রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকল আধুনিকায়নে এস আলমের সঙ্গে চুক্তি বাতিল

অর্থপাচারের ঘটনায় এস আলমের বিরুদ্ধে আবার তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ চিনিকল। স্টার ফাইল ফটো

দেশের রুগ্ন চিনিকলগুলোকে আধুনিক করতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) ও এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির মধ্যে সমঝোতা স্মারক বাতিল করেছে সরকার।

চিনি উৎপাদন বাড়াতে প্রকল্প বাস্তবায়নের আগে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য গত ৪ জুলাই চুক্তিটি সই হয়।

মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব জাকিয়া সুলতানা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিল্প মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এস আলমের সঙ্গে সই করা সমঝোতা স্মারক বাতিল করেছে।'

তার মতে, এই চুক্তি বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা ছিল না। তাই তা বাতিল করা সম্ভব হয়েছে।

তবে বাতিলের কারণ জানাননি তিনি।

বর্তমানে বিএসএফআইসির অধীনে ১৫ চিনিকলের মধ্যে নয়টি চালু আছে।

বাকি ছয় চিনিকল ক্রমাগত লোকসানে থাকায় ও আধুনিকীকরণ জরুরি হয়ে পড়ায় সরকার ২০২০ সালের শেষের দিকে সেগুলো বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারি আদেশে বিএসএফআইসি জানায়—পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পাবনা, শ্যামপুর, পঞ্চগড়, সেতাবগঞ্জ, রংপুর ও কুষ্টিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত চিনিকলগুলোয় উৎপাদন বন্ধ থাকবে।

একই মাসে জাপান, থাইল্যান্ড ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত প্রস্তাব দেয়। প্রকল্পে বন্ধ ছয় কারখানা ও রপ্তানির উপজাতগুলো আপগ্রেড ও লাভজনক করা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

থাইল্যান্ডের সুটেক ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি, আরব আমিরাতের শারকারা ইন্টারন্যাশনাল ও জাপানের সোজিটজ মেশিনারি করপোরেশন যৌথ উদ্যোগে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছে।

জাপান ব্যাংক ফর ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন ও এক্সিম ব্যাংক অব থাইল্যান্ড প্রকল্পটিতে অর্থায়নে আগ্রহী হওয়ায় ২০২২ সালের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চূড়ান্ত অনুমোদন আশা করা হয়।

কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি।

বিএসএফআইসির কর্মকর্তাদের অভিযোগ—সরকার যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখানোয় এস আলম অ্যান্ড কোম্পানি কারখানাগুলোর আধুনিকায়নের জন্য সমঝোতা স্মারক সইয়ের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রাজি করায়।

চুক্তিতে প্রযুক্তি ব্যবহারে কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আখ উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলা হয়।

পাশাপাশি আধুনিক আখ প্রক্রিয়াজাতকরণ প্ল্যান্ট, ছয় মেগাওয়াট এগ্রোভোলটাইক সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট, বাই প্রোডাক্ট প্রসেসিং প্ল্যান্ট ও প্যাকেজিং কারখানা করা হবে।

এ ছাড়া, হিমাগার ও কৃষিপণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে উঠবে।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতা ছেড়ে শেখ হাসিনার ভারতে পালানোর পর এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির প্রধান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ ওঠায় বিএসএফআইসির কর্মকর্তারা যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন তা সামনে চলে আসে।

এস আলম, তার পরিবারের সদস্য ও তাদের মালিকানাধীন ছয় ব্যাংকের শেয়ার হস্তান্তর বা বিক্রির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।

অর্থপাচারের ঘটনায় এস আলমের বিরুদ্ধে আবার তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

দ্য ডেইলি স্টারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে—এস আলম সিঙ্গাপুরে এক বিলিয়ন ডলারের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। ২০২৩ সালের ৪ আগস্ট অভিযোগগুলো তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

এর নয় দিন পর এস আলম কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে টাকা পাঠিয়েছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে হাইকোর্টের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুসন্ধানে নামে দুদক।

তবে গত ফেব্রুয়ারিতে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার রুল খারিজ করে দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এতে বলা হয়, দুদক স্বপ্রণোদিত হয়ে আইনগত উদ্যোগ নিতে পারে।

এ কারণে গত ২২ আগস্ট দুদক আবার তদন্ত শুরুর সিদ্ধান্ত নেয়।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংক থেকে এস আলম কত টাকা ঋণ নিয়েছেন, কী পরিমাণ সম্পদ অবৈধভাবে অর্জন করেছেন ও সেই টাকা কোন খাতে বিনিয়োগ করা হয়েছে—এসব অভিযোগের আনুষঙ্গিক নথি সংগ্রহ করা হবে।

Comments