তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম পায়

তৈরি পোশাক
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোর তুলনায় ৩২ থেকে সর্বোচ্চ ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম পায় বাংলাদেশ। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ধারাবাহিকভাবে বৈশ্বিক গড় মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক পণ্য কিনছেন। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু প্রতিদ্বন্দ্বীর কাছ থেকে কেনার সময় একই ক্রেতা বেশি দাম দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন্দ্রের (আইটিসি) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।

স্থানীয় তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীরা অন্য দেশের সরবরাহকারীদের তুলনায় ক্রেতাদের কাছ থেকে ৩২ থেকে সর্বোচ্চ ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত কম দাম পান।

এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশি তৈরি পোশাক উৎপাদনকারীদের একটি দীর্ঘদিনের দাবির সত্যতা প্রমাণ হলো। তারা প্রায়ই আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের কাছ থেকে আশানরূপ দাম না পাওয়ার অভিযোগ করেন এবং ভ্যালু চেইনে আরও ওপরের দিকে যাওয়ার গুরুত্বের কথা উল্লেখ করেন।

'দ্য গার্মেন্ট কস্টিং গাইড ফর স্মল ফার্মস ইন ভ্যালু চেইনস' নামে আগস্ট মাসে প্রকাশিত সমীক্ষা প্রতিবেদনে আইটিসি জানায়, একটি বিষয় উঠে আসছে সেটি হলো খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডদের উচিত পোশাক সরবরাহকারীদের ন্যায়সঙ্গত ফ্রি-অন-বোর্ড (এফওবি) মূল্য পরিশোধ করা, কারণ তারা প্রায়ই উৎপাদন খরচের চেয়ে কম দামে পোশাক কেনেন।

প্রতিবেদন মতে, 'প্রাপ্ত তথ্য থেকে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অনেক কারখানা কম এফওবি মূল্য পাওয়ার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে।'

'উপসংহার হিসেবে বলা যায় এখানে সমস্যা ক্রেতার এবং এ কারণে তাদের আরও বেশি এফওবি মূল্য পরিশোধে বাধ্য করা উচিত।'

বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক সরবরাহকারী দেশ। সারা বিশ্বে এই খাতে শুধু চীন বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে।

গত অর্থবছরে এই খাত থেকে বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬১ বিলিয়ন ডলার।

আইটিসি প্রতিবেদনে আরও জানায়, 'এখানে সমস্যা এটি নয় যে ক্রেতারা কারখানাগুলোকে কম দাম দিচ্ছে বরং ক্রেতারা বাকিদের আরও বেশি দিচ্ছে।'

আইটিসির এই সমীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল কার্যালয় থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরির সময় সংস্থাটি ২০২০ সালে বাংলাদেশের ১০টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্যের তথ্য বিশ্লেষণ করেছে। তারা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের এফওবি মূল্যের সঙ্গে প্রতিটি পণ্যে শীর্ষ ১০ প্রতিদ্বন্দ্বীর পাওয়া মূল্যের তুলনা করেছে।

প্রতিটি পণ্যের ক্ষেত্রেই বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও কাম্বোডিয়া ধারাবাহিকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের গড় মূল্যের চেয়ে কম মূল্য পেয়েছে আর ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক ও মেক্সিকো গড়ের চেয়ে বেশি মূল্য পেয়েছে। 

উদাহরণ হিসেবে, বাংলাদেশে তৈরি পুরুষদের জন্য তুলার ওভেন ট্রাউজার ২০২০ সালে ৭ দশমিক ০১ ডলার দামে বিক্রি হয়েছে, যেটি বৈশ্বিক গড় ৭ দশমিক ৭২ ডলারের চেয়ে ৯ দশমিক ২ শতাংশ কম।

একই পণ্যের জন্য ভিয়েতনাম ১০ দশমিক ৭৬ ডলার পেয়েছে। শ্রীলঙ্কা ও ভারতের রপ্তানিকারকরা যথাক্রমে ৮ ও ৮ দশমিক ৪১ ডলার দাম পেয়েছে।

একইভাবে, বাংলাদেশে উৎপাদিত পুরুষদের তুলার তৈরি জিন্স প্রতি পিস ৭ দশমিক ৮১ ডলার দামে বিক্রি হয়েছে। এই মূল্য বৈশ্বিক গড় ৮ দশমিক ৪১ ডলারের চেয়ে ৭ দশমিক ২ শতাংশ কম। একইরকম পণ্য বিক্রি করে ভিয়েতনাম ১১ দশমিক ৫৫ ডলার আয় করেছে।

বাংলাদেশের ২টি মাত্র পণ্য বৈশ্বিক গড়ের চেয়ে কিছুটা বেশি মূল্য পেয়েছে।

সমীক্ষা প্রতিবেদন মতে, তৈরি পোশাক খাত একটি সরল উৎপাদন প্রক্রিয়া থেকে জটিল সেবা খাতে রূপান্তরিত হয়েছে।

কাপড় কাটা ও সেলাই প্রক্রিয়া এখন সবচেয়ে সরল ও কম সম্মানীর কাজ হিসেবে বিবেচিত।

হংকং, সিঙ্গাপুর ও সিওলের মতো প্রথম প্রজন্মের পোশাক উৎপাদনকারী এশীয় শহরগুলো সরল পণ্য উৎপাদনকারী থেকে নিজেদেরকে বহুজাতিক সংস্থায় রূপান্তরিত করেছে এবং তারা এখন সারা বিশ্বজুড়ে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো প্রকৌশল, অত্যাধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ করে।

তারপরও উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশের বেশিরভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি তৈরি পোশাক নির্মাতারা এই খাতের রূপান্তরের সঙ্গে তাল মেলাতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানগুলো এখন প্রাথমিক পর্যায়ের কাটা ও সেলাইভিত্তিক কার্যক্রমেও নিজেদের সীমাবদ্ধ রেখেছে। অল্প কিছু সেবা দিতে পারে এবং নিত্যপণ্যের মতো গুণসম্পন্ন পোশাক সরবরাহ করতে পারে। 

সমীক্ষায় আইটিসি মন্তব্য করে, 'তারা হয়তো জানে না কীভাবে তাদের সেবার মান উন্নয়ন করা যায় এবং ক্রেতারা সে ধরনের উন্নত পণ্য কেনার জন্য মূল্য পরিশোধ করতে প্রস্তুত কী না, সে বিষয়েও তারা সন্দিহান।'

আইটিসি পোশাক নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে তাদের সেবার বিস্তার ঘটিয়ে ব্যবসাক্ষেত্রে টিকে থাকার চেষ্টা চালাতে।

ঢাকার একটি শীর্ষ ইউরোপীয় খুচরা বিক্রেতা জানায়, 'এটা সত্য, যে বাংলাদেশে উৎপাদিত তৈরি পোশাক পণ্যের দাম অন্যান্য দেশ ও গড় বৈশ্বিক মূল্যের তুলনায় কিছুটা কম, কারণ স্থানীয় উৎপাদনকারীরা শুধুমাত্র প্রাথমিক পর্যায়ের তৈরি পোশাক উৎপাদনে শক্তিশালী।'

বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি থেকে কম দেওয়ার পেছনে আংশিক কারণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ের পণ্যের পরিমাণ বেশি থাকাকে দায়ী করেন।

এই উদ্যোক্তা দুর্বল অবকাঠামো ও রপ্তানি চালান সরবরাহ করার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতাকেও কারণ হিসেবে অভিহিত করেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশ পণ্যের মান, বৈচিত্র্য ও নীতিমালা মেনে চলার ক্ষেত্রে সম্প্রতি বছরগুলোতে অনেক উন্নতি করেছে'।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে Garment Export: Bangladesh gets up to 83% lower price than rivals লিংকে ক্লিক করুন)

 

Comments

The Daily Star  | English

Poll irregularities: Sedition among 3 new charges added against three ex-CECs

BNP filed a case against 24 individuals, including three former chief election commissioners, 10 election commissioners, and top government and police officials, for their alleged role in irregularities during national polls in 2014, 2018, and 2024

42m ago