ কোটি ৮ লাখ টাকা।

এরও ২ বছর পর ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ।

বরাদ্দের জন্য 'এ', 'বি' ও 'সি' ক্যাটাগরিতে মোট ৬১ প্লট প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে 'এ' টাইপের ৬ হাজার বর্গফুটের ২৭টি, 'বি' টাইপের ৪ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ১৯টি ও 'সি' টাইপে ৩ হাজার ৫০০ বর্গফুটের ১৫টি প্লট রয়েছে।

গত ২ বছরে মাত্র ৮টি প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তারা।

বরগুনা শহরের বাসিন্দা মীর খায়রুল আহসান, ইকবাল হোসেন ও ওয়ালী উল্লাহ প্লট বরাদ্দ নিয়েও টাকা পরিশোধ করেননি। তাদের প্লট বাতিল করেছে বিসিক কর্তৃপক্ষ।

মীর খায়রুল আহসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্লটের দাম মাত্রাতিরিক্ত নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতি শতাংশ জমির দাম ২ লাখ টাকা। "এ" টাইপের প্লটের দাম পড়ছে প্রায় ২৭ লাখ টাকা। এতো টাকা দিয়ে জমি নিয়ে ভবন নির্মাণ এরপর শিল্পকারখানা স্থাপন, উৎপাদন ও কর্মচারী খরচ দিয়ে ব্যবসায় লাভ করা কঠিন।'

প্লট বরাদ্দ পাওয়া অপর উদ্যোক্তা সাব্বির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্লট বরাদ্দ নেওয়ার পর আমি অবকাঠামো নির্মাণ করেছি। এখানে নির্বিঘ্নে পণ্য উৎপাদন করা যাবে বলে আশা করছি। ব্যবসায় লাভ হবে।'

বিসিক বরগুনা কার্যালয়ের উপব্যবস্থাপক কাজী তোফাজ্জেল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, '১৬ জনকে ২০টি প্লট বরাদ্দ দিয়েছিলাম। গত জুনের মধ্যে ডাউন পেমেন্ট দিতে ব্যর্থ হওয়ায় ১৬ প্লটের বরাদ্দ বাতিল করা হয়।'

'আরও ১৩ জনকে ১৬ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এখন পর্যন্ত ৩ জন ৪টি প্লটের মূল্য পরিশোধ করেছেন। বাকি ১২ জনের প্লট বাতিল করা হয়েছে। যে ৮ জন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাদের একজন অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শেষ করেছেন।'

প্লটের দাম নিয়ে ব্যবসায়ীদের আপত্তির বিষয়ে তোফাজ্জেল বলেন, 'প্রকল্পের ব্যয়ের ওপর প্লটের মূল্য নির্ধারণ করা হয়।'

প্লট নিয়ে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আগ্রহ না থাকার অভিযোগ প্রসঙ্গে এই কর্মকর্তা বলেন, 'আগ্রহ সৃষ্টির জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসক, বরগুনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করছি। আশা করছি, এ বছরের মধ্যে অর্ধেক প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাবে।'

জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির বরগুনা জেলার সভাপতি আবদুর রশীদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। বিসিকে শিল্পকারখানা স্থাপনে তাদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা চালাচ্ছি। আশা করি, প্লটগুলো দ্রুত বরাদ্দ নিয়ে উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করে উৎপাদন শুরু করবেন।'

বরগুনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবীর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেলার মানুষের জীবিকার মাধ্যম কৃষি ও মৎস্য। এখানে এ জাতীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। জেলার বাইরের উদ্যোক্তা এগিয়ে এলে আমরা তাদের সহায়তা দেব।'

জেলা প্রশাসক ও বিসিক শিল্পনগরী বরগুনার সভাপতি হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীদের সংগঠন, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতির নেতা এবং শিল্প উদ্যোক্তাদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছি। আশা করছি, এ বছরের শেষে আরও বেশ কিছু প্লট বরাদ্দ দেওয়া যাবে। আগামী জুনের মধ্যে সব প্লটই বরাদ্দ হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

S Alam, associates laundered money thru shell firms

Mohammed Saiful Alam and his family have acquired vast wealth at home and abroad, using money siphoned off through loans taken in the name of front companies

10h ago