অর্ধেকে নেমে এসেছে স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন

বিটিআরসি, হ্যান্ডসেট,
ফাইল ফটো

চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে স্থানীয় হ্যান্ডসেট উৎপাদন কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। একই সমেয় হ্যান্ডসেটের বিক্রি কমেছে ৪২ শতাংশ।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত দেশীয় নির্মাতারা ৯৬ লাখ হ্যান্ডসেট উৎপাদন করেছেন, যা আগের বছরের একই সময়ের ১ কোটি ৮৫ লাখের চেয়ে ৪৮ শতাংশ কম।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের প্রথমার্ধে স্মার্টফোন বিক্রি ৪২ শতাংশ কমে ৩৩ লাখে দাঁড়িয়েছে।

এদিকে ফিচার ফোনের বিক্রি গত বছরের তুলনায় ৪০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪৬ লাখে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া, ডলার ঘাটতির কারণে এলসি খোলা কঠিন হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে এই শিল্পের স্থানীয় উৎপাদনে ভ্যাট বাড়িয়েছে সরকার। এসব কারণে স্থানীয়ভাবে উত্পাদিত হ্যান্ডসেটের দাম বেড়েছে।

এছাড়াও, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অবৈধভাবে হ্যান্ডসেট আমদানি করে বাজারে বিক্রি করছে। এজন্য তাদের যেহেতু ভ্যাট দিতে হয় না, তাই তারা তুলনামূলক কম দামে এসব হ্যান্ডসেট বিক্রি করতে পারেন। এতে অনেক গ্রাহক এসব হ্যান্ডসেট কিনতে আগ্রহী হন।

মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি রিজওয়ানুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাজারে মন্দার মূল কারণ হলো গ্রে মার্কেটের সম্প্রসারণ। গত দুই মাসে কিছুটা বিক্রি বাড়লেও তা আশানুরূপ ছিল না।'

তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু এখন সবার অর্থতৈনিক অবস্থার অবনতি হয়েছে, তাই খুব প্রয়োজন না হলে মানুষ হ্যান্ডসেট কিনছেন না। এ কারণে সাম্প্রতিক সময়ে হ্যান্ডসেটের বিক্রি আরও কমেছে। এর আগে, গ্রাহকরা নিয়মিত ফোন কিনতেন। কিন্তু, এখন চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে মানুষ অত্যাবশ্যকীয় প্রয়োজনগুলোকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন।'

২০১৭-১৮ অর্থবছরে সরকারের কর সুবিধার সহায়তায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে হ্যান্ডসেটের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। এরপর দেশে ১৫টি প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়, ফলে প্রায় ১৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।

গত অর্থবছরের আগে স্মার্টফোন আমদানিতে প্রায় ৫৮ শতাংশ কর দিতে হতো এবং স্থানীয়ভাবে সংযোজিত ও উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ওপর কর দিতে হতো ১৫ থেকে ২০ শতাংশ। কিন্তু, এখন তা বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কারণ কারখানা থেকে শুরু করে পরিবেশক ও খুচরা বিক্রেতাদের ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে।

আর উৎপাদকদের জন্য আরেকটি ধাক্কা হলো রাজস্ব কর্তৃপক্ষ উৎপাদন পর্যায়ে আরও ভ্যাট আরোপের প্রস্তাব দিয়েছে। আগামী অর্থবছর থেকে সম্পূর্ণ স্থানীয়ভাবে তৈরি যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো ২ শতাংশ ভ্যাট প্রযোজ্য হবে।

এছাড়া স্থানীয়ভাবে তৈরি কমপক্ষে দুটি উপাদান দিয়ে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ওপর প্রযোজ্য ভ্যাট ৩ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে। একইভাবে আমদানি যন্ত্রাংশ দিয়ে সংযোজিত হ্যান্ডসেটের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়েছে।

এ অবস্থায় কর কমানো অসম্ভব মনে হলে গ্রে মার্কেট নির্মূলে বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছেন শিল্প সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয় স্মার্টফোন উত্পাদন শিল্পকে সুরক্ষিত করার সমাধান হলো ন্যাশনাল ইকুপমেন্ট আইডেনটিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) চালু করা

অবশ্য ২০২১ সালে বিটিআরসি গ্রাহকের হ্যান্ডসেটের আইএমইআই অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে দেশে বৈধ মোবাইল ডিভাইসের ব্যবহার নিশ্চিত করতে এনইআইআর সিস্টেম চালু করেছিল। কিন্তু নকল, অননুমোদিত বা ক্লোন হ্যান্ডসেট ব্লক করার মতো প্রধান ফাংশনগুলো এখনো কাজ করছে না

এর আগে স্যামসাংয়ের স্থানীয় অংশীদার ফেয়ার ইলেকট্রনিক্সের চিফ মার্কেটিং অফিসার মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, 'এনইআইআর স্থাপনে বাংলাদেশ অগ্রণী হলেও, বাংলাদেশের আগে অন্যান্য দেশ এটি বাস্তবায়ন করছে। যেমন- পাকিস্তান ও নেপাল অবৈধ বাণিজ্য রোধ এবং স্থানীয় উত্পাদনে সহায়তা করতে এনইআইআর পরিচালনা করছে।'

তিনি আরও বলেন, 'সরকার ইতোমধ্যে এনইআইআরে বিনিয়োগ করেছে, কিন্তু অবৈধভাবে আমদানি করা মোবাইল ফোন ব্লক করা শুরু করেনি।'

Comments

The Daily Star  | English

BB to adopt more flexible exchange rate to meet IMF conditions

After a months-long stalemate, the Bangladesh Bank (BB) is finally set to adopt a more flexible exchange rate regime to fulfil conditions tied to a $4.7 billion International Monetary Fund (IMF) loan programme, which will likely enable Bangladesh to receive $1.3 billion in the fourth and fifth tranches.

9h ago