তাঁতপল্লিতে ঈদের ব্যস্ততা, আশানুরূপ বিক্রি নেই

ঈদুল ফিতর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, তাঁতপল্লি, তাঁত,
ঈদকে সামনে রেখে কর্মচঞ্চল তাঁতপল্লি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

প্রতিবারের মতো এবারও ঈদুল ফিতরের আগে পাবনা ও সিরাজগঞ্জের তাঁতপল্লিতে ব্যস্ততা বেড়েছে। তবে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবছরও তারা আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছেন না।

পাবনার আতাইকুলা তাঁত কাপড়ের পাইকারি ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অন্যান্য বছর ঈদের আগে প্রতিটি হাটে প্রায় ৪-৫ লাখ টাকার কাপড় বিক্রি হতো। কিন্তু, এ বছর কোনো হাটে ১ থেকে ১.৫ লাখ টাকার বেশি কাপড় বিক্রি করতে পারিনি।'

'সাধারণত শবেবরাতের পর থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা পাবনা ও সিরাজগঞ্জের পাইকারি কাপড়ের হাটে ভিড় জমায়। এ বছর শুরুতে কিছু কম ক্রেতা এলেও ১০ রোজার পর পাইকারদের উপস্থিতি বেড়েছে। তবে, এখনো আশানুরূপ বিক্রির দেখা পাননি ব্যবসায়ীরা,' বলেন তিনি।

এই ব্যবসায়ী জানান, এ বছর ঈদের আগে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে যেদিন, সেদিনও ২ লাখ টাকার বেশি বিক্রি হয়নি।

একই হাটের আরেক পাইকারি ব্যবসায়ী মো. আরিফ হোসেন বলেন, 'গত বছর এ সময় কম দামের অনেক শাড়ি বিক্রি হয়েছে। এ বছর শাড়ির দাম কিছুটা বেড়েছে, এছাড়া নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে শাড়ি কেনার প্রবণতা কম দেখা গেছে।'

ঈদুল ফিতর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, তাঁতপল্লি, তাঁত,
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবছরও তারা আশানুরূপ ব্যবসা করতে পারছে না। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

তিনি আরও বলেন, '৩৮০-৪২০ টাকা দামের শাড়ি এবার প্রায় ৫০০ টাকার কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে। প্রতিটি শাড়িতে অন্তত ৮০- ১০০ টাকা দাম বেড়েছে।'

সিরাজগঞ্জের শীর্ষস্থানীয় তাঁত ব্যবসায়ী মো. হায়দার আলি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও এনায়েতপুরে দেশের অন্যতম বৃহত্তম তাঁত কাপড়ের পাইকারি বাজারেও বিক্রির পরিমাণ অন্যান্য বছরের চেয়ে অনেক কম। প্রতি শাহজাদপুর তাঁত কাপড়ের প্রতি হাটে প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাপড় বেচাকেনা হতো। তবে, এ বছর ঈদের হাটে বিক্রি প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কমেছে।'

তবে, বিক্রি কমলেও পাইকার ব্যবসায়ীদের ঘরে জমে থাকা পুরনো কাপড়ের প্রায় পুরোটাই বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানান তিনি।

তবে তিনি দাবি করেন, এ বছর যে ব্যবসা হচ্ছে তা করোনার সময়ের চেয়েও অনেক কম। করোনার সময় কাপড়ের দাম অনেক কম ছিল বলে বেচাকেনা ভালো ছিল।

তাঁতিরা জানান, কাপড়ের কাঁচামালের দাম আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে, উৎপাদনের খরচের তুলনায় দাম বৃদ্ধি কম বলে জানান তারা।

পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি কারিগরপাড়ার তাঁত কারখানা মালিক মো. শাহিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৮০ কাউনট সুতা ২ বছর আগে ১৮-২০ হাজার টাকায় পাওয়া গেলেও এখন প্রতি বাণ্ডিল (৪৫ কেজি) ২৮-৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, রঙ ও ক্যামিকেলের দাম প্রায় দিগুণ হয়েছে এবং কারিগরি খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে কাপড়ের উৎপাদন খরচ বেড়েছে অনেক, কিন্তু দাম বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ। তাই, কাপড় তৈরি করে খুব বেশি লাভ হচ্ছে না।'

ঈদুল ফিতর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, তাঁতপল্লি, তাঁত,
তাঁতিরা জানান, কাপড়ের কাঁচামালের দাম আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় কাপড়ের দাম কিছুটা বেড়েছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

লাভ তুলনামূলক কম হলেও তাঁতি সম্প্রদায়ের পৈত্রিক পেশা বাঁচিয়ে রাখতে তাঁতিরা তাঁত চালাচ্ছেন বলে জানান তিনি।

শাহিনের নিজের ৪টি তাঁত আছে এবং আরও ২০টি তাঁত ভাড়া নিয়ে চালাচ্ছেন তিনি। শাহিন জানান, গত বছর অর্ধেক রোজার মধ্যে তিনি প্রায় ৩ হাজার লুঙ্গি বিক্রি করেছিলেন। কিন্তু, এ বছর এখনো ২ হাজারের বেশি লুঙ্গি বিক্রি করতে পারেননি। তবে, চাহিদা কম থাকলেও পুরোদমে কাপড় তৈরি করছেন তিনি।

একই এলাকার প্রান্তিক তাঁতি শফিউল ইসলাম ও তার ভাই আতিকুর রহমান ৮টি তাঁত চলাচ্ছেন। ঈদ উপলক্ষে সবগুলো তাঁত চালু রেখে প্রতি সপ্তাহে ৮০০ লুঙ্গি তৈরি করছেন তারা। ঈদের আগে বড় ব্যবসার আশা করছেন তারা।

বাংলাদেশ হ্যান্ডলুম ও পাওয়ারলুম অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম সংগঠক হায়দার আলি বলেন, 'পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় এক সময় প্রায় ৫-৬ লাখ তাঁত চালু থাকলেও নানা সংকটে অনেকগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। এখন এ ২ জেলায় ৪ লাখ তাঁত চালু আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

7h ago