যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে রপ্তানি পোশাকের দাম কমেছে

পোশাক শিল্প
স্টার ফাইল ফটো

সাম্প্রতিক মাসগুলোয় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো প্রধান বাজারগুলোয় বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি জোরালোভাবে ঘুরে দাঁড়ালেও প্রতি পোশাকের দাম কমেছে।

আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো অন্যান্য দেশ থেকে পোশাক কিনতে বেশি দাম দিলেও বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের পণ্যের দাম কমাতে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছে।

অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটেক্সা) তথ্য বলছে—গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো প্রতি পোশাকের দাম দুই দশমিক ২০ শতাংশ কমেছে। তবে জানুয়ারিতে রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৫ দশমিক ৯৩ শতাংশ বেড়ে ৭৯৯ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন ডলার হয়েছে।

গত জানুয়ারিতে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে ৪৯ দশমিক ২১ শতাংশ, ভিয়েতনাম থেকে ১৭ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, চীন থেকে নয় দশমিক ৩৬ শতাংশ ও অন্যান্য দেশ থেকে ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিসংখ্যান অফিস ইউরোস্ট্যাটের সর্বশেষ তথ্য বলছে—গত বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ইইউতে বাংলাদেশের প্রতি পোশাকের দাম কমেছে চার দশমিক ৮৪ শতাংশ।

গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি চার দশমিক ৮৬ শতাংশ বেড়ে ১৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। একই সময়ে রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ১৮ শতাংশ। চীন থেকে বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ। ইইউয়ের মোট পোশাক আমদানি বেড়েছে আট দশমিক ৯৮ শতাংশ।

ইইউয়ের আমদানি করা পোশাকপ্রতি দাম ছয় দশমিক ৮৩ শতাংশ কমেছে। চীনা পণ্যের দাম কমেছে আট দশমিক ৪৩ শতাংশ। ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ার পোশাক পণ্যের দামও কমেছে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে।

রপ্তানিকারকরা জানিয়েছেন—২০২১ সাল থেকে কার্যকর ইইউ ও ভিয়েতনামের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) ভিয়েতনামকে ধীরে ধীরে শুল্ক অপসারণের অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা দিয়েছে।

সাধারণভাবে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় দাম কম পেয়েছে।

জায়ান্ট গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত বছর বিশ্বব্যাপী পোশাকের সামগ্রিক দাম কমেছে। এ বছরও তা অব্যাহত আছে।'

তার মতে—তুলা, সুতা, কাপড়ের দামের পাশাপাশি জাহাজ ভাড়া কমে যাওয়ায় পোশাকের দাম কমেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোর অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোয় আন্তর্জাতিক ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে কার্যাদেশ বেড়েছে বলে জানান তিনি।

পোশাক তৈরির জন্য বাংলাদেশকে অনেক সময় দেওয়া হয়। এ দেশের ব্যবসায়ীরা সাধারণত কম ও মাঝারি দামের পোশাক তৈরি করেন। তাই বিদেশি ক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো কম দাম দেয়। তবে অনেকে এখন বেশি দামের পোশাক রপ্তানি করছেন।

'বাংলাদেশ যদি উন্নতমানের ও সময়মতো পণ্য হস্তান্তর নিশ্চিত করতে পারে তবে ক্রেতারা আরও বেশি টাকা দিতে ইচ্ছুক হবে। এ দেশের ব্যবসায়ীদের অনেকে দামের ক্ষেত্রে অস্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা করেন বলে পণ্যের দাম কমে যাওয়ার এটি আরেক কারণ।'

বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতার সক্ষমতা কম। এটি তাদের দর কষাকষির ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।'

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে—চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২৬ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৫০ দশমিক ১০ শতাংশ ইইউতে রপ্তানি হয়। এর পরিমাণ ১৩ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ডলার।

যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি পাঁচ দশমিক শূন্য ছয় বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, মোট রপ্তানির ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। কানাডায় রপ্তানি ৮৪৫ মিলিয়ন ডলার বা তিন দশমিক ১৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যে দুই দশমিক ৯৩ বিলিয়ন ডলার বা ১০ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

ইইউতে রপ্তানি পোশাকের দাম আগের বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, যুক্তরাষ্ট্রে ১৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ ও কানাডায় ১৪ দশমিক ১২ শতাংশ বেড়েছে। তবে বিজিএমইএর সংকলিত ইপিবির তথ্য বলছে—যুক্তরাজ্যে পোশাক রপ্তানিতে তিন দশমিক ৭৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

অন্যান্য দেশে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ছয় দশমিক ২৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়ে চার দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার হয়েছে। এটি মোট রপ্তানির ১৬ দশমিক ৯০ শতাংশ।

Comments

The Daily Star  | English
Portrait of Fascism Sheikh Hasina artwork Borsho Boron Anondo Shobhajatra

Anondo Shobhajatra marches on, embracing festivity

Besides teachers and students, people from all walks of life participated in the joyous and colourful procession that began from the Charukola premises around 9:00am

1h ago