অবরোধে লোকসানের মুখে সেন্টমার্টিনের পর্যটন ব্যবসা

বাংলাদেশের পর্যটন, সেন্টমার্টি, কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত, কেয়ারি সিন্দাবাদ, সেন্টমার্টিন ভ্রমণ, কক্সবাজার ভ্রমণ,
সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। ছবি: মোকাম্মেল শুভ/স্টার

সাধারণত প্রতি বছরের এই সময়ে কক্সবাজারের দক্ষিণ উপকূলের সেন্টমার্টিন দ্বীপে পর্যটকের ঢল নামে, কিন্তু দেশব্যাপী চলমান হরতাল ও অবরোধে স্থানীয় পর্যটন ব্যবসা এক প্রকার স্থবির হয়ে পড়েছে।

সেখানকার ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ পর্যটক দ্বীপটি ঘুরতে যাচ্ছেন। অথচ সেখানে প্রায় ২০০ হোটেল ও রিসোর্ট আছে।

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য এবং একমাত্র প্রবাল দ্বীপটি নীল পানি ও মনোরম দৃশ্যের জন্য বিখ্যাত।

মূল ভূখণ্ড থেকে নয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দ্বীপটির জন্য অক্টোবর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়কে পর্যটন মৌসুম ধরা হয়। কারণ, এসময় বঙ্গোপসাগর যথেষ্ট শান্ত থাকে, তাই পর্যটকরা নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারেন।

ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজারের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি হোসেনুল ইসলাম বাহাদুর বলেন, সেপ্টেম্বরের শেষদিকে সরকার ক্রুজ জাহাজের অনুমোদন দিলে পর্যটকদের ঢল নামে।

বারো আউলিয়া নামের একটি ক্রুজ জাহাজের মালিক হোসেনুল ইসলাম বাহাদুর আরও বলেন, 'অক্টোবর জুড়ে আমরা ভালোই পর্যটক পেয়েছি, কিন্তু বিএনপি ও তার মিত্রদের ডাকা হরতাল ও অবরোধের কারণে নভেম্বর থেকে পর্যটকের উপস্থিতি ব্যাপকভাবে কমেছে।'

বর্তমানে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ পর্যটক নিয়ে প্রায় ১ হাজার ৬০০ যাত্রী ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন মাত্র তিনটি জাহাজ চলাচল করছে। ফলে যাত্রীবাহী জাহাজের অপারেটররা তাদের কর্মীদের বেতন দিতে পারছেন না এবং এ ধরনের ধীরগতির ব্যবসা থেকে শুধু জ্বালানি খরচ তোলা সম্ভব হচ্ছে বলে জানান তিনি

এই রুটে আটটি ক্রুজ জাহাজ আছে, যার মোট ধারণ ক্ষমতা প্রায় ৪ হাজার জন। তবে, এগুলোর মধ্যে পাঁচটি এখন অলস পড়ে আছে বলে জানান হোসেনুল ইসলাম বাহাদুর।

তিনি বলেন, তার মতো ক্রুজ জাহাজের মালিকরা অক্টোবর-এপ্রিল মৌসুমের জন্য অপেক্ষায় থাকেন। কারণ অন্যান্য মাসগুলোতে এগুলো চলাচলে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপার থাকে।

'কিন্তু এবার রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি,' যোগ করেন তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ট্রাফিক সুপারভাইজার মো. জহির আহমেদ ভূঁইয়া জানান, বারো আওলিয়া ছাড়াও টেকনাফ-সেন্টমার্টিন রুটে আরও দুটি ক্রুজ জাহাজ কেয়ারি সিন্দাবাদ ও আটলান্টিক ক্রুজ চলাচল করছে। কারণ পর্যটকের সংখ্যা খুবই সীমিত।

মো. জহির আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, পিক মৌসুমে সাধারণত প্রতিদিন সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার পর্যটক সেন্টমার্টিনে আসেন।

আমজাদ হোসেন বলেন, পর্যটকের সংখ্যা  ৫ শতাংশে নেমে এসেছে।

তিনি আরও বলেন, 'এ ছাড়া স্বল্প সংখ্যক ভ্রমণকারী যারা আসছেন তাদের বেশিরভাগ কম দামের হোটেলে থাকছেন, ফলে মানসম্মত হোটেল ও রিসোর্টগুলো লোকসান পড়ছে।'

আমজাদ হোসেন বলেন, 'মন্দার কারণে অনেক হোটেল মালিক তাদের কর্মীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।'

'আতিথেয়তা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এ বছর তাদের স্থাপনার সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনে উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু, পর্যটকের অভাবে সেগুলো ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়ছে,' যোগ করেন তিনি।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, 'দ্বীপটিতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করেন, যাদের ৯৫ শতাংশই আয়ের জন্য পর্যটন শিল্পের ওপর নির্ভরশীল।'

তিনি বলেন, 'পর্যটক কম আসায় তাদের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে, তাদের কষ্টের মধ্যে দিন কাটাতে হচ্ছে।'

'স্থানীয়রা পিক মৌসুমের আয়ে পুরো বছর পরিবারের ব্যয় বহন করেন। তবে, এবার অবরোধ ও হরতালের কারণে তাদের আয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে,' বলেন চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।

Comments

The Daily Star  | English
Khaleda Zia calls for unity

‘Seize the moment to anchor democracy’

Urging people to remain united, BNP Chairperson Khaleda Zia has said the country must quickly seize the opportunity to institutionalise the democratic system.

7h ago