সৈয়দপুর বিমানবন্দর বাড়াবে নেপাল, ভুটানের সঙ্গে বহুমুখী সংযোগ

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিককরণের মাধ্যমে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর
নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের জন্য প্রস্তুত করতে চলছে উন্নয়ন কাজ। একটু নতুন টার্মিনাল প্রায় প্রস্তুত। বিমানবন্দরটি খুব শিগগির একই সময়ে ৬১০ জন যাত্রী পরিচালনা করতে পারবে। ছবি: আসাদুজ্জামান টিপু/ স্টার

নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিককরণের মাধ্যমে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বের সাতটি রাজ্যের সঙ্গে বহুমুখী যোগাযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে কাজ করছে সরকার।

দেশের সবচেয়ে উত্তরের এই বিমানবন্দরটি ১৩৬ দশমিক ৫৯ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। রাজধানী ঢাকা থেকে ২৬০ কিলোমিটার উড্ডয়ন দূরত্বে অবস্থিত যা আকাশপথে অতিক্রম করতে সময় লাগে মাত্র ৪৮ মিনিট।

বিমানবন্দরটি অভ্যন্তরীণ রুটে ফ্লাইট কার্যক্রম শুরু করে ১৯৭৯ সালে। ৬ হাজার ফুট রানওয়েসম্পন্ন এই বিমানবন্দরটি দেশের ব্যস্ততম বিমানবন্দরগুলোর একটি। বিমানবন্দরটিতে বর্তমানে প্রতিদিন ৩০টি ফ্লাইট ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে চলাচল করে।

রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বাংলাদেশ বিমান, ও বেসরকারি অপারেটর ইউ এস বাংলা এয়ারলাইনস ও নভোএয়ার এখান থেকে নিয়মিত ফ্লাইট পরিচালনা করছে বলে জানান সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লব কুমার ঘোষ।

তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার ঘোষণা দেন। সেই অনুযায়ী চলছে উন্নয়ন কার্যক্রম। কাজ শেষ হলে এটি হবে দেশের পঞ্চম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর।

বিমানবন্দরের তথ্য থেকে জানা যায়, সৈয়দপুর থেকে নেপাল, ভুটান ও ভারতের উত্তর-পূর্বের সেভেন সিসটারখ্যাত ৭ রাজ্যের নিকটতম বিমানবন্দরগুলেতে যেতে আকাশপথে ৩০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগে।

২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাইওয়ালি বাংলাদেশ সফরকালে সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব করেন।

সেসময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন জানিয়েছিলেন, আন্তঃদেশীয় সংযোগ এবং ব্যবসা বাণিজ্য ও পর্যটনশিল্পের বিকাশে সরকার সৈয়দপুর বিমানবন্দর সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ভুটানের অর্থনীতি বিষয়ক সেক্রেটারি কারমা শেরিং ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সফরকালে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশীর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহারের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন।

টিপু মুনশী বলেছিলেন, সৈয়দপুর বিমানবন্দরসহ কাছাকাছি অবস্থিত স্থলবন্দরগুলোর সর্বোত্তম ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভুটানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যসহ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যাপকভাবে বাড়ানো সম্ভব।

সিভিল এভিয়েশন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায় সৈয়দপুরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নিত করার লক্ষ্যে জরিপকাজ পরিচালনার জন্য দক্ষিণ কোরিয়ান একটি ফার্মকে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটি ইতোমধ্যে জরিপ শেষ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ একটি মাস্টারপ্ল্যান করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের আশেপাশের ৯১২ দশমিক ৯০ একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু করে।

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক খন্দকার ইয়াসীর আরেফিন জানান, ভূমি অধিগ্রহনের প্রাথমিক কাজ শেষ করে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছি। এখন নির্দেশনা এলে আমরা মূল কাজ শুরু করব।

সিভিল এভিয়েশন অথোরিটি অব বাংলাদেশ ( ক্যাব) সূত্রে জানা গেছে ভূমি অধিগ্রহন, পুনর্বাসন ও স্থানান্তর সংক্রান্ত একটি ডিপিপি (ড্রাফট প্রজেক্ট প্রপোজাল) মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু এটি চূড়ান্ত করার পূর্বেই করোনা মহামারির কারণে তা থমকে যায়।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহাবুব আলী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার কাজ চলমান আছে। ইতোমধ্যে আমরা কার্যক্রমে অনেক দূর এগিয়ে গেছি।

'করোনা মহামারির প্রাদুর্ভাব ও চলমান বৈশ্বিক সংকটে কাজের গতি কিছুটা শ্লথ হয়ে গেলেও পরিস্থিতির উন্নতি হলেই এ কার্যক্রম গতিশীল হবে,' যোগ করেন মন্ত্রী।

সৈয়দপুর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সুপ্লভ কুমার ঘোষ বলেন, ' বিমানবন্দর উন্নিত করার অংশ হিসেবে দৃষ্টিনন্দন অভ্যন্তরীন টার্মিনাল ভবন নির্মাণকাজ প্রায় সমাপ্তির পর্যায়ে। এর ফলে যাত্রীধারণ ক্ষমতা বর্তমানের ২০০ জনের স্থলে ৬২০ জন হবে।'

সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একটি সভা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেই সভায় পেশ করা মন্ত্রণালয়ের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সৈয়দপুর বিমানবন্দর উন্নীতকরণ কাজ শেষ হলে বিমানবন্দরের রানওয়ের দৈর্ঘ ১২ হাজার ফুট হবে। যা বর্তমানে আছে ৬ হাজার ফুট।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক করার জন্য বিমানবন্দরের আরও অনেক অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, আন্তর্জাতিক প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, কার্গো টার্মিনাল, কন্ট্রোল টাওয়ার, পাওয়ার হাউজ, পাম্প হাউজ, ফায়ার স্টেশন, প্রশাসনিক ভবন, অপারেশন ভবন, ভিআইপি ও ভিভিআইপি লাউঞ্জ, আবাসিক কোয়ার্টারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো।

রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মোস্তফা সোহরাব চৌধুরী টিটু বলেন, সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে বিদেশের সাথে শিল্প বাণিজ্যে পিছিয়ে থাকা এই এলাকার ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্যের সুযোগ সৃষ্টি হবে। আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে।

'এখান থেকে কার্গো বিমান চলাচল করলে আমরা খুব সহজেই আমাদের উৎপাদিত পণ্য, বিশেষ করে কৃষিপন্য সহজেই, স্বল্প সময়ে পার্শ্ববর্তী দেশ নেপাল, ভুটান ও ভারতে পরিবহন করতে পারব। এতে করে কৃষকদের অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে,' তিনি যোগ করেন।

Comments