২১ বছর পর আবার চালু হলো ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা

সুপ্রিয় রেশম কারখানা, রেশম কারখানা, রেশম, ঠাকুরগাঁও, ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা,
আবারও তাঁতের শব্দে সরব হয়ে উঠেছে কারখানা। ছবি: মো. কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

দীর্ঘ ২১ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় কারখানাটির কার্যক্রম চলবে 'সুপ্রিয় রেশম কারখানা' নামে।

গত বৃহস্পতিবার সকালে এই কারখানার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনের সংসদ সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন।

রেশম কারখানা সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৫-৭৬ অর্থবছরে শহরের গোবিন্দনগর এলাকায় তৎকালীন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (আরডিআরএস) প্রায় ৩ একর জায়গায় এই কারখানাটি স্থাপন করে। পরে ১৯৮১ সালে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

পরবর্তী এক দশকে সংস্কারের অভাব ও অব্যবস্থাপনার কারণে প্রতিবছর লোকসানে পড়ছিল কারখানাটি। একপর্যায়ে বন্ধ হয়ে গেলে ১৯৯৫ সালে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৯৬ থেকে ১৯৯৯ সালে সংস্কার ও আধুনিকীকরণের কাজ শেষ হওয়ার পর কারখানাটি পুনরায় ২ বছর চলে। এরপর ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর লোকসানের কারণ দেখিয়ে কারখানাটি আবার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। তখন জেলার ১০ হাজার তুঁত চাষি ছাড়াও ৭৫ জন শ্রমিক-কর্মচারী এই কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।

২১ বছর পর আবার চালু হলো ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা
দীর্ঘ ২১ বছর বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হয়েছে ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা। ছবি: মো. কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

এভাবেই কেটে যায় আরও এক যুগ, তারপর বেসরকারি উদ্যোগে কারখানাটি পুনরায় চালুর প্রচেষ্টা শুরু হয়। জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের উদ্যোগে বাংলাদেশ রেশম বোর্ড ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনার পর 'সুপ্রিয় গ্রুপ' বাৎসরিক ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা দেওয়ার চুক্তিতে কারখানাটি পাঁচ বছরের জন্য লিজ নেয়। চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশ রেশম বোর্ডের সঙ্গে সুপ্রিয় গ্রুপের এ সংক্রান্ত চুক্তি হয়েছে। পরে গত বৃহস্পতিবার কারখানাটি পুনরায় উৎপাদন শুরু করে।

যোগাযোগ করা হলে সুপ্রিয় গ্রুপের চেয়ারম্যান বাবলুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কারখানাটিতে ২০টি পাওয়ার লুম (তাঁত) ও ১৬টি হ্যান্ড লুম আছে। এতে দক্ষ শ্রমিক নিয়োগ করে প্রতি ৮ ঘণ্টায় ১০০ মিটার সিল্ক কাপড় প্রস্তুত করা যায়। বর্তমানে প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা কারখানা চালুর পরিকল্পনা থাকলেও বাজারে চাহিদা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদন কার্যক্রম বাড়ানো হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'যেহেতু ঠাকুরগাঁও সিল্কের দেশে ও বিদেশে খ্যাতি আছে, তাই এই কারখানায় পণ্য উৎপাদন করে ভালো লাভ করা সম্ভব হবে।'

এক প্রশ্নের জবাবে বাবলুর রহমান বলেন, 'দেশের চাহিদা মিটিয়ে উৎপাদিত পণ্য বিদেশে রপ্তানি করারও ইচ্ছে আছে আমাদের।'

২১ বছর পর আবার চালু হলো ঠাকুরগাঁও রেশম কারখানা
গত বৃহস্পতিবার কারখানাটি পুনরায় উৎপাদন শুরু করে। ছবি: মো. কামরুল ইসলাম রুবাইয়াত

শনিবার বিকেলে কারখানাটিতে গিয়ে দেখা যায়, আবারও তাঁতের শব্দে সরব হয়ে উঠেছে কারখানা। সেখানে কাজ করছিলেন মিনা রানী রায় (৫৫), হরে কৃষ্ণ (৬০), রাধাকান্ত (৫৯) ও রথিচরণ (৫৮)।

তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা প্রত্যেকে এই কারখানায় প্রায় ১৮-২০ বছর কাজ করেছেন। কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেলে জীবিকার জন্য অন্য পেশা বেছে নিয়েছিলেন। পুনরায় কারখানাটি চালু হওয়ায় তারা বেশ খুশি এবং আগের পেশায় ফিরে এসেছেন।

কারখানার ব্যবস্থাপক মো. বেলায়েত হোসেন প্রধান বলেন, ঠাকুরগাঁও সিল্কের দেশব্যাপী সুনাম আছে। এই অঞ্চলে প্রশিক্ষিত প্রায় ৮-১০ হাজার চাষি তুঁত চাষের সঙ্গে যুক্ত। তারা উৎপাদিত গুটি জেলার রানীশংকৈল সিলেচারে বিক্রি করেন। সেখান থেকে উৎপাদিত সুতা রাজশাহী রেশম বোর্ডে বিক্রয় করা হয়। কিন্তু, এখানে কারখানা চালু হওয়ায় তুঁত চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।

বর্তমানে প্রায় ৫০ জন শ্রমিক-কর্মচারী কাজে যুক্ত হলেও উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আরও কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলেও জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

13h ago