এলসি খোলার সংকট যেন ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’

করোনা মহামারির ধাক্কার পর ২০২২ সালের শুরুতে দেশের সার্বিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। ফলে ব্যবসায়ীরা ভাবতে শুরু করেন, দুর্দিনের পর এবার কাছে আসতে শুরু করেছে সুদিন। কিন্তু সেই সুদিন ছিল ক্ষণস্থায়ী।
চট্টগ্রাম বন্দর। স্টার ফাইল ছবি

করোনা মহামারির ধাক্কার পর ২০২২ সালের শুরুতে দেশের সার্বিক ব্যবসায়িক পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করে। ফলে ব্যবসায়ীরা ভাবতে শুরু করেন, দুর্দিনের পর এবার কাছে আসতে শুরু করেছে সুদিন। কিন্তু সেই সুদিন ছিল ক্ষণস্থায়ী।

ক্ষণস্থায়ী সেই সুদিনে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দুর্দিন হয়ে হানা দেয় ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। এই যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে আরেকটি বৈশ্বিক সংকট। সেই সংকটের শুরুতেই এর আঁচ এসে পড়ে বাংলাদেশেও।

এই সংকটের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পায়। এতেই সংকট শেষ হয়ে যায়নি।

২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এসে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকট দেখা দেয়। ফলে দেশবাসীর ওপর এসে পড়ে লোডশেডিংয়ের বোঝা এবং সেই কারণে কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হতে শুরু করে।

জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংকট থেকে উত্তরণে ত্রাণকর্তা হিসেবে আসে শীত। কারণ এই সময়ে জ্বালানি ও বিদ্যুতের চাহিদা কমে যায়। তবে, স্থানীয় উৎপাদনের অপ্রতুলতা ও আন্তর্জাতিক স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনা বন্ধ থাকায় কারখানাগুলো এখনো পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ পাচ্ছে না। অন্যদিকে কিছুমাত্রায় লোডশেডিং এখনো অব্যাহত রয়েছে।

সরকার পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করায় এবং আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির পরে উৎপাদন ব্যয়ও বেড়ে যায়। ফলে ব্যবসায়ীরাও বাধ্য হয়েই পণ্য ও সেবার দাম বাড়ায়।

এই সংকটময় পরিস্থিতিতে 'মরার ওপর খাঁড়ার ঘা' হয়ে আবির্ভূত হয়েছে ডলার ঘাটতি।

আমদানি-রপ্তানির জন্য প্রয়োজনীয় ডলার ব্যাংকগুলো দিতে না পারায় এবং অপ্রয়োজনীয় আমদানির ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিধিনিষেধের কারণে এখন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) বা ঋণপত্র খুলতে অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছেন। দিনকে দিন এই সংকট তীব্রতর হচ্ছে।

চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ভোগ্যপণ্যের এলসি খোলার হার ১৪ শতাংশ কমেছে। আর নিষ্পত্তি কমেছে ৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সিমেন্ট শিল্পের মূল উপাদান ক্লিংকার ও চুনাপাথরের মতো মধ্যবর্তী পণ্যের জন্য এলসি খোলার পরিমাণ ৩৩ শতাংশ কমে ২ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

মধ্যবর্তী পণ্য আমদানির জন্য এলসির নিষ্পত্তিও কমেছে।

শিল্পের কাঁচামালের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি একই। জুলাই-ডিসেম্বরে শিল্পের কাঁচামালের জন্য এলসি খোলার পরিমাণ ২৭ শতাংশ কমে ১২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

চলমান পরিস্থিতি বিক্রিতে মন্দা সৃষ্টি করেছে এবং ব্যবসায়ীদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি সৃষ্টি করেছে যে, তাদের নিয়মিত সরবরাহ চেইন ভেঙে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইলিয়াস মৃধা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত ২ মাস ধরে এলসি খোলার বিষয়ে আমরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি। এর কারণে আমাদের সাপ্লাই চেন ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানিমুখী বাজারের জন্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।'

'ব্যাংকগুলো স্বল্পমূল্যের আমদানির জন্য এলসি গ্রহণ করছে। তবে, আমদানি-রপ্তানির উন্নতি না হলে আগামী মাসগুলোতে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে', বলেন তিনি।

বাংলাদেশে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি ও শীতের জন্য ডিসপোজেবল আয় হ্রাস পাওয়ায় সামগ্রিক ভোগও কমেছে। ফলে ভোগ্যপণ্যের বিক্রিও কমেছে।

সংক্ষেপিত: ইংরেজিতে পুরো প্রতিবেদন পড়তে ক্লিক করুন After energy, LC opening crisis now cripples businesses

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh's forex reserves

Forex reserves fall by half a billion in a week

It hit $19.45 billion on March 27, down from $19.98 billion on March 20

2h ago