গ্যাস সংকটের খেসারত দিচ্ছে শিল্পখাত

‘তিতাস গ্যাসের কাছ থেকে আমরা এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি।’
নারায়ণগঞ্জের ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ। ছবি: ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ

সিকম গ্রুপ ও সামুদা গ্রুপের যৌথ উদ্যোগে ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ দেড় বছর আগে নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগে একটি কারখানা স্থাপন করে।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যকর ভোগ্যপণ্যের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে ভোজ্যতেল ও গম জাতীয় পণ্য উৎপাদন করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।

সে অনুযায়ী কারখানায় সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সয়াবিন কেক, সয়া দুধ ও ময়দা উৎপাদনের জন্য প্রায় ২৫০ জন কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়।

কিন্তু গ্যাস সংযোগের অভাবে উৎপাদন শুরু করতে পারছে না ডেল্টা অ্যাগ্রো। ফলে কার্যক্রম শুরুর আগেই লোকসানের মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতি মাসে ব্যাংকের সুদও তাদের পরিশোধ করতে হচ্ছে।

২০২১ সালের ১০ নভেম্বর তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কাছে গ্যাস সংযোগের জন্য আবেদন করে প্রতিষ্ঠানটি।

সিকম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, 'তিতাস গ্যাসের কাছ থেকে আমরা এখনো কোনো ইতিবাচক সাড়া পাইনি।'

তিনি বলেন, গ্যাস সংযোগের অভাবে দেড় বছর ধরে এই কারখানায় কোনো কাজ হচ্ছে না। প্রতি মাসে প্রতিষ্ঠানটি বাড়তি সাড়ে ১৬ কোটি টাকা আয়ের সুযোগ হারাচ্ছে। এ ছাড়াও, তাকে ঋণের বিপরীতে ব্যাংকের সুদও পরিশোধ করতে হচ্ছে।

'এ ধরনের পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য সত্যিই বেদনাদায়ক', যোগ করেন তিনি।

ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রিজের দৈনিক ১ হাজার টন সয়াবিন তেল ও ১ হাজার টন পাম অয়েল উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে।

এরকম আরও বেশ কিছু কারখানা গ্যাস সংযোগ ও পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস সরবরাহের সংকটে ভুগছে।

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ, সিটি গ্রুপ, আবদুল মোনেম লিমিটেড ও বে গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিকানাধীন বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চলে ২০টিরও বেশি কারখানা চালু হতে যাচ্ছে।

কিন্তু আব্দুল মোনেম অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএসএম মাইনুদ্দিন মোনেম সম্প্রতি বলেন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় ২১৬ একর জমির ওপর অবস্থিত এই জোনে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি তিতাস গ্যাস।

একইভাবে ৩ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সত্ত্বাধিকারী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ জানিয়েছে, গ্যাস সংযোগ পাওয়ার জন্য তারা প্রায় ২ বছর ধরে অপেক্ষা করছে। প্রতিষ্ঠানটি আবেদন জমা দিয়েছে এবং প্রযোজ্য ফিও দিয়েছে।

মেঘনা গ্রুপের চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) লুৎফুল বারী জানান, ট্রাক ও পিকআপের মতো বাণিজ্যিক যানবাহনের জন্য টায়ার উৎপাদন শুরু করতে ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে কারখানা সম্প্রসারণ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

'আমরা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম প্রস্তুত করেছি। কিন্তু এখনো গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় কার্যক্রম শুরু করতে পারিনি', যোগ করেন তিনি।

সিকমের সত্ত্বাধিকারী আমিরুল হক বলেন, ডেল্টা অ্যাগ্রো ফুড চালু হওয়ার পর নতুন উৎপাদন কেন্দ্রে প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

'গ্যাস সংযোগ পেলে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু হবে', যোগ করেন তিনি।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদ মোল্লা বলেন, পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহের অভাবে তিতাস গ্যাস শিল্পখাতের নতুন গ্যাস সংযোগের চাহিদা মেটাতে পারছে না।

তিনি বলেন, 'এমনকি আমরা বর্তমান গ্রাহকদেরও পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ করতে পারছি না। বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ শৃঙ্খলে বিঘ্ন এবং মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমরা অসহায় অবস্থায় আছি।'

তিনি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত রাখতে শিল্পখাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার গুরুত্ব স্বীকার করেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি নতুন করে শিল্প খাতে গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য অনুকূল নয়।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে মোট গ্যাস ব্যবহারের প্রায় ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে ব্যয় হয়।

কিন্তু পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সার্বিকভাবে শিল্পখাত গ্যাস ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। এমনকি বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট দেখা দেওয়ার আগে থেকেও দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে জ্বালানির স্থানীয় চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

প্রতিদিন ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফডি) গ্যাসের অভ্যন্তরীণ চাহিদার বিপরীতে স্থানীয় উৎসগুলো মাত্র ২ হাজার ১০০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ করে। আমদানির মাধ্যমে ৭৫০ এমএমসিএফডি গ্যাস পাওয়া যায়।

পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানির সচিব মো. শাহেনুর আলম জানান, সরবরাহ ঘাটতির কারণে শিল্পকারখানায় গ্যাস সংযোগ তাদের দেরি হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জ অর্থনৈতিক অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, গ্যাস সংযোগ দেওয়ার জন্য পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে কোনো উদ্যোগ নেই।

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

2 Bangladeshis among injured in Odisha train accident

Two Bangladeshi nationals, who were going to Chennai from Shalimar station near Kolkata, are reportedly among the injured in the triple train crash in the eastern Indian state of Odisha, a Bangladesh deputy high commission official in Kolkata said today..Both the Bangladeshis were in the C

40m ago