পাট পণ্যের উৎপাদন কমেছে

রপ্তানি কমে যাওয়া এবং বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং আইন কঠোরভাবে আরোপ করতে সরকারের ব্যর্থতার কারণে গত ২ বছরে পাট পণ্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে মনে করছেন প্রস্ততকারকরা।
ছবি: স্টার ফাইল ফটো

রপ্তানি কমে যাওয়া এবং বাধ্যতামূলক প্যাকেজিং আইন কঠোরভাবে আরোপ করতে সরকারের ব্যর্থতার কারণে গত ২ বছরে পাট পণ্যের উৎপাদন উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে বলে মনে করছেন প্রস্ততকারকরা।

ফলস্বরূপ, দেশের বেশ কিছু জুট টেক্সটাইল মিল মালিক তাদের কারখানা বন্ধ করে দিয়েছেন কিংবা উৎপাদন কমাতে বাধ্য হয়েছেন।

রুক্ষ হলেও অত্যন্ত টেকসই ও বায়ু চলাচলযোগ্য পাটের বস্তা, ব্যাগ, কার্পেট থেকে শুরু করে গৃহসজ্জার সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহার করা হয় পাট।

২০২১-২২ অর্থবছরে পাট বস্ত্রের মোট উত্পাদন ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার টন, যা আগের বছরের ৩ লাখ ৩৯ হাজার টনের তুলনায় প্রায় ২৮ শতাংশ কম।

একইভাবে, ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ কম ছিল বলে জানা গেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য থেকে।

মাজেদা জুট ইন্ডাস্ট্রিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ জুট স্পিনার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএসএ) পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোকসান এড়াতে কারখানায় উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ কমাতে বাধ্য হয়েছি।'

তিনি বলেন, 'আমি সাধারণত প্রতি বছর ৩০ টন পাট বস্ত্র উত্পাদন করি। কিন্তু বিদেশি চাহিদা কমে যাওয়ায় আমি গত বছর থেকে মজুদ রেখেছি।'

তিনি জানান, তার মতো উৎপাদকদের ২ শতাংশ উৎস কর দিতে হয়। এতে করে খরচ বাড়ে এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়েন।

তিনি বলেন, 'এই কর প্রত্যাহার বা স্থগিত করে পাট শিল্পকে বাঁচাতে হবে।'

শমশের জুট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, অভ্যন্তরীণ চাহিদা স্থবির থাকায় তিনিও গত অর্থবছরে উৎপাদন ২৫ শতাংশ কমিয়েছেন।

তিনি বলেন, 'সরকার পণ্য প্যাকেজিংয়ের জন্য পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে পারেনি। অথচ, এর জন্য এক দশক আগে আইন করা হয়েছে।'

২০১০ সালে সরকার পলিথিন বা পলিপ্রোপিলিন ব্যাগের পরিবর্তে পরিবেশ বান্ধব পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়াতে প্যাকেজিং আইন প্রণয়ন করে।

মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'বাধ্যতামূলকভাবে প্যাকেজিং আইনটি প্রয়োগ করা হলে আমাদের জন্য এটি সহায়ক হতো।'

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, ২০২১-২২ অর্থবছরে পাটের সুতা ও দড়ির মোট রপ্তানি ১৩ শতাংশ এবং পাটের বস্তা ও ব্যাগের রপ্তানি ১৪ শতাংশ কমেছে।

মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, 'দেশের কাঁচা পাটের বাজার স্থিতিশীল নয়।'

তিনি বলেন, 'মধ্যস্বত্বভোগীদের অনিয়ন্ত্রিত মজুদের কারণে গত ২ বছরে কাঁচা পাটের দাম অস্থিতিশীল ছিল, যার ফলে বিদেশি বাজারে পাটজাত পণ্যের দাম বেড়েছে।'

একসময় তুরস্কে বাংলাদেশের একটি বড় বাজার ছিল। কিন্তু আন্তঃমহাদেশীয় দেশটি এখন পাট বস্ত্রের উচ্চ মূল্য বিবেচনায় তুলার তৈরি পণ্যের দিকে ঝুঁকছে।

এ ছাড়া, ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্কও দেশের রপ্তানিকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ভারত একটি শুল্ক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে পাটজাত পণ্য আমদানির ওপর অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক আরোপ করে, যা একই বছরের ৩ এপ্রিল সংশোধন করা হয়।

বাংলাদেশ থেকে প্রাপ্ত পাট, পাটের সুতা ও পাটের ব্যাগের ওপর প্রতি টন ১৯ ডলার থেকে ৩৫২ ডলার পর্যন্ত অ্যান্টি-ডাম্পিং শুল্ক রয়েছে।

মোহাম্মদ শাহজাহানের আশঙ্কা, চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ আগামী অর্থবছরে রপ্তানি আরও কমিয়ে দেবে। এই ২ দেশ বাংলাদেশের জন্য বড় বাজার।

প্যাকেজিং আইন নিয়ে সরকারের শিথিল অবস্থানের সমালোচনা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, 'প্যাকেজিং আইন থেকে পাটপণ্য এখনো আশানুরূপ ফল পায়নি।'

তিনি আরও বলেন, সরকারকে সহায়ক নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সোনালী আঁশের প্রচারের চেষ্টা করা উচিত। কেননা, ইতোমধ্যে এই শিল্প অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে।

এই অর্থনীতিবিদ সরকারকে প্যাকেজিং আইন বাস্তবায়নে কঠোর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যথায়, প্লাস্টিক উত্পাদকদের কাছে পাটপণ্য উৎপাদকরা পিছিয়ে পরবেন।

বাংলাদেশের পাটপণ্যের ওপর ভারতের অ্যান্টি-ডাম্পিং নীতি প্রত্যাহারে কূটনৈতিক উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শও দেন খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

Comments