চট্টগ্রাম

গ্যাস সংকটের মধ্যেই ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে’ প্রি-পেইড মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ

‘সমস্যার সমাধান না করে আবার মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করাটা আমাদের কাছে বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে এসেছে’

একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে গত রোববার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার রিচার্জ করে অবাক হয়ে যান বন্দরনগরীর আসকার দীঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সুনীল বড়ুয়া। তার কার্ড থেকে মিটার ভাড়া বাবদ কেটে নেওয়া হয় ২০০ টাকা।

সুনীল বলেন, 'আগে এক হাজার টাকা রিচার্জের বিপরীতে ৫০ ইউনিট গ্যাস পেতাম। তখন মিটার ভাড়ার জন্য ১০০ টাকা নেওয়া হতো। এখন পাচ্ছি ৪৪ ইউনিট গ্যাস। হঠাৎ করেই জানুয়ারি মাসে মিটার ভাড়ার জন্য ২০০ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি।'

তিনি বলেন, 'উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এখন আবার মিটার ভাড়া দ্বিগুণ হলো। চাপ আরও বাড়লো।'

কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (কেজিডিসিএল) জানুয়ারিতে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই প্রি-পেইড মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করেছে। কেজিডিসিএল জাতীয় গ্রিড থেকে গ্যাস গ্রহণ করে চট্টগ্রামে সরবরাহ করে।

কেজিডিসিএল কর্মকর্তাদের মতে, প্রি-পেইড গ্যাস মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত তাদের নয়। বরং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় পেট্রোবাংলার অধীনে দেশের ছয়টি গ্যাস বিপণন কোম্পানিকে মিটার ভাড়া একই হারে নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য কেজিডিসিএল কর্তৃপক্ষ অন্য পাঁচটি কোম্পানির মতোই মিটার ভাড়া ২০০ টাকা নির্ধারণ করেছে।

কর্মকর্তারা জানান, কেজিডিসিএলের বর্তমানে প্রায় পাঁচ লাখ ৯৫ হাজার আবাসিক গ্রাহক রয়েছে, তাদের মধ্যে ৬২ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার ব্যবহার করেন।

নগরীতে ২০১৭ সালে প্রি-পেইড মিটার স্থাপন শুরু হয়। প্রথম পর্যায়ের কাজ ২০১৯ সালে শেষ হয়েছে।

জানতে চাইলে কেজিডিসিএলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (আইটি এবং প্রি-পেইড মিটারিং বিভাগ) ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ আলম বলেন, '২০১৭ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে মোট ৬০ হাজার আবাসিক গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পরিষেবার আওতায় এসেছে। পরবর্তীতে ২০২২ সালে আরও দুই হাজার নতুন গ্রাহক প্রি-পেইড মিটার পরিষেবার আওতায় এসেছেন।'

'আরও এক লাখ নতুন গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার পরিষেবার আওতায় আনার জন্য ১৬ জানুয়ারি থেকে আরেকটি প্রকল্প চলমান রয়েছে', তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, 'প্রি-পেইড মিটার ভাড়া প্রাথমিকভাবে প্রতি মাসে ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। ২০২২ সালের জুলাইয়ে তা বাড়িয়ে ১০০ টাকা করা হয়।'

কেজিডিসিএলের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (মার্কেটিং) ইঞ্জিনিয়ার অনুপম দত্ত বলেন, 'প্রি-পেইড মিটারের ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত আমাদের নয়। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ বাস্তবায়ন করছি।'

তিনি বলেন, 'প্রি-পেইড মিটার ভাড়া দেশের সব কোম্পানিকে একই হারে নির্ধারণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা এসেছে। আগে পেট্রোবাংলার অধীনস্থ বিভিন্ন কোম্পানি ভিন্ন ভিন্ন ভাড়া নিত।'

কোনো আগাম নোটিশ ছাড়াই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে কেজিডিসিএলের অফিসে একটি নোটিশ টাঙানো হয়েছে।'

জামাল খান এলাকার বাসিন্দা শাহেনা আক্তার বলেন, 'তিন মাস ধরে গ্যাস সংকটের কারণে এমনিতেই আমরা দুর্ভোগে আছি। বাসায় রান্না-বান্নায় খুব কষ্ট হচ্ছে। কোনো কোনো দিন ভোরে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর গভীর রাতে গ্যাস আসে।'

'সমস্যার সমাধান না করে আবার মিটারের ভাড়া দ্বিগুণ করা হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে মিটার ভাড়া দ্বিগুণ করাটা আমাদের কাছে বোঝার উপর শাকের আঁটি হয়ে এসেছে,' যোগ করেন তিনি।

 

Comments