আগস্টে নির্মাণ ব্যয় সর্বোচ্চ বেড়েছে

আগস্টে বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রাইস ইনডেক্স, বিএমপিআই, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি, নেক্সট স্পেসস লিমিটেড,
স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে বাংলাদেশে নির্মাণ ব্যয় বেড়েছে ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ, যা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর সর্বোচ্চ বৃদ্ধি।

ফলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রকল্প আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।

বিল্ডিং ম্যাটেরিয়ালস প্রাইস ইনডেক্স (বিএমপিআই) অনুযায়ী, সামগ্রিক নির্মাণ ব্যয় জুলাইয়ের ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৮০ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত পরিসংখ্যান সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির পর সাম্প্রতিক দাম বৃদ্ধি সর্বোচ্চ, তখন নির্মাণ ব্যয়ের গড় প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ০৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণ সামগ্রী, পরিবহন ও শ্রম ব্যয়সহ তিনটি মূল উপাদানের ব্যয় সংকলন করে আপডেট বিএমপিআই প্রকাশ করেছে।

এই উপাদানগুলোর মধ্যে নির্মাণ সামগ্রীর দাম আগের মাসের চেয়ে শূন্য দশমিক ৯৫ শতাংশ পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়ে আগস্টে ৭ দশমিক ২৭ শতাংশ হয়েছে।

একইভাবে শ্রম ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬ দশমিক ১৮ শতাংশ, যা জুলাইয়ের তুলনায় শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে পরিবহন খরচ কিছুটা কমেছে বলে বিবিএসের তথ্যে দেখা গেছে।

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রির (বিএসিআই) সভাপতি বিমল চন্দ্র রায় বলেন, নির্মাণ সামগ্রীর দাম বেশি হওয়ায় আমরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে আছি।

'বেশিরভাগ ঠিকাদার চাপে আছেন, কারণ তাদের চুক্তিগুলো কয়েক বছর আগে স্বাক্ষরিত হয়েছিল। তখন নির্মাণ ব্যয় কম ছিল। কিন্তু, বর্তমানে নিয়মিতভাবে নির্মাণ সামগ্রীর দাম বাড়ছে, কিন্তু তাদের ফান্ড একই গতিতে বৃদ্ধি বাড়েনি,' বলেন তিনি।

নেক্সট স্পেসস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বিমল চন্দ্র রায় বলেন, 'আমরা জানি না এর সমাধান কোথায়। বৈশ্বিক বাজারের কাঁচামালের দামের সঙ্গে সমন্বয় করতে আমাদের অবশ্যই অভ্যন্তরীণ বাজারে নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।'

মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীর নাসির হোসেন বলেন, মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বেশি হওয়ায় নির্মাণ ব্যয় বৃদ্ধির প্রবণতা অব্যাহত আছে।

তিনি বলেন, 'সিমেন্ট ও পাথরের মতো বেশিরভাগ কাঁচামাল বিদেশ থেকে আসে। সুতরাং, আমদানি ব্যয় সরাসরি নির্মাণ সামগ্রীর দামের ওপর প্রভাব ফেলে।'

তিনি জানান, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত স্টিল রডের দাম বেড়ে টনপ্রতি লাখ টাকার ওপর পৌঁছেছে, করোনা আগে যা ছিল ৬৮ হাজার টাকা। এছাড়া সিমেন্টের দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ।

ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন বলেন, 'দেশে গ্যাসের দামের অস্থিতিশীলতাও নির্মাণ ব্যয়ে প্রভাব ফেলছে।'

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহ-সভাপতি কামাল মাহমুদ বলেন, রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো নতুন প্রকল্প গ্রহণের ব্যাপারে সতর্ক হচ্ছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি নিয়ে আমাদের মধ্যে সবসময় ভয় কাজ করে। তাই এ খাতের উদ্যোক্তারা শুধু চলমান প্রকল্পগুলোতে মনোনিবেশ করছেন।

তিনি আরও বলেন, 'রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, রিজার্ভের ওপর চাপ, মার্কিন ডলারের ঘাটতি, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ নির্মাণ ব্যয়ের কারণে এই খাতে উদ্বেগ বাড়ছে। আর এখানে কাঁচামালের দাম একবার বাড়লে তা আর সহজে কমে না।'

Comments